মমতার পাশে দাঁড়িয়ে হাসি কেন, ব্যাখ্যা দিলেন সূর্য
হাকরণে এক সর্বদল বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর হাসিমুখের ‘ব্যাখ্যা’ দিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। এক মাস আগে তাঁর ও মুখ্যমন্ত্রীর ওই হাসিমুখের ছবি সর্বত্র আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছিল। শনিবার কামারহাটির নজরুল মঞ্চে সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই-এর রাজনৈতিক শিক্ষা শিবিরে সূর্যবাবু নিজেই জানান, উনি (মমতা) মাঝে মাঝে এমন কথা বলেন, না হেসে পারা যায় না! যেমন ক’দিন আগেই মমতা বললেন, ২০ পয়েন্টে ভূমিকম্প হয়েছে! কিন্তু ভূমিকম্প তো মাপা হয় রিখটার স্কেলে। সিকিমে যে ভূমিকম্প হয়েছে, তার পরিমাপ ৬.৮। কিন্তু উনি বললেন ২০ পয়েন্ট!
পাশাপাশিই, শিবিরে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতার ‘কড়া সমালোচনা’ও করেছেন। রাজ্যের নাম বদল ও জেলা ভাগ নিয়ে সর্বদল বৈঠকের পরে হাসিমুখে মমতা-সূর্যকান্তর ছবি সিপিএম-তৃণমূল ‘সম্পর্কের’ প্রেক্ষিতে যথেষ্ট বিরল। সেই ছবি নিয়ে পরবর্তী কালে সূর্যবাবুকে বিভিন্ন মহল থেকে মন্তব্য শুনতে হয়েছে। এমনকী, তাঁর নিকটাত্মীয়রাও যে ওই বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করেছেন, এ দিন যুবদের শিক্ষা শিবিরে তা-ও কবুল করেন বিরোধী দলনেতা। তিনি বলেন, বাড়িতেও বলা হয়েছে যে, তাঁকে ওইভাবে হাসতে দেখা যায় না!
শিক্ষা শিবিরে সূর্যবাবুর বক্তৃতার বিষয় ছিল: ‘বিরোধী দল হিসাবে বামপন্থীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য’। যার প্রেক্ষিতে এই বিষয় আসা যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক যে, যেখানে রাজ্য জুড়ে ‘সন্ত্রাস’ চলছে বলে বামেদের অভিযোগ, সেখানে ‘সৌজন্যের রাজনীতি’র নামে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে বিরোধী নেতার হাসিমুখের ছবি ‘রাজনৈতিক’ ভাবে কী বার্তা দেয়? ঘটনাচক্রে, পরের সর্বদল বৈঠকেই আলিমুদ্দিন পাঠিয়েছিল মহম্মদ সেলিমকে। যা থেকে দলের একাংশের অনুমান, সূর্যবাবুর ‘নরম’ অবস্থান আলিমুদ্দিনকে ও ‘খুশি’ করেনি। বস্তুত, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেবের মতো সিপিএমের একাংশ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে ‘বিরোধী দলনেতা’ হিসেবে তুলে ধরতে উদ্যোগী হয়েছেন। তাঁরা বলছেন,মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে বুদ্ধবাবুর মুখোমুখি বৈঠকে বসার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। যা সূর্যবাবুর কাছে খুব ‘স্বস্তি’র নয়।
সে দিনের সেই মুহূর্ত। ফাইল চিত্র
দলের একাংশের মতে, মমতার পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর হাসিমুখের ব্যাখ্যা দিতে সূর্যবাবু যুব শিক্ষা শিবিরকে বেছে নেন। সেই শিবিরে রাজ্যের সব জেলা থেকে প্রতিনিধি এসেছেন। যাঁরা সূর্যবাবুর ‘ব্যাখ্যা’য় আপাতত সন্তুষ্ট। যেমন এক যুব নেতার কথায়, “যেখানে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসু থেকে শুরু করে পার্টির প্রথম সারির নেতারা চড়া গলায় মমতাকে আক্রমণ করছেন, সেখানে মমতার সঙ্গে সূর্য’দার হাসিমুখের ছবি নিয়ে একটা প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু এ দিন ওঁর ব্যাখ্যার পর শিবিরে উপস্থিত সদস্যরাও হাসতে থাকেন।”
নিজের অবস্থান বোঝাতে গিয়ে সূর্যবাবু জানান, তাঁর হাসিমুখ দেখে সংবাদমাধ্যম বলছে ‘সৌজন্যের রাজনীতি’। কিন্তু তৃণমূল বিরোধী থাকার সময় সেই ‘সৌজন্য’ কোথায় ছিল? সর্বদল বৈঠক ডাকলেও তৃণমূল আসত না। সূর্যবাবু জানান, তখন তৃণমূলের অনুপস্থিতি নিয়ে সংবাদমাধ্যম কোনও প্রশ্ন তোলেনি! বাম আমলে সর্বদল বৈঠক ডাকলে মমতাই তৃণমূলের কাউকে আসতে দিতেন না দাবি করে সূর্যবাবু বলেন, তাঁরা ‘দায়িত্বশীল’ বিরোধীদল হওয়ায় সর্বদল বৈঠকে গিয়ে সরকারকে তাঁদের কথা জানাচ্ছেন। সর্বদল বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়েও মমতার সমালোচনা করেন সূর্যবাবু। বলেন, কোন বিষয় নিয়ে সর্বদল বৈঠক ডাকা উচিত, তার কোনও অগ্রাধিকার নেই! বন্যা, পাহাড়-চুক্তি বা সন্ত্রাস নিয়ে সর্বদল বৈঠক ডাকা হচ্ছে না। কিন্তু শহরে হোর্ডিং থাকবে কিনা, তা নিয়ে সর্বদল বৈঠক ডাকা হচ্ছে! যুবদের কাছে সূর্যবাবুর পরামর্শ, সরকারের ‘ভুল বা জনবিরোধী কাজের’ কথা সর্বত্র প্রচার করতে হবে। মানুষকে বলতে হবে, বামেদের সৌজন্যবোধ আছে বলেই মুখ্যমন্ত্রী ডাকলেই তাঁরা সর্বদল বৈঠকে যাচ্ছেন। রাজ্যের উন্নয়নের কাজেও সরকারের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কলকাতায় প্রধানমন্ত্রী এলে রাজ্যের উন্নয়নের দাবিতে বামফ্রন্টের বিধায়করা তাঁকে স্মারকলিপি দেন। ঘটনাচক্রে, ঠিক এই কথাগুলিই লাগাতার বলছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু সহ অন্য নেতারা।
শিক্ষা শিবিরে দলের পলিটব্যুরো সদস্য নিরুপম সেন সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থে বিশ্বপুঁজির ভূমিকা ব্যাখ্যা করেন। আজ, রবিবার শিবিরে বক্তৃতা দেবেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসু এবং গৌতম দেব।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.