জেলে বসেই অনেক মার্কামারা কয়েদি খুন, তোলাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। লৌহকপাটের আড়ালে থেকে এ ভাবে দুষ্কর্ম চালানো বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্যের কারা দফতর। তারই অঙ্গ হিসেবে ঠিক হয়েছে, বন্দির সঙ্গে দেখা করতে গেলে এ বার সচিত্র পরিচয়পত্র দেখাতে হবে সাক্ষাৎপ্রার্থীদের। পরিচয়পত্রের ছবির সঙ্গে সাক্ষাৎপ্রার্থীর চেহারা মিলিয়ে দেখে তবেই বন্দির সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হবে। জমা রাখা হবে সেই সচিত্র পরিচয়পত্রের প্রতিলিপিও। নির্দিষ্ট বন্দির সঙ্গে কে বা কারা কবে কখন দেখা করে গেলেন, তার নথিও রাখা হবে অন্তত ছ’মাস।
• দুর্ধর্ষ দুষ্কৃতীরা জেলের ভিতর থেকেই হুমকি দিয়ে তোলাবাজি চালাচ্ছে, সুপারি নিয়ে খুনও করছে।
• জেলের মধ্যে ঢালাও মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে অনেক দাগি বন্দি।
• লৌহকপাটের ভিতরে থেকেই কিছু কিছু দুর্বৃত্ত বাইরের দুষ্কৃতীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
• বন্দিদের ওয়ার্ড ও সেল থেকে মোবাইল-সহ নিষিদ্ধ মালপত্র উদ্ধার করা হচ্ছে হামেশাই।
তদন্তে নেমে রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পেরেছে, এই ধরনের ঘটনায় জেলকর্মীদের একাংশের মদত তো আছেই। সেই সঙ্গে দেখা করতে আসা লোকজনের মাধ্যমেও বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বিপজ্জনক বন্দিরা। অনেক ক্ষেত্রে সাক্ষাৎপ্রার্থীদের হাত দিয়েই বন্দিদের কাছে নিষিদ্ধ জিনিসপত্র পৌঁছে যাচ্ছে। পৌঁছে যাচ্ছে নগদ টাকা, চিঠিপত্রও। এই পরিস্থিতিতে চিঠি পাঠিয়ে কারা দফতরকে সতর্ক করে দিয়েছেন রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের ডিজি ভি ভি থাম্বি।
গোয়েন্দা দফতরের চিঠি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আইজি (কারা) রণবীর কুমার বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন ডিআইজি (নিরাপত্তা) হরিহর মণ্ডলকে। তার পরেই ঠিক হয়েছে, সাক্ষাৎপ্রার্থীদের সচিত্র ভোটার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট, সরকারি বা অধিগৃহীত সংস্থার দেওয়া পরিচয়পত্র, বিপিএল কার্ড ইত্যাদির মধ্যে যে-কোনও একটি পরিচয়পত্রের প্রতিলিপি জমা নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হবে। ডিআইজি (নিরাপত্তা) বলেন, “রাজ্যের সব জেল সুপারকে বলা হয়েছে, ওই সব পরিচয়পত্র মিলিয়ে দেখে তবেই নির্দিষ্ট বন্দির সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া যাবে। এই নিয়মের কোনও ব্যতিক্রম ঘটানো যাবে না।”
এত দিন সাদা কাগজে দরখাস্ত লিখলেই দণ্ডিত বা বিচারাধীন বন্দিদের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দিতেন সংশ্লিষ্ট জেল-কর্তৃপক্ষ। সেই দরখাস্তও জেলে নথিভুক্ত হত না। এ বার থেকে সেই সব দরখাস্ত নথিভুক্ত করতে হবে। এবং সেই নথি অন্তত ছ’মাস জেলের অফিসে রাখতে হবে বলে নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
ফলে গত ছ’মাসে কোন বন্দির সঙ্গে কে বা কারা কবে দেখা করতে এসেছিলেন, প্রয়োজনে তা অনায়াসে জানা যাবে। গোয়েন্দা পুলিশের বক্তব্য, বন্দিদের ‘আত্মীয়’ পরিচয় দিয়ে, নাম ভাঁড়িয়ে বাইরের দুষ্কৃতী ও শাগরেদরা বিপজ্জনক বন্দিদের দেখা করছে। রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের এডিজি সি ভি মুরলীধর জানান, পরিজন সেজে জেলে ঢুকে শাগরেদরা দাগি দুর্বৃত্তদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করছে।
কোন বন্দির কাছে কখন কী ভাবে ‘মালপত্র’ পাঠানো হবে, তার ছক কষা হচ্ছে। জেলের বাইরে অন্ধকার জগতের বর্তমান ছবিটা সাক্ষাৎপ্রার্থী শাগরেদদের কাছ থেকেই জানতে পারছে কয়েদি। পরবর্তী দুষ্কর্মের ব্যাপারে বন্দি চাঁইয়ের কাছ থেকে পরামর্শও নিয়ে যাচ্ছে শাগরেদরা। মুরসীধর বলেন, “নিরাপত্তার পক্ষে এটা বিপজ্জনক। তাই সাক্ষাৎপ্রার্থীর পরিচয়পত্র দেখতে এবং তার প্রতিলিপি রাখতে বলা হয়েছে।” |