তাঁর বোলিংয়ের মতোই এক্সপ্রেস গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে শোয়েব আখতারের বিস্ফোরক আত্মজীবনী ‘কন্ট্রোভার্সিয়ালি ইওর্স’!
সচিন, শাহরুখ বা ললিত মোদীকে নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি করার মতোই চাঞ্চল্যকর তথ্য তিনি ফাঁস করে দিয়েছেন ‘লর্ডসগেট’ নিয়ে। লন্ডনে স্পট ফিক্সিং-বিদ্ধ পাকিস্তান টিম। চার দিক থেকে ধিক্কার ধেয়ে আসছে। শোয়েব জানাচ্ছেন, নেট প্র্যাক্টিসের সময় ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যান জোনাথন ট্রট এসে অন্যতম অভিযুক্ত ওয়াহাব রিয়াজের মুখে সজোরে ঘুষি মেরে চিৎকার করে ওঠেন, ‘ইউ ফিক্সার’! পাকিস্তান টিম ম্যানেজমেন্ট এ নিয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করার কথা ভেবেছিল। কিন্তু ঝামেলা আরও বাড়বে ভেবে পিছিয়ে আসে।
পাশাপাশি, সচিন-সৌরভদের চোখে সবচেয়ে ঘৃণ্য কোচকে বইতে একহাত নিয়েছেন রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস। জানিয়েছেন, গুরু গ্রেগের বিরুদ্ধে মোটা টাকার মামলা করার দিকে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিলেন। ভারতের শেষ পাকিস্তান সফরের ঘটনা, যেখানে বাদ পড়ার পর সৌরভকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। ক্যাপ্টেন রাহুল দ্রাবিড়। কোচ চ্যাপেল। গ্রেগ প্রশ্ন তুলেছিলেন শোয়েবের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে। যদিও ক্রিকেটবিশ্বে গ্রেগই একমাত্র লোক নন যিনি শোয়েবের অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
|
গ্রেগকে নিয়ে শোয়েব লিখেছেন: ভারতীয় ক্রিকেটারদের কথা ভেবে খারাপই লাগত যে ওদের কোচ এ রকম একটা লোক। যার কোনও রসবোধ নেই। যে হাসতে জানে না। অনর্থক বিতর্ক তৈরি করার ব্যাপারে ওর যদিও অসামান্য প্রতিভা ছিল। ও আমার অ্যাকশন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল। চ্যাপেল যখন মুখ খুলেছিল, তক্ষুনি আমি একটি আইনি সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। ওরা আমাকে বলেছিল, চ্যাপেল যদি সরকারি ভাবে কিছু বলে তা হলে মামলা করলে আমি হাসতে হাসতে বড়লোক হয়ে যাব। আমার কপাল খারাপ যে, আইসিসি হস্তক্ষেপ করল। ওরা চ্যাপেলকে সতর্ক করল। আমার আড়াই কোটি পাউন্ড পাওয়া হল না।
সৌরভ-গ্রেগ বিতর্কের কথা টেনে এনে শোয়েব আরও লিখেছেন, ‘সৌরভের সঙ্গেও গ্রেগ ঝামেলা বাধিয়েছিল। মনে আছে সৌরভের সঙ্গে সেই ট্যুরে আমার কথা হত গ্রেগের মানসিকতা নিয়ে। আমিও এমন কোচকে সম্মান করতে পারব না যে কিনা একটা ক্রিকেটারকে শেষ করে দিতে চেয়েছে।’
গুরু গ্রেগকে যতটা আক্রমণ করেছেন ঠিক ততটাই প্রশংসা করেছেন অধিনায়ক সৌরভের। লিখেছেন, ‘সৌরভই ভারতীয় ক্রিকেটকে পাল্টে দিয়েছিল। আমার মতে সৌরভ হচ্ছে পাতলা চেহারা নিয়ে দৈত্যের মতো বিরাট এক জন মানুষ। ও দুর্দান্ত ক্যাপ্টেন ছিল। সৌরভের নেতৃত্বের সবথেকে বড় ব্যাপার ছিল, ও টিমে তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে এসেছিল আর ওদের খুব সমর্থনও করেছিল। ধোনি পরে এসে তার ফসল তুলেছে। তবে ধোনিও খুব স্মার্ট ক্যাপ্টেন। খুব যোগ্য দল হিসেবেই ওর অধীনে ভারত ২০১১ বিশ্বকাপ জিতেছে।’ সহবাগকে নিয়ে লিখেছেন, ‘আমাদের পাকিস্তান টিমে সবাই জানে সহবাগ ম্যাচউইনার। ও আর যুবরাজ কখনও রেকর্ডের জন্য খেলে না। জেতার জন্য খেলে।’
ইডেনে সচিনের সেই বিতর্কিত রান আউটের টেস্ট খেলতে নামার আগে ড্রেসিংরুমে আক্রম-ইউনিস ঝামেলার তথ্য ও ফাঁস করে দিয়েছেন শোয়েব। আরও লিখেছেন, ‘২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মহম্মদ আসিফকে আমার ব্যাট দিয়ে মারার ঘটনার পিছনে আসল উস্কানি ছিল আফ্রিদির।’ এ রকম আরও অনেক বোমা। সব মিলিয়ে এক রক্তাক্ত, ক্রুদ্ধ পেসারের কাহিনি। বিতর্ক কখনও যাঁর পিছু ছাড়েনি। কিন্তু পড়তে পড়তে মনেই হবে না আত্মজীবনী। মনে হবে যেন বাউন্সি পিচে শোয়েব আখতারের আগুনে স্পেলের লাইভ টেলিকাস্ট! |