চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ নিয়ে মাঝেমধ্যেই হট্টগোল হচ্ছে। নিগ্রহের ঘটনাও ঘটছে। তা নিয়ে তদন্তও হচ্ছে। এই অবস্থায় চাপ সামাল দিতে না-পেরে ইস্তফা দিলেন মালদহ সদর হাসপাতালের এক শল্য চিকিৎসক বিমল পণ্ডিত। বৃহস্পতিবার ওই চিকিৎসক ইস্তফাপত্র জমা দিয়ে ওই চিকিৎসক বলেন, “আর পারলাম না। আজ ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছি ।” হাসপাতাল সূত্রের খবর, বুধবার হাসপাতালেরই অন্য চার চিকিৎসক শিশু বিশেষজ্ঞ তুষারকান্তি দাস, প্রভাত মাঝি, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ রুদ্রেন্দু চট্টপাধ্যায় এবং অ্যানাসথেসিস্ট পুস্পিতা গুপ্ত স্বেচ্ছাবসরের আবেদন করেছেন। তবে ইস্তফাপত্র কিংবা স্বেচ্ছাবসরের আবেদনে ওই চিকিৎসকেরা কেউই হয়রানির কথা লেখেননি। চিকিৎসকদের কয়েকজন জানান, অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা বিজ্ঞান না-বুঝেই অভিযোগ তুলে হট্টগোল বাঁধানো হচ্ছে।
এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন জেলা হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা পুরোপুরি ভেঙে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। চিকিৎসকদের ‘মানসিক চাপের’ কথা মেনে নিয়েছেন হাসপাতালের সুপার হিমাদ্রি আড়িও। তিনিও মালদহ ছেড়ে চলে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বলে জানা গিয়েছে। হাসপাতালের সুপার বলেন, “চিকিৎসকদের ইস্তফাপত্র ও সেচ্ছাবসরের আবেদনপত্র রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে পাঠিয়েছি। হাসপাতালের এখন কাজের পরিবেশ নেই। সুস্থ ভাবে কাজ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোগীর যা ভিড় সেই তুলনায় চিকিৎসক নেই। ৬০০ শয্যার হাসপাতালে ৮০০র বেশি রোগী। মাত্র ৫২-৫৩ জন চিকিৎসক দিয়ে কীভাবে হাসপাতাল চালাব? একটু কিছু হলেই চিকিৎসকদের হেনস্থা করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত হয়রানিতে আমি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ছি।” কিছুদিন আগেই এক রোগীর কাটা পা তাঁর মাথার নিচে রাখার ঘটনায় রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব মালদহ সদর হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক সন্দীপ চক্রবর্তীকে সাসপেন্ড করেন।
চিকিৎসক মহলে জানা গিয়েছে, ওই ঘটনার জেরে মালদহ সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের মধ্যে আতঙ্ক চেপে বসেছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন কুমার ঝরিয়াত অবশ্য স্পষ্ট ভাবে বলেছেন, “যে কোনও চিকিৎসক চাকরি ছাড়তেই পারেন। স্বেচ্ছাবসরও নিতেই পারেন। এটা তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কেউ যদি চাপের ভয়ে পালিয়ে যেতে চান, আমরা তো তাঁদের পায়ে ধরে রাখতে পারব না। যাঁরা স্বেচ্ছাবসর ও ইস্তফার আবেদন জানিয়েছেন তাঁদের আবেদনপত্র স্বাস্থ্য ভবনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।” আসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরসের জেলা সম্পাদক মলয় সরকার অবশ্য স্বেচ্ছাবসর চাওয়া চিকিৎসকদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, “সদর হাসপাতালে চিকিৎসকদের কোনও নিরাপত্তা নেই। যখন তখন যে কেউ হাসপাতালে ঢুকে ডাক্তারদের ধমকাচ্ছেন, শাসাচ্ছেন। পরিষেবা দেওয়ার পরেও ডাক্তারদের হেনস্থা করা হচ্ছে। প্রতিকার চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলে উল্টে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। তাতেই ডাক্তারদের কেউ ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছেন। কেউ স্বেচ্ছাবসরের আবেদন করেছেন। আরও অনেক ডাক্তার স্বেচ্ছাবসরের অবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে শুনেছি। যা চলছে তাতে আমিও স্বেচ্ছাবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” আইএমএ-র মালদহ জেলা সম্পাদক বৃন্দাবন রায় অভিযোগ করেন, “বেশির ভাগ হাসপাতালে অস্থির পরিবেশ চলছে। ৯০ শতাংশের বেশি চিকিৎসক অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে ডিউটি করেন। হাতেগোনা কিছু ফাঁকিবাজ চিকিৎসকদের জন্য গোটা চিকিৎসক সমাজকে হেনস্থা করা ঠিক নয়।” স্বেচ্ছাবসর চাওয়া স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ রুদ্রেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এত চাপ নিয়ে কাজ করেও সম্মান তো দূরের কথা, প্রতি পদে হেনস্থা হতে হচ্ছে। রোগীর পরিবারের গালাগাল শুনতে হচ্ছে। আর কতদিন সহ্য করব? আর পারা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে স্বেচ্ছাবসরের আবেদন করেছি।” |