জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আর্বান রিনিউয়াল মিশন (জেএনএনইউআরএম) প্রকল্পের পুরো টাকা পেতে জলকর বসানো-সহ কয়েকটি শর্ত মানার কথা আগেই জানিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এখনই তা মানতে নারাজ। শনিবার মহাকরণে এসে ফের সেই সব শর্ত মানার জন্য রাজ্যের কাছে আবেদন করে গেলেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব সুধীর কৃষ্ণ। এই নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও পক্ষই কিছু বলেনি।
এ দিন প্রথমে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, পরে মুখ্যসচিব সমর ঘোষের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন সুধীর কৃষ্ণ। বৈঠকে ছিলেন রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের সচিব দেবাশিস সেন, পুরসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রেল মন্ত্রকের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর। জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে বহু কাজ হচ্ছে বিভিন্ন রাজ্যে। এ রাজ্যও ব্যতিক্রম নয়। প্রকল্পকে ষোল আনা কার্যকর করতে সংস্কারের নামে কিছু শর্তের কথা বলেছে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক, যেগুলি এখনই মানার ক্ষেত্রে আপত্তি আছে রাজ্য সরকারের। তাদের বক্তব্য, এই নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলতেই পারে। কিন্তু তড়িঘড়ি একতরফা পদক্ষেপ করা ঠিক হবে না। শর্ত চাপিয়ে টাকা বন্ধ করলে নির্মীয়মাণ প্রকল্পগুলি ধাক্কা খেতে পারে। রাজ্যের এই বক্তব্য আরও এক বার জানানো হয়েছে নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের সচিবকে।
জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের জন্য নগরোন্নয়ন মন্ত্রক যে সব শর্ত দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, শহরাঞ্চলে জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন বিলোপ, সম্পত্তি কর বাড়ানো, জলকর-সহ বিভিন্ন পরিষেবা কর বসানো, পুরসভাগুলির আয় বাড়ানো ইত্যাদি। সভায় এই শর্তগুলির কথা আরও এক বার স্মরণ করিয়ে দেন কেন্দ্রীয় সচিব। এক মুখপাত্র জানান, নগরোন্নয়ন মন্ত্রক যাতে প্রকল্পের টাকা সময় মতো রাজ্যকে পাঠায়, রাজ্যের তরফে সেই আবেদন জানানো হয়েছে সুধীর কৃষ্ণকে।
কিন্তু প্রকল্পের অর্থ এসে পড়ে রয়েছে, রাজ্য খরচ করতে পারছে না এই উলটপুরাণের কথাও শুনিয়ে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় সচিব। যেমন আসানসোলে রিং রোড তৈরির পরিকল্পনা, ১৩টি পুরসভা এলাকায় কঠিন বর্জ্য প্রকল্প, ভাটপাড়ায় জল সরবরাহ প্রকল্প কিংবা চন্দননগরে জলের মিটার বসানোর পরিকল্পনা। এই সব প্রকল্পের জন্য জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের টাকা এসে পড়ে থাকলেও তা খরচ করতে পারছে না রাজ্য সরকার। কেন? রাজ্যের অফিসারেরা জানান, আইনি জটিলতা, বন দফতরের অনুমতি (আসানসোলের প্রকল্পটির জন্য), সর্বোপরি লাল ফিতের ফাঁসের কথা। কেন্দ্রীয় সচিব জানিয়েছেন, প্রকল্পগুলি চালু করা না গেলে টাকা ফেরত চলে যাবে। রাজ্য দ্রুত ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছে।
কেন্দ্র-রাজ্যের প্রতিনিধিদের এই বৈঠকে পূর্ব-পশ্চিম মেট্রো প্রকল্প নিয়েও কথা হয়েছে। সম্প্রতি সিদ্ধান্ত হয়েছে, কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের কাছ থেকে এই মেট্রোর দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে রেল মন্ত্রকের হাতে। কিন্তু এই কাজ সম্পন্ন করতে সময় লাগবে। অনেক চিঠি দেওয়া-নেওয়া হবে কেন্দ্রের দুই মন্ত্রক এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে। এতে কাজের ক্ষতি হতে পারে। বিষয়টি সম্পর্কে রাজ্যকে সতর্ক করে দিয়ে নগরোন্নয়ন সচিব বলেছেন, কাজ যাতে থেমে না থাকে, সেই দিকটিকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। যে কোনও সমস্যায় চিঠির পরিবর্তে ফোন বা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগাযোগের পরামর্শও দিয়েছেন সুধীর কৃষ্ণ। বৈঠকে মাঝারি ও ছোট শহরের পানীয় জলের প্রকল্প নিয়েও কথা হয়েছে।
বৈঠক শেষে সুধীর কৃষ্ণ বলেন, “পূর্ব-পশ্চিম মেট্রো প্রকল্প রেলের হাতে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই এই নিয়ে আমরা আলোচনা করলাম।” মুখ্যসচিব বলেন, “জেএনএনইউআরএম-এর প্রতিটি প্রকল্প ধরে কাজের অগ্রগতির পর্যালোচনা করা হয়েছে।” |