পাশের শহর নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশন মঞ্চে বক্তৃতা দেওয়ার সময় মার্কিন কর্তাদের বয়কটের শিকার হলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদিনেজাদ। কিন্তু খোদ মার্কিন রাজধানীতে বসেই বিশ্বব্যাঙ্কের বৈঠকের ফাঁকে তেহরানের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভিত গড়লেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। ইরানের অর্থমন্ত্রী সৈয়দ শামসেদ্দিন হোসেইনির সঙ্গে এক দীর্ঘ পার্শ্ববৈঠক করে শক্তি-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নয়াদিল্লি-তেহরান সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কৌশল রচনা করলেন প্রণব।
কূটনীতিকরা বলছেন, অর্থমন্ত্রী হিসাবে কাজটি ভীষণই জরুরি ছিল প্রণববাবুর কাছে। ভারতের আমদানি করা তেলের ২০ শতাংশই আসে ইরান থেকে। আর তা নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে চলেছে টানাপোড়েন। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে তেহরানকে তেলের দাম চোকাতে পারছিল না দিল্লি। যে আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কগুলির মাধ্যমে তেলের দাম দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল, ওয়াশিংটনের নির্দেশে সেগুলি সবই তেহরানকে অর্থ দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। অতি সম্প্রতি পরিস্থিতি কিছুটা সহজ হয়েছে।
২০০৪ সালে লোকসভায় জিতে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সমস্ত দরজা খুলে রাখার বিদেশনীতি নিয়ে চলতে চাইছেন মনমোহন সরকার। সেই নীতির অঙ্গ হিসাবে আমেরিকার সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক তৈরির পাশাপাশি ইরানের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়েছে ভারত।
তেল, গ্যাস-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইরানের উপর ভারতের নির্ভরশীলতা আগামী দিনেও বাড়বে বই কমবে না। আর তাই তেলের দাম দেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় নয়াদিল্লির রক্তচাপও বেড়ে গিয়েছিল। এই অন্তর্বর্তী সময়ে তেহরান যে ‘ধৈর্য’ দেখিয়েছে ইরানের অর্থমন্ত্রীকে তার জন্য সাধুবাদ জানিয়েছেন প্রণববাবু। ইরানে বিনিয়োগ ক্ষেত্রটি আরও বাড়াতে নয়াদিল্লি যে আগামী দিনে সক্রিয় হবে, সেই আশ্বাসও দিয়েছেন। দু’দেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে দ্বৈত-কর ব্যবস্থা নিরসন এবং দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ সুরক্ষা বাড়াতে শীঘ্রই দু’টি চুক্তি করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রণববাবু। তেল এবং পেট্রোপণ্য ছাড়া অন্য ক্ষেত্রেও যাতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে বিস্তৃত করা যায়, সে বিষয়েও আজ আলোচনা করেছেন দুই নেতা। হোসেইনি প্রণববাবুকে জানিয়েছেন, ইরানে শীঘ্রই একটি ভারতীয় সংস্কৃতি কেন্দ্র খোলার বিষয়ে তিনি নিজে উদ্যোগ নেবেন। |