শিশু-নির্যাতনের অভিযোগ না নিয়ে সাসপেন্ড এএসআই
ক মহিলার অভিযোগ না নেওয়ায় সাসপেন্ড করা হল এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টরকে।
ঘটনাটি বিষ্ণুপুর থানার। তাঁর শিশুকন্যাকে যৌন লাঞ্ছনা করা হয়েছে, এই অভিযোগ নিয়ে সোমবার বিষ্ণুপুর থানায় গিয়েছিলেন স্বামী-বিচ্ছিন্না মণি সাঁতরা। তাঁর অভিযোগ, থানায় তাঁর লিখিত অভিযোগ নেওয়া তো দূরের কথা, উল্টে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে ‘অর্থের বিনিময়ে’ সব মিটিয়ে নিতে বলেছিলেন বিষ্ণুপুর থানার এএসআই শশাঙ্কশেখর লায়েক। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার প্রণব কুমার বলেন, “ওই মহিলার অভিযোগ না নেওয়ায় সাসপেন্ড করা হয়েছে ওই এএসআই-কে।” গ্রেফতার করা হয়েছে শিশুকন্যার উপরে নির্যাতনে অভিযুক্ত মধু খানকে।
বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসার পরে মণিদেবীর চার বছরের মেয়ে নিবেদিতাকে বৃহস্পতিবার ছাড়া হয়েছে। এ দিন মেয়ের পাশে বসে মণিদেবী জানালেন, সাড়ে চার বছর আগে স্বামী তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তাঁর বাপের বাড়ি শহরের হাঁড়িপাড়ায়। এখন তিনি লোকের বাড়িতে কাজ করে কোনও রকমে সংসার চালান। তাঁর মেয়ের ‘দায়িত্ব’ নেবেন দাবি করে দিন কুড়ি আগে তাকে বাড়িতে নিয়ে যান বিষ্ণুপুরের শ্যামসুন্দরপুর গ্রামের বাসিন্দা মধু খান। মণিদেবীর দাবি, “সোমবার ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি, মেয়ের যৌনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন।
মায়ের কোলে নিবেদিতা। শুভ্র মিত্র
গায়ে ছেঁকা দেওয়ার দাগ। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, ওই টুকু মেয়েকে দিয়ে বাসন মাজানো থেকে ঝাড়ু দেওয়া, বিছানা তোলানোসবই করাতেন মধুবাবু ও তাঁর বাড়ির লোকজন।”
এর পরেই মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে সোজা বিষ্ণুপুর থানায় যান মণিদেবী। তাঁর অভিযোগ, “মধুবাবুর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ কিছুতেই নিতে চাননি ওই এএসআই। বরং মধুবাবুর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে ব্যাপারটা মিটিয়ে নিতে বলেন। এমনকী মেয়েকে সরকারি হাসপাতালের বদলে কোনও নার্সিংহোমে ভর্তি করানোর পরামর্শও দেন। আমি তা করিনি।” ওই দিনই মেয়েকে মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেন তিনি। মঙ্গলবার বিকেলে এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) দিব্যজ্যোতি দাসের সঙ্গে দেখা করেন মণিদেবী। তাঁর কথায়, “এসডিপিও সব শুনে অবাক হয়ে যান। বলেন, ‘এ তো অমানবিক ঘটনা! আমি অভিযোগ নিচ্ছি।’ মেয়েকে মহকুমা হাসপাতালেই চিকিৎসা করাতে বলেন এসডিপিও।”
জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবারই অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারকে ডেকে মধুকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন এসডিপিও। গোটা ঘটনার রিপোর্ট পাঠান পুলিশ সুপারের কাছে। তার ভিত্তিতে বুধবার রাতেই সাসপেন্ড করা হয় শশাঙ্কশেখরবাবুকে। এ দিন ধৃত মধুকে বিষ্ণুপুর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাঁকে সাত দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। ধৃত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। শশাঙ্কশেখরবাবুর দাবি, “আমি অভিযোগ নেব না বলিনি। বলেছিলাম, আগে ওর চিকিৎসা করান। তার পরে আসবেন। ওদের অভিযোগ মিথ্যা।”
হাসপাতাল থেকে মেয়েকে নিয়ে বিষ্ণুপুর শহরের কাটানধার এলাকায় যে বাড়িতে তিনি কাজ করেন, সেখানেই উঠেছেন মণিদেবী। ছোট্ট মেয়েটি বলে, “ওরা খুব মারত। মাথাতেও মেরেছে। গরম রডের ছেঁকা দিয়েছে।” মণিদেবীর কথায়, “ভেবেছিলাম মেয়ে ভাল থাকবে। তার এই পরিণতি।” মা-মেয়ের যাতে এটা স্থায়ী ঠিকানা হয়, সে ব্যাপারেও উদ্যোগী হয়েছেন এসডিপিও। একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। ওই প্রতিষ্ঠানটি মণিদেবী ও তাঁর মেয়ের ভার নিতে রাজি হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.