সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী
ঝাড়খণ্ডে নিম্নচাপের বর্ষণে বন্যার বিপদ বাংলায়
দর দিয়ে সরাসরি বিপদ হয়তো আপাতত আসছে না। কিন্তু ঘুরপথে তার ঢুকে পড়ার আশঙ্কা থাকছেই।
বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপটি শেষ পর্যন্ত ওড়িশা উপকূলের দিকেই যাচ্ছে। এর ফলে দক্ষিণবঙ্গে দুর্যোগের সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু ঘুরপথে জল এসে রাজ্যে ফের বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
কী ভাবে আসতে পারে বিপদ?
ব্যাখ্যা মিলেছে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যেই। বৃহস্পতিবার মহাকরণে তিনি জানান, প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে ডিভিসি-র পাশাপাশি ঝাড়খণ্ডের চান্ডিল এবং অন্যান্য জলাধার আগেই সম্পূর্ণ ভরে গিয়েছে। ফলে প্রতিটি জলাধার থেকেই জল ছাড়া শুরু হবে।
তার উপরে নিম্নচাপ ওড়িশা হয়ে ঝাড়খণ্ডে গিয়ে ফের প্রবল বৃষ্টি নামাতে পারে। ফলে বিভিন্ন জলাধারে চাপ আরও বাড়বে এবং সেই জল নেমে আসবে বাংলার দিকেই। তাতে বেশ কিছু জেলায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। এই অবস্থায় ওই সব অঞ্চলের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
নিম্নচাপটি এখন ঠিক কোথায়?
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিম্নচাপটির অবস্থান ছিল দিঘা থেকে ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে, ওড়িশা উপকূলের কাছে। তার অভিমুখ ছিল ওড়িশার দিকে। নিম্নচাপটির সম্ভাব্য যে-গতিপথ তৈরি হয়েছে, তা থেকে আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, ওড়িশা উপকূল দিয়ে স্থলভূমিতে ঢুকে সেটি চলে যাবে ঝাড়খণ্ডের দিকে। তাই ঝাড়খণ্ডে প্রবল বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
বুধবার নিম্নচাপটির চার দিকে যে-বায়ুপ্রবাহ ছিল, তাতে তার শক্তি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সেটা হয়নি। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকায় নিম্নচাপটির গতিপ্রকৃতি নিয়ে নানা ধরনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সকালে উপগ্রহ-চিত্রে দেখা যায়, সেটির শক্তি বাড়েনি। গতিপ্রাপ্ত হয়ে নিম্নচাপটি সরে গিয়েছে ওড়িশা উপকূলের দিকে। আজ, শুক্রবার সকালের মধ্যে নিম্নচাপটি ওড়িশা উপকূল দিয়ে স্থলভূমিতে ঢুকে পড়তে পারে বলে আবহবিদেরা জানিয়েছেন।
নিম্নচাপ ওড়িশা উপকূলে ঢুকে গেলেও আজ, শুক্রবার সমুদ্র উত্তাল থাকবে। তাই মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। আবহবিদেরা জানান, উপকূল এলাকায় ঝোড়ো বাতাস বইবে। দু’-এক পশলা ভারী বৃষ্টি হবে উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে। যে-হেতু মৌসুমি অক্ষরেখা সক্রিয়, তাই কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে।
এমনিতেই ঝাড়খণ্ডের সব জলাধার এখন টইটম্বুর। সপ্তাহখানেক আগেই জল ছাড়া নিয়ে ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের কিছুটা মন কষাকষিও হয়েছে। ডিভিসি-র সব জলাধারও অতিবৃষ্টিতে পরিপূর্ণ। এই পরিস্থিতিতে ঝাড়খণ্ডে আবার বেশি বৃষ্টি হলে বিপদ দক্ষিণবঙ্গেরই। বৃষ্টির জল নেমে এসে পুজোর মুখে ফের বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। রাজ্য সরকার তাই দামোদর উপত্যকার সব জেলাকে সতর্ক করে দিয়েছে। খানাকুল, আরামবাগ, পুরশুড়া, উদয়নারায়ণপুর, ঘাটাল, দাসপুর প্রভৃতি অঞ্চলের বাসিন্দাদের তুলনামূলক ভাবে উঁচু জায়গায় চলে যাওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, ডিভিসি-র জলাধার থেকে রাতেই ৭০ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। চান্ডিল বাঁধ থেকে যাতে ১০ হাজার কিউসেক হারের বেশি জল ছাড়া না-হয়, সেই জন্য রাজ্য সরকার অনুরোধ করেছিল। কিন্তু ওই বাঁধ থেকেও আরও বেশি জল ছাড়া হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। মমতা বলেন, পলি জমে প্রতিটি জলাধারেরই জলধারণ ক্ষমতা কমে গিয়েছে। জলাধারগুলির আধুনিকীকরণ হলে বাড়তি দু’লক্ষ কিউসেক জল ধরে রাখা যেত। এই বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গেও কথা বলেছেন।
ফের বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কায় মুখ্যমন্ত্রী সব সরকারি আধিকারিক এবং দলের বিধায়ক, সাংসদদের প্রয়োজনমতো ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে বলেছেন বিভিন্ন ক্লাব, গণসংগঠনগুলিকেও। সাধারণ মানুষকেও পরস্পরকে সাহায্য করার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগে বহু মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হন। প্রাণহানি হয়। তবু আবার ঘুরে দাঁড়াতেই হয়। সরকারও প্রয়োজনমতো ব্যবস্থা নেবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.