আশ্রমের পুজোই আজ সর্বজনীন
গ্রামে দুর্গাপুজো হত না। পুজো হত না আশপাশের গ্রামগুলিতেও। তাই, পুজোর চারটে দিন বছরের বাকি দিনগুলোর মতোই সাদামাটা ছিল। মন খারাপ হত বাসিন্দাদের। মন খারাপ করত গ্রামের আশ্রমের আচার্যেরও। তাই নিজেই কাদামাটি মেখে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করেছিলেন। আশ্রমের অস্থায়ী মণ্ডপে পুজো শুরু করেছিলেন। খবর পেয়ে গ্রামবাসীরা আশ্রমে দৌড়ে এসেছিলেন। খুশিতে ভরে গিয়েছিল তাঁদের মন।
সারেঙ্গার খামানি জগদানন্দ সন্ন্যাস আশ্রমে ১৯৯০ সালে এ ভাবেই দুর্গাপুজোর শুরু হয়েছিল। শুরু করেছিলেন আশ্রমের আচার্য মহেশ্বরানন্দ গিরি মহারাজ। এখনও তিনি দূর্গা প্রতিমা তৈরি করেন। পুজোও করেন। সঙ্গে থাকেন আশ্রমবাসীরা, থাকেন ভক্তেরা আর আশপাশের গ্রামবাসীরা। কারণ, এ পুজো আর আশ্রমের নয়, গ্রামবাসীদেরও আনন্দে মেতে থাকার জায়গা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড় সীমানা লাগোয়া জঙ্গল ঘেরা খামানি আশ্রমের এই পুজো এ বার ২২ বছর পূর্ণ করতে চলেছে। এখানে আশ্রমে পুজো হলেও এই পুজোকে ঘিরে মেতে ওঠেন এলাকার বাসিন্দারা। শাল, মহুয়া, ইউক্যালিপটাস, সোনাঝুরি আর দেবদারুর বন দিয়ে ঘেরা এক ফালি গ্রাম- খামানি। সারেঙ্গা থেকে দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। গ্রামের এক প্রান্তে জগদানন্দ সন্ন্যাস আশ্রম। গ্রামে আর কোথাও দুর্গাপুজো হয় না। গ্রামবাসীর দুর্গাপুজো করার ইচ্ছা দীর্ঘদিনের। কিন্তু, সাধ থাকলেও তাঁদের সাধ্য ছিল না। আশ্রমের আচার্য মহেশ্বরানন্দ গিরি অবশ্য গ্রামবাসীর ইচ্ছে পূরণ করেছেন। অস্থায়ী মণ্ডপে তিনি প্রথম দুর্গা পুজোর সূচনা করেছিলেন। এখন পুজো হয় স্থায়ী মণ্ডপে।
ছবি: উমাকান্ত ধর।
মহেশ্বরানন্দ গিরি জানালেন, গ্রামে দুর্গা পুজো হত না বলে বাসিন্দাদের মন খারাপ হত। আমারও খারাপ লাগত। পরে গুরুদেবের আদেশ পেয়ে আশ্রমে দুর্গাপুজো শুরু করি। দেবী দুর্গার সঙ্গে মানানসই অলঙ্কার থাকে। অষ্টমীর সন্ধি পুজোয় আখ, চালকুমড়ো আর শশা বলি দেওয়া হয়। সপ্তমীর সকালে গ্রামেরই একটি পুকুর থেকে শোভাযাত্রা সহকারে নবপত্রিকা নিয়ে আসা হয়। একাদশীতে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়।
মহেশ্বরানন্দ গিরি বলেন, “এই পুজো আশ্রমবাসীর হলেও আশপাশের শালডহরা, হাতিবাড়ি, কেশিয়া, বেনাডি, হাবরা, তেলিজাত, আঁধারিয়া-সহ বহু গ্রামের মানুষ যোগ দেন। একাদশীর সন্ধ্যায় পংক্তিভোজ হয়। সব সম্প্রদায়ের মানুষকে প্রসাদ খাওয়ানো হয়। এটাই আশ্রমের পুজোর রীতি।”
খামানি গ্রামের বাসিন্দা মথুর মাহাতো, বিশ্বনাথ মাহাতোরা বলেন, “আশ্রমের ভক্ত ও আবাসিকরা এই পুজোর আয়োজন করেন। তবে, আমরা স্থানীয় বাসিন্দারাও পুজোর সময় এখানে আসি। আগে পুজো ছিল না বলে দুঃখ হত। এখন আমাদের সেই দুঃখ আর নেই। সবাই মিলে মহা আনন্দে পুজোয় যোগ দিই।”
আচার্য জানান, আশ্রমের বিঘে কুড়ি জমি রয়েছে। সারা বছর সেই জমিতে চাষ করে কিছু আয় হয়। তার সঙ্গে ভক্তদের দান করা টাকা যোগ করে পুজোর আয়োজন করা হয়। এই আশ্রমের ভক্ত সিমলাপালের দুবরাজপুর গ্রামের বাসিন্দা হারাধন পাল, বোকারোর ধূর্জটি প্রসাদ মাহাতোরা বলেন, “সারা বছর কর্মস্থলে বা বাড়িতে থাকি। কিন্তু, পুজোর সময় আমরা খামানি আশ্রমে যাই। এই সময়টা অন্য কোথাও যেতে মন চায় না। খামানি যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে আমাদের।” আচার্যের সহকারি কৃষ্ণেন্দু মাহাতো জানান, পুজোর চার দিন আশ্রমে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চণ্ডীপাঠ করা হয়। রাতে গীতাপাঠ চলে। এ ছাড়াও নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকে।
অভাব অনটনের জঙ্গলমহলে নানা সময়ে অশান্তি বেঁধেছে। তবু জঙ্গলমহলের এই এলাকার বাসিন্দাদের মনে পুজোর আনন্দে এতটুকুও ভাটা পড়েনি । বিষাদের কালো ছায়া দূরে ঠেলে আনন্দোৎসবে মাততে খামানির মাটি যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে এখানকার বাসিন্দাদের। পুজোয় তাই সেজে উঠেছে খামানি জগদানন্দ সন্ন্যাস আশ্রম।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.