বেংডুবি সেনা হাসপাতালে ভূমিকম্পে জখম ব্যক্তিদের
সাহায্য বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যের। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
সেখানেই ছোট্ট কোয়াটারে দিন কাঁটত তাঁর। ভূমিকম্পের সেই সন্ধ্যা রাতে টানেল সারাইয়ের কাজ করছিলেন। আর ফিরতে পারেননি ঘরে। বৃহস্পতিবার সেদিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে শিউরে উঠছিলেন তিনি। কাটা বা পায়ের দিকে তাকিয়ে গুলিয়ে ফেলছিলেন সবকিছু। রামগড়ে থাকা স্ত্রী ও দুই ছেলের কথা বলে কেঁদে উঠছিলেন তিনি। বেংডুবির সেনা হাসপাতালের কর্মী ও জওয়ানরা তাঁর শরীরে হাত বুলিয়ে আশ্বস্ত করছিলেন। বিনোদ বলেন, “ভুলতে পারছি না সেদিনের কথা। ভাবিনি বেঁচে ফিরব। এখন শুধু বাড়ির কথা মনে পড়ছে।” বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য ব্যাংডুবি সেনা হাসপাতালে গিয়ে কথা বলেন বিনোদের সঙ্গে। চোখের জল মুছে দিয়ে তাঁর পাশে থাকার আশ্বাস দেন। রুদ্রবাবু গোটা হাসপাতালে ঘুরে ভূমিকম্পে জখম ৩০ জন রোগীর সঙ্গে কথা বলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে তাঁদের হাতে মিষ্টির প্যাকেট তুলে দেন। ২ রোগী জগদেও মুণ্ডা, দেওচরণের হাতে এক হাজার টাকা করে তুলে দেন। বুধবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি থাকা সিকিমের নাথংয়ের বাসিন্দা একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ডোমা শেরপা (১৮)-র মৃত্যু হয়। তাঁর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেই পরিবারের সদস্যদের হাতেও টাকা তুলে দেন রুদ্রবাবু। বিধায়ককে সেই দিনের বর্ণনা দিতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন জখমরা। ডোমার দাদা দাওয়া রুদ্রবাবুর হাত ধরে কাঁদতে থাকেন। তিনি বলেন, “গ্যাংটকের বোর্ডিং স্কুলের হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করত ডোমা। ওই দিন রাতে গাড়িতে করে গ্যাংটকে যাচ্ছিল সে। ভূমিকম্পে গাড়িটি উল্টে গেল। বোনটিকে আর বাঁচাতে পারলাম না।” রুদ্রবাবু তাঁদের আশ্বস্ত করে বলেন, “এভাবে মৃত্যু কেউ মানতে পারে না। আমাদের কিছুই করার নেই। শুধু এটুকু বলতে পারি, আপনাদের পাশে আছি। থাকব।” তিনি তাঁর টেলিফোন নম্বরও তুলে দেন তাঁদের হাতে। ঝাড়খন্ডের বাসিন্দা জগদেও বলেন, “ভূমিকম্প সব কেড়ে নিয়েছে আমাদের। সেনা জওয়ানরা আমাদের সুস্থ করে দিয়েছেন। এখন বাড়ি ফিরব কী করে সে কথাই ভাবছিলাম। টাকা পাওয়াতে সেই চিন্তা দূর হল।” সেনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, ভূমিকম্পে জখম ৪২ জনকে বেংডুবি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জনকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। ৬ জনকে বিভিন্ন নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে। বাকিদের চিকিৎসা চলছে সেনা হাসাপাতালে। সেনা কর্মীরা সারা দিন থাকছেন তাঁদের পাশে। ব্যাংডুবির ১৫৮ বেস হাসপাতালের ব্রিগেডিয়ার রামালিঙ্গম বলেন, “আমরা সকলকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করছি। তার মধ্যেও এক জনের মৃত্যু হয়েছে।” জখম দীনেশ ছেত্রী, সূর্য রাই বলেন, “সেনা জওয়ানরা এমন ভাবে সুশ্রূষা করেছেন, যা ভুলতে পারব না।” |