এর আগে দু’বার বেঁচে গিয়েছিলেন। এ বার আর পারলেন না। শনিবার দিনেদুপুরে কয়েকশো লোকের চোখের সামনেই খুন হয়ে গেলেন ওড়িশার ক্ষমতাসীন বিজু জনতা দলের (বিজেডি) বিধায়ক জগবন্ধু মাঝি। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ-পশ্চিম ওড়িশার মাওবাদী অধ্যুষিত কোরাপুট সংলগ্ন নবরঙ্গপুর জেলায়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, বিধায়ক খুনের পিছনে মাওবাদীরাই রয়েছে। নিহত বিধায়কের দেহরক্ষীও।
যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেই রায়ঘর থানার পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার নবরঙ্গপুর জেলার গোনা গ্রামে সাপ্তাহিক হাট বসে। এ দিন হুইলচেয়ারে চেপে সেখানেই পাট্টা বিলি করতে গিয়েছিলেন উমেরকোটের বিধায়ক জগবন্ধু মাঝি (৩৯)। বড় একটি গাছের তলায় প্রায় শ’তিনেক লোক জড়ো হয়েছিলেন। তাঁদেরই কয়েক জনকে পাট্টা দেওয়া হচ্ছিল। গ্রামবাসীরা জানান, পাট্টা বিলির ফাঁকেই তাঁদের সঙ্গে কথা বলছিলেন বিধায়ক। বেলা পৌনে একটা নাগাদ ১৭-১৮ বছরের তিন কিশোর হঠাৎই মোটরসাইকেলে চেপে সেখানে আসে এবং বিধায়ক ও তাঁর দেহরক্ষীকে লক্ষ করে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। ঘটনাটি এত দ্রুত ঘটে যে, দেহরক্ষী পিন্টু পাত্র (৩০) তাঁর পিস্তল বের করার সময়ও পাননি। গুলিতে রামচন্দ্র গণ নামে এক জন গ্রামবাসীও আহত হয়েছেন। গুলি চালিয়ে ওই তিন যুবক নিমেষের মধ্যে হাট থেকে পালায়। পুলিশ পৌঁছনোর আগেই মারা যান বিধায়ক এবং তাঁর দেহরক্ষী। আহত গ্রামবাসীকে রায়ঘর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নবরঙ্গপুরের এসডিপিও (অপারেশন) উধবচন্দ্র নায়েক এ দিন বিকেলে বলেন, “প্রাথমিক ভাবে সন্দেহের তির মাওবাদীদের দিকেই। তাদের কিশোর বাহিনী এই ঘটনায় জড়িত বলে স্থানীয় সূত্রে খবর মিলেছে। আততায়ীদের এখনও চিহ্নিত করা যায়নি।”
ওড়িশা পুলিশ জানায়, এর আগেও দু’বার হামলা হয়েছিল জগবন্ধুর উপর। ২০০১ সালে কয়েক জন দুষ্কৃতী তাঁকে লক্ষ করে গুলি ছোড়ে। বুকে, পিঠে গুলি লেগে গুরুতর জখম হন তিনি। মেরুদণ্ডে গুলি লাগায় তিনি প্রায় পঙ্গু হয়ে পড়েন। তার পর থেকে হুইলচেয়ারেই তিনি যাতায়াত করতেন। ২০০৫ সালেও এক বার তাঁর উপর হামলা হয়। সে যাত্রায় অবশ্য গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ২০০৯ সালে উমেরকোট বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন জগবন্ধু। ওড়িশা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্তা জানান, জগবন্ধু মাঝি কলেজে পড়ার সময় বিজেডি-তে নাম লেখান। ২০০১ সালে আদিবাসী এবং বাঙালি উদ্বাস্তুদের মধ্যে যে দাঙ্গা বেধেছিল, তাতে প্রত্যক্ষ ভাবে মদত দেওয়ার অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। বিজেডি ক্ষমতায় আসার পরে তাঁর বিরুদ্ধে থাকা কয়েকটি মামলা প্রত্যাহার করে নেয় রাজ্য সরকার।
ওড়িশা পুলিশ জানিয়েছে, ১৯৯২ সালের ২ অক্টোবর কোরাপুট জেলা ভাগ করে চারটি জেলা তৈরি হয়। কোরাপুট ছাড়া বাকি তিনটি হল নবরঙ্গপুর, মালকানগিরি এবং রায়গড়া। কোরাপুট মাওবাদী অধ্যুষিত। বাকি তিন জেলাতেও মাওবাদী কার্যকলাপ ক্রমশ বাড়ছে। নবরঙ্গপুরে গত এক বছরে মাওবাদী হামলায় অন্তত চার জন খুন হয়েছেন। |