দাবি বিবেচনার আশ্বাসেই উঠল আইআরবি আন্দোলন |
বাহিনীর ডিজি-র তরফে তাঁদের দাবি-আভিযোগ বিবেচনার আশ্বাসে অবশেষে ‘আন্দোলন’ প্রত্যাহার করলেন আইআরবি জওয়ানরা। আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) জুলফিকার হাসানকে সঙ্গে নিয়ে ডিজি (সশস্ত্র বাহিনী) গৌতমমোহন চক্রবর্তী বৃহস্পতিবার বিকেলে পৌঁছন বিনপুরের শিলদা শিবিরে। ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলনকারী জওয়ানদের সঙ্গে কথা বলেন ডিজি ও আইজি।
তার পরেই ডিজি-র আশ্বাসে অনশন-বিক্ষোভে ইতি টানেন শিলদা-সহ অন্যত্রও বিক্ষোভরত আইআরবি জওয়ানরা। |
গৌতমবাবু বলেন, “আইআরবি অত্যন্ত দক্ষ একটি বাহিনী। অনেক সমস্যা-অভিযোগ আছে জওয়ানদের। তার কিছু যুক্তিপূর্ণ। পোস্টিং নিয়েই সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ রয়েছে। রাজ্য পুলিশের ডিজি-র সঙ্গে এ নিয়ে শুক্রবারই কথা বলব। জওয়ানেরাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাঁরাও বাহিনীর শৃঙ্খলা বজায় রাখবেন।” ডিজিকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি মতোই এর পর অনশন ও আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন জওয়ানরা।
মঙ্গলবার প্রথম শিলদা শিবিরেই শুরু হয়েছিল বিক্ষোভ। অনুমোদনহীন ছুটি নিয়ে ১১ জনকে শো-কজের প্রতিবাদে ৫৮ জন জওয়ান শিবিরের দরজা বন্ধ করে, কোনও আধিকারিককে ঢুকতে না দিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। বুধবারই তা ছড়িয়ে পড়ে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে। হুগলির সিঙ্গুর থেকে শুরু করে নন্দীগ্রামের তেরোপেখ্যা, পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি, গড়বেতা, কেশপুর, বাঁকুড়ার সারেঙ্গা, রানিবাঁধ, বারিকুল, বীরভূমের সিউড়ি, উত্তর চব্বিশ পরগনার ব্যারাকপুর এবং দুর্গাপুরে আইআরবি সদর দফতরেও সংক্রমিত হয় শিলদার ক্ষোভ। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরে জওয়ানদের অবস্থান-বিক্ষোভে সামিল হন তাঁদের পরিজনেরাও। মঙ্গলবার থেকে বিভিন্ন শিবিরে এবং পুলিশ লাইনে আইআরবি জওয়ানেরা অনশনও শুরু করেছিলেন। অনশনরতরা অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসকদেরও ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
ছুটি নিয়ে শো-কজের প্রতিবাদেও আর সীমাবদ্ধ থাকেনি জওয়ানদের ক্ষোভ-অভিযোগ। তাঁদের অনুযোগদিনের পর দিন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জঙ্গলমহলেই ডিউটি করতে হচ্ছে অথচ তাঁদের সমস্যা, অভাব-অভিযোগ শোনার মতো কেউ নেই। ছুটি চেয়েও পাওয়া যায় না। কী মানসিক অবস্থায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না-জানিয়েই ছুটি নিতে হয়, তা বোঝার চেষ্টাটুকুও হয় না। সেই সঙ্গে বেতনবৃদ্ধি, পদোন্নতি না-হওয়ার অভিযোগও তোলা হয়। প্রশাসনের অস্বস্তি বাড়িয়ে বিক্ষোভ ক্রমেই ‘বিদ্রোহে’র চেহারা নিতে শুরু করেছিল।
জওয়ানদের তরফে এমনকী স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বা তাঁর প্রতিনিধিকে এসে অভাব-অভিযোগ শুনতে হবে বলে দাবি ওঠে শিলদায়।
বৃহস্পতিবার সকালেও শিলদা শিবিরে বাহিনীর কমান্ডিং অফিসার কল্যাণকুমার মল্লিককে ঢুকতে দেননি জওয়ানেরা। কল্যাণবাবু মাইক্রোফোনে জওয়ানদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। তা-ও জওয়ানদের উগ্রমূর্তির জেরে ভেস্তে যায়। প্রশিক্ষিত একটি বাহিনীর জওয়ানদের এ হেন আন্দোলন বাহিনীর ‘শৃঙ্খলা’ ও ‘নিয়ন্ত্রণ’ নিয়েই প্রশ্ন তুলে দেয়। বৃহস্পতিবারই এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মহকারণে মুখ্যসচিব সমর ঘোষ বলেন, “ইউনিফর্ম পরা কোনও বাহিনীই আন্দোলন করতে পারে না।” রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব জ্ঞানদত্ত গৌতমও বলেন, “আইআরবি জওয়ানেরা ঠিক করেননি। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। দেখা যাক কী হয়।” স্বরাষ্ট্রসচিব অবশ্য বাহিনীর দাবি খতিয়ে দেখারও আশ্বাস দেন।
সেই আশ্বাসের পথেই ডিজি সন্ধ্যায় জওয়ানদের আন্দোলন প্রত্যাহারে রাজি করান। |