সচিন তেন্ডুলকরের ঘরের মাঠে বিতর্কিত আত্মজীবনী হাতে নিয়ে নামাই হল না শোয়েব আখতারের!
ক্রিকেট ক্লাব অব ইন্ডিয়া যাকে ধরে নেওয়া হয় সচিনের ক্রিকেটীয় আঁতুড়ঘর, সেখানেই রবিবার শোয়েবের আত্মজীবনী প্রকাশের দ্বিতীয় অনুষ্ঠান ছিল। নজিরবিহীন ভাবে সেই অনুষ্ঠান এ দিন বাতিল করে দিয়েছে প্রয়াত রাজ সিংহ দুঙ্গারপুরের স্মৃতিজড়িত ক্লাব সিসিআই।
কোনও ধোঁয়াশা রেখে লাভ নেই। বইতে সচিনকে নিয়ে করা আপত্তিকর মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হয়েই বিতর্কিত পাক পেসারের অনুষ্ঠান বাতিল করে দিয়েছে সিসিআই। রাজ সিংহ মারা যাওয়ার পর ক্লাবের প্রেসিডেন্ট এখন সেবন্তী পারিখ। শনিবার রাতে মোবাইল ফোনে আনন্দবাজারকে পারিখ সাফ বললেন, “হ্যাঁ, আমরাই অনুষ্ঠানটা বাতিল করে দিয়েছি। বইতে সচিনকে নিয়ে শোয়েব যে সব মন্তব্য করেছে তা জানার পর আমাদের মনে হয়েছে, আমাদের ক্লাবে ওর বই প্রকাশের অনুষ্ঠান করতে দেওয়া যায় না।” বলেই তিনি দ্রুত যোগ করলেন, “ব্রেবোর্ন হচ্ছে সেই মাঠ যেখানে ক্রিকেটার সচিন বেড়ে উঠেছে। সিসিআই আর সচিন কত দিনকার আবেগের সম্পর্ক! তা ছাড়া সিসিআইয়ের একটা অন্য রকম ক্রিকেটীয় ঐতিহ্য রয়েছে। ক্রিকেটার শোয়েবকে আমরা এখনও স্বাগত জানাব। কিন্তু লেখক শোয়েবকে নয়, যে সচিনকে নিয়ে এ রকম সব ভিত্তিহীন মন্তব্য করেছে।”
 সিসিআই এবং সচিন সত্যিই দীর্ঘ আবেগের ইতিহাস। ইমরানের পাকিস্তানের হয়ে চোদ্দো বছর বয়সে প্রথম মহাতারকাদের সঙ্গে ফিল্ডিং করতে নামা ব্রেবোর্নে। চোদ্দো বছরের সচিনকে ড্রেসিংরুমে ঢুকতে দেওয়ার জন্য রাজ সিংহের উদ্যোগে সিসিআইয়ের আইনই সংশোধন করে ফেলা হয়। রাজ সিংহকে নিয়ে কথা বলতে গেলে এখনও চোখ ছলছল করে ওঠে সচিনের। পাক পেসারের সঙ্গে মহাযুদ্ধেও সেই বন্ধন আর আবেগের ইতিহাস ধরে রাখল ব্রেবোর্ন।
সিসিআই প্রেসিডেন্টকে জিজ্ঞেস করা গেল, অনুষ্ঠান বাতিলের সিদ্ধান্তে তো আরও বড় বিতর্ক তৈরি হতে পারে। তখন তাঁরা কী করবেন? পারিখ অবিচল, “আমরা তো আর শোয়েবকে এখানে ডেকে আনিনি। পাবলিশার্সকে গিয়ে তো বলিনি যে, আমাদের ক্লাবে অনুষ্ঠানটা করো। ওরা নিজেদের থেকেই বলেছিল। আমাদের তখন মনে হয়েছিল, ঠিক আছে। শোয়েব যথেষ্ট আকর্ষণীয় ক্রিকেটার। ওকে নিয়ে অনেকের আগ্রহ রয়েছে। আমাদের ক্লাবের বাচ্চারা ওকে দেখবে, ওর অটোগ্রাফ নেবে, ভালই তো হবে। কিন্তু তখন কে জানত যে, সচিনকে নিয়ে ও এ সব লিখে বসে আছে! সব জেনেশুনে তো আর অনুষ্ঠানটা হতে দেওয়া যায় না। কাল অনুষ্ঠানটা হলে, আবার সচিনকে নিয়ে প্রশ্ন করা হত, শোয়েব একটা উত্তর দিত। তাতে তিক্ততা আরও বাড়ত।”
অতীতে শিবসেনার হুমকিতে একান্তই রাজনৈতিক কারণে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের মুম্বইতে নামা বাতিল হয়ে যাওয়া বা পাক দলের সফর নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ওয়াঘার ও পারের কোনও ক্রিকেটার বই প্রকাশের অনুষ্ঠান করতে এসে এ ভাবে প্রতিহত হননি। শনিবার সন্ধ্যাতেও যখন জানাজানি হয় যে, শোয়েবের বই প্রকাশের অনুষ্ঠান বাতিল হয়ে গিয়েছে, প্রথম সন্দেহ করা হয়, এর পিছনে শিবসেনার হাত রয়েছে। সেই রটনা নিয়ে চাঞ্চল্য এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, শিবসেনা থেকে বেসরকারি ভাবে মুম্বইয়ের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের জানিয়ে দেওয়া হয় যে, এর পিছনে তাদের কোনও হাত নেই। |
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হওয়ার কথা ছিল নামী ক্রিকেট লিখিয়ে আয়াজ মেমনের। মুম্বই থেকে ফোনে আয়াজ বললেন, “আমি প্রকাশকদের কাছ থেকে এসএমএস পেলাম যে, কালকের অনুষ্ঠান হচ্ছে না। কোনও কারণ বলা নেই তাতে।” মুম্বইয়ের সংবাদমাধ্যমের অনেকের কাছেও ততক্ষণে একই এসএমএস পৌঁছেছে। শহরে অন্যত্র কোথাও রবিবারের অনুষ্ঠান সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এমন বার্তাও কারও কাছে নেই। রাত পর্যন্ত অনুষ্ঠানের জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা কর্তাদের বারবার ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে এসএমএস-এর বয়ান যা বলছে, তাতে অনুষ্ঠানটাই বাতিল।
এমনিতে সচিনকে বাদ দিয়েও বিস্ফোরক আরও অনেক মশলা শোয়েবের আত্মজীবনীতে রয়েছে। যেমন গুরু গ্রেগের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকতে চাওয়া। চ্যাপেল তাঁর বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তোলায় আইনি সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছিলেন শোয়েব। আইসিসি হস্তক্ষেপ করায় শেষ পর্যন্ত সেই মামলা আর করেননি। ‘লর্ডসগেট’-এর পর এক দিন ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যান জোনাথন ট্রট নাকি অন্যতম অভিযুক্ত ওয়াহাব রিয়াজের চোয়ালে ঘুষি মেরে চিৎকার করে ওঠেন ‘ইউ ফিক্সার’! কিন্তু ক্রিকেটজীবনের মহারণের মতোই এখানেও সচিন বনাম শোয়েব নিয়ে সবথেকে বেশি আলোড়ন।
চেন্নাইয়ে থাকা সচিনকে কি আপনারা জানিয়েছেন যে, শোয়েবের অনুষ্ঠান বাতিল করে দিয়েছেন? সিসিআই প্রেসিডেন্ট জবাব দিলেন, “না, ওকে আমরা কিছু জানাইনি। এটা তো একেবারেই ক্লাবের ব্যাপার। সদস্যদের মধ্যে ইমার্জেন্সি মিটিং সেরে আমরা দ্রুতই সিদ্ধান্তটা নিয়েছি।” |