এক প্রসূতির মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার নৈহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তাণ্ডব চালানো হল। প্রহৃত হলেন এক চিকিৎসক ও নার্স। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই চিকিৎসককে কল্যাণীর গাঁধী মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তাঁকে আইসিসিইউ-তে রাখা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ভাঙচুরের লিখিত অভিযোগ পেয়ে পুলিশ এক জনকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন ভাটপাড়া কুলি-ডিপোর বাসিন্দা মিনা পাল (১৯)। বুধবার সকালে তিনি একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তাঁর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। বেলা সাড়ে ৩টে নাগাদ তিনি মারা যান। এর পরেই চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে হাসপাতালে চড়াও হন এক দল মানুষ। জরুরি বিভাগে ঢুকে তাঁরা চেয়ার-টেবিল উল্টে দেন। ভেঙে নষ্ট করা হয় চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ। তছনছ করা হয় জরুরি কাগজপত্র। অভিযোগ, সেই সময়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক অমিত ভৌমিককে গালিগালাজ করে মাটিতে ফেলে পেটানো হয়। হামলাকারীরা রেয়াত করেনি নার্স সুস্মিতা মজুমদারকেও। এই পরিস্থিতিতে কিছু ক্ষণের জন্য অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় ওই বিভাগে। প্রহৃত হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হন অমিতবাবু। তাঁকে প্রথমে কল্যাণী জে এন এম হাসপাতাল, পরে গাঁধী মেমোরিয়াল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। তাঁর অবস্থা গুরুতর বলে হাপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
মৃতার স্বামী অজিতাভ পালের অভিযোগ, “হাসপাতালে চিকিৎসক ঠিকমতো আসেন না। সন্তানের জন্মের পরে চিকিৎসককে পাওয়া যায়নি। এক জন নার্স ইঞ্জেকশন দিয়েছিলেন। তার পরেই স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসায় গাফিলতির জন্যই স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে।” যদিও এ ব্যাপারে সন্ধ্যা পর্যন্ত অজিতাভবাবুদের তরফে থানা বা হাসপাতালে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আবেদন মতো পুলিশ দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে।
চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ মানতে চাননি হাসপাতালের সুপার অনুভা কয়াল। তাঁর দাবি, চিকিৎসায় কোনও ত্রুটি ছিল না। মিথ্যা দোষারোপ করা হয়েছে। অকারণে এক চিকিৎসককে মারা হল। ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক তথা ওই হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি অজয় পাল বলেন, “চিকিৎসায় গাফিলতি ছিল কি না, খতিয়ে দেখা হবে। কিন্তু তা বলে এ ভাবে চিকিৎসককে মারধর ও সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর মেনে নেওয়া হবে না। প্রশাসনিক পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছি।” |