বিমান যাত্রায় সমস্যা হচ্ছে বয়স্কদের। বিশেষ করে যাঁরা ফুসফুসজনিত অসুবিধায় ভুগছেন।
দূরের যাত্রায় বিমানে তাঁদের জন্য অক্সিজেন দরকার। অথচ বিমানসংস্থা সেই অক্সিজেন দিতে চায় না বলে অভিযোগ। ফলে, বিদেশে স্থায়ী ভাবে বসবাস করা পুত্র-কন্যার কাছে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও পূরণ হচ্ছে না অনেকের। বিমানে যাতায়াতের খরচ কমায় শুধু ছেলেমেয়ের কাছে নয়, বিমানে চেপে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনাও করছেন অনেকে। সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে অক্সিজেন।
কলকাতায় এয়ারলাইন্স অপারেটিং কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান হরিশ হেগেস্তে জানিয়েছেন, অসুস্থ যাত্রীদের অক্সিজেন দেওয়ার কথা বিমানসংস্থাগুলিরই। সেটাই নিয়ম। কিন্তু, সেই যাত্রী ওড়ার মতো অবস্থায় রয়েছেন কি না, তা ঠিক করেন বিমানসংস্থার নিজস্ব চিকিৎসক। অনেক ক্ষেত্রেই অসুস্থতার গুরুত্ব বিচার করে ওড়ার অনুমতি দেওয়া হয় না। অনুমতি পেলে অক্সিজেন দেওয়ার কথা বিমানসংস্থারই।
শনিবার ঢাকুরিয়ার এক হাসপাতালে ‘অ্যামরিকন ২০১১’ নামে এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছিল। তার অন্যতম বিষয়বস্তু ছিল ফুসফুসের রোগে আক্রান্তদের বিমানযাত্রার সুবিধা-অসুবিধা। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, বয়স হলে এমনতিই ফুসফুসের সংক্রমণ বেশি হয়। তার উপরে পরিবেশ দূষণ বেড়ে যাওয়ায় ফুসফুসের রোগও বাড়ছে। বক্ষ-বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘ফিট সার্টিফিকেট’ ছাড়া এই রোগীদের বিমানযাত্রার অনুমতি দেয় না সংস্থা। শুধু সেই সার্টিফিকেটেও কাজ হয় না। ওড়ার জন্য বিমানসংস্থার চিকিৎসকের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। দ্বিতীয়ত, ফুসফুসের রোগীদের জন্য বিমানে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে বলা হলে অধিকাংশ বিমানসংস্থাই তা নিয়ে গড়িমসি করে বলে অভিযোগ। বক্ষ-বিশেষজ্ঞ ধীমান গঙ্গোপাধায়ের কথায়, “ইংল্যান্ডের বাসিন্দা বাষট্টি বছরের এক বৃদ্ধ কিছু দিনের জন্য কলকাতায় বেড়াতে এসেছিলেন। ফুসফুসের রোগী। ভেন্টিলেটরে রাখতে হয় কিছু দিন। সুস্থ হয়ে উঠে পাঁচ দিন পরে ফিরতে চান তিনি। কিন্তু তাঁর জন্য বিমানসংস্থাকে যখন অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে বলা হয়, তারা ঘোরাতে থাকে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ব্যবস্থা হয়।”
আবার বক্ষ-বিশেষজ্ঞ সুমিত সেনগুপ্তের বক্তব্য, “বিমানে নিজস্ব ফার্স্ট এড বাক্সের সঙ্গে অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকে। কিন্তু সেটা জরুরি অবস্থায় ব্যবহারের জন্য। কোনও ফুসফুসের রোগীর বিমানযাত্রার সময় আমরা আলাদা করে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করতে বললে অধিকাংশ বিমানসংস্থাই গড়িমসি করে।”
কী বলছে বিমান সংস্থাগুলি? প্রতিটি বিমানেই কম-বেশি তিন-চারটি অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখা থাকে। এখন যেমন ছোট অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র পাওয়া যায়, ঠিক তেমনই ছোট সিলিন্ডার। তার এক-একটিতে গড়ে ৩১১ লিটার অক্সিজেন থাকে। এক বিমানসেবিকার কথায়, “উড়ান শুরুর আগে আমরা পরীক্ষা করে দেখে নিই, ওই সিলিন্ডারগুলি ভর্তি রয়েছে কি না। বিমানের সামনে ও পিছনের দু’টি কেবিনেই অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকে। বিমানের ভিতরে কোনও যাত্রী আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়লে, কী ভাবে তাঁকে ওই অক্সিজেন দিতে হবে তার প্রশিক্ষণও রয়েছে আমাদের।”
তবে বিমানের ভিতরে প্রতিটি আসনের সঙ্গে যে ‘অক্সিজেন মাস্ক’ থাকে বলে বিমানসেবিকারা জানান, সেখানে কী অক্সিজেনের জোগান থাকে না?
ইনডিগো-র এক কর্তা জানিয়েছেন, মাঝ আকাশে বিমানের ভিতরের নির্দিষ্ট যে বায়ুচাপ রাখা থাকে, তার কোনও হেরফের হলে তখন আচমকা বিমানকে নীচে নেমে আসতে হয়। সেই সময়ে বিমানের ভিতরে অক্সিজেনের খামতি দেখা দিতে পারে। তখন ওই মাস্ক ব্যবহার করা হয়। অসুস্থতার কারণে যদি কোনও যাত্রীর অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় তা হলে তা ওই সিলিন্ডার থেকেই দিতে হয়। |