পুজোর সময় বাড়ি ফাঁকা রেখে না বেরনোই ভাল। সল্টলেকের বাসিন্দাদের এমন পরামর্শ দিচ্ছে খোদ পুলিশই।
চুরি-ছিনতাই কমছে না। মোটরবাইকে চেপে এসে ভরসন্ধ্যায় ছিনতাই অথবা বাড়ির জানালা দিয়ে শিক ঢুকিয়ে চুরি সল্টলেকের রোজনামচা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে পুলিশ এখন ‘পরামর্শ’ দিচ্ছে পুজোয় বাড়ি ফাঁকা রেখে বেরোবেন না। কোথাও বেড়াতে গেলেও কাউকে না কাউকে বাড়িতে রেখে যান। বাসিন্দাদের পাল্টা দাবি, “বাড়িতে রেখে যাওয়ার জন্য লোক কোথায় পাব? পুলিশ তা হলে আছে কী করতে?” |
এখানেই শেষ নয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাড়িতে লোক থাকা অবস্থাতেও চুরি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতেই এডি ব্লকের একটি বাড়ির ঘটনা। এডি ব্লকের ৩১৯ নম্বর বাড়িতে থাকেন প্রাক্তন আইএএস অফিসার দীপক স্যান্যাল। বাড়িতে তিনি ছাড়াও তাঁর ভাগ্নি শুভ্রা বসু থাকেন। শুক্রবার দুপুরে দোতলার ছাদে উঠে শুভ্রাদেবী লক্ষ করেন, চিলেকোঠার ঘর খোলা। ঘর তছনছ। শুভ্রাদেবী জানিয়েছেন, ঘরের স্টিলের আলমারিতে দশ হাজার টাকা, কিছু ডলার ও বইপত্র ছিল। তাঁর ধারণা, বাড়ির পিছনের দিকে পাইপ বেয়ে ছাদে উঠেই চিলেকোঠার ঘরে ঢোকে দুষ্কৃতীরা। শুক্রবার পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়।
বিধাননগরে যে সব বাড়িতে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা কার্যত একলা থাকেন, সেই বাড়িগুলিই নিশানা করছে দুষ্কৃতীরা। একই কায়দার দিনের পর দিন চুরি হওয়ার পরেও কেন তা কমানো সম্ভব হচ্ছে না? সদুত্তর পুলিশের কাছে নেই। কিছু দিন আগেই আইএ ব্লকের উল্টো দিকে একটি শপিং মলের কাছে ভরসন্ধ্যায় এক মহিলার ব্যাগ ছিনতাই হয়। ঘটনায় আহত হন তিনি। সম্প্রতি করুণাময়ী আবাসনে এক মহিলার শ্লীলতাহানির চেষ্টা হয়। গত চার মাসে পরপর চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেই চলেছে। রাজ্য পুলিশের ডিজি ইতিমধ্যে দু’বার বিধাননগরে বৈঠকও করেছেন। দেওয়া হয়েছে নানা প্রতিশ্রুতি। কিন্তু অবস্থা পাল্টায়নি।
এখন তা হলে কী করণীয়? স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “পুলিশকর্মীর সংখ্যা আরও বাড়ানোর প্রয়োজন।” যত দিন না সেই সংখ্যা বাড়ে, তত দিন কী হবে? কাউন্সিলরের বক্তব্য, “আগে পাড়ায় পাড়ায় যুবকরা রাত জেগে পাহারা দিত। পালা করে আবার সে রকম কিছু করার প্রয়োজন এসে পড়েছে।” বাসিন্দাদের সংগঠন, সল্টলেক ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “আমরা আতঙ্কিত। বাসিন্দাদের সতর্ক হতে বলা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের সাহস জোগানোর কথা তো পুলিশের। তারা কোথায়?” কোনও পুলিশ কর্তাই মুখ খুলতে চাননি। তবে পুলিশের একাংশের মতে, সল্টলেকে বিশাল এলাকা জুড়ে এত বাড়ির নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। |