|
|
|
|
বনগাঁর থিম পুজোয় এ বার ‘পরিবর্তন’ |
সীমান্ত মৈত্র • বনগাঁ |
কোথাও সুনামিকে থিম করে তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। কোথাও আশ্রয় নেওয়া হয়েছে টেরাকোটার মতো প্রাচীন শিল্পের। কোথাও আবার দুর্গা হয়ে গিয়েছেন বাউলবেশধারী। এ ছাড়া মুক্তো, ঠান্ডা পানীয়ের প্লাস্টিকের পাইপের মতো মাধ্যম দিয়ে দুর্গা তো রয়েইছে। তবে এত সবের মধ্যেও উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ মহকুমার পুজোয় এ বার সগর্ব উপস্থিতি রাজ্যের সাম্প্রতিক ‘পরিবর্তন’ এবং তার রূপকারের। রাজ্যের পালাবদল এবং পালাবদলের কাণ্ডারী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বার এখানে পুজোর থিম হিসাবেও হাজির। আলোকসজ্জায় থাকছে পরিবর্তনের মহাকরণ। থাকছে মুখ্যমন্ত্রী থেকে সাম্প্রতিক ঘটনাবলীও। আর তাই পুজোর দিনগুলিতে গোটা বনগাঁ জুড়ে দশভূজার অধিষ্ঠান ঘটতে চলেছে প্যারিসের সিটি প্যালেস, চার্চ, অক্ষরধাম মন্দিরে। পাশাপাশি তালপাতার পাখা থেকে বেত, কাঠের চামচ, গামচা, ব্রাশ, প্লাস্টিকের বালতি, মগ ইত্যাদি মাধ্যমের দুর্গার আকর্ষণ তো থাকছেই।
গত কয়েক বছর ধরেই কলকাতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার এই সীমান্ত শহরেও থিমের পুজোর রমরমা বেড়ে গিয়েছে। আর সেই সূত্রে এখানকার পুজোর আকর্ষণ শুধু জেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। ইতিমধ্যেই এখানকার পুজো দেখতে ও পার থেকে লোকজন এ পারে আত্মীয়স্বজনদের বাড়ি আসতে শুরু করেছেন। জেলা পুলিশ-প্রশাসনের হিসাবে এ বার পুজোর সংখ্যা ৫৭টি। তার মধ্যে ৮ লক্ষ বা তার বেশি টাকার বাজেটের পুজো হচ্ছে সাতটি। শহরের শারদ উৎসবের আরও একটি দিক হল লিটিল ম্যাগাজিন। এ বার পুজোতেও থাকছে তার উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি।
পুর্বপাড়া যুবকবৃন্দের পুজোর এ বার ৪৫ বছর। মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে প্যারিসের সিটি প্যালেসের আদলে। বেত, ঘুড়ি, লাটাই উপকরণ হিসাবে কী নেই সেখানে? বনগাঁর অন্যতম বড় পুজো ১২-র পল্লি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো। ২৭ বছরে পা দেওয়া এই পুজোয় এ বার মন্দিরের আদলে তৈরি মণ্ডপের উচ্চতা হবে ৬৫ ফুট। মণ্ডপ তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ঠান্ডা পানীয়ের প্লাস্টিক পাইপ। আলোকজ্জায় থাকবে রবীন্দ্রনাথের জন্ম সার্ধ শতবর্ষ, কুতুবমিনার, লন্ডনের সেতু, দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা হোটেল। অভিযান সঙ্ঘের পুজোর মমণ্ডপ এ বার উজ্জ্বয়িনীর একটি প্রাসাদ। থাকবে ঝর্না। কৃষ্ণনগর থেকে আনা হচ্ছে প্রতিমা। আলোকসজ্জায় থাকবে জাতীয় ও রাজ্যস্তরের সাম্প্রতিক নান সমস্যার ছবি। অন্যতম আকর্ষণ ১৬টি সুসজ্জিত গেট। মতিগঞ্জের ঐক্যসম্মিলনীর পুজোর প্রতিমা তৈরি হচ্ছে মুক্তো দিয়ে। থাইল্যান্ডের নাগরাজের মন্দিরের আদলে মণ্ডপ। আলোয় দেখা যাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহাকরণের অলিন্দে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ছেন। এ ছাড়াও থাকবে রবীন্দ্রনাথ, বিবেকনন্দ, নেতাজি, ক্ষুদিরাম ইত্যাদি মনীষীর ছবি। ক্লাবের তরফে দেবদাস মণ্ডল জানান, রাজ্যে পালাবদলের রূপকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সম্মান জানাতেই এই পরিকল্পনা। প্রতাপগড় স্পোর্টিং ক্লাবের মণ্ডপ অক্ষরধাম এবং কিছুটা কাল্পনিক মন্দিরের আদলে। মাধ্যম আইসক্রিমের কাঠি। কোড়ারবাগানের নোবেল স্পোর্টিং ক্লাবের ২৪ তম বর্ষে শারদ উপহার রাজস্থানী সাজের দুর্গা। অধিষ্ঠিত হবেন বেঙ্গালুরুর কৃষ্ণ মন্দিরের আদলে তৈরি মণ্ডপে। শ্রীশ্রী আনন্দময়ী মাতৃমন্দিরের (বলাকা সমিতি) মণ্ডপ বিষ্ণুপুরের টেরাকোটার মন্দিরের আদলে। প্রতিমাও টেরাকোটার। পশ্চিমপাড়া স্পোর্টিং ক্লাব তাদের ৮০ ফুট উঁচু মণ্ডপ তৈরি করছে প্যারিসের একটি গির্জার আদলে। উজ্জ্বল সঙ্ঘের অভিনব মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে প্লাস্টিকের বালতি, মগ, গামছা, ব্রাশ দিয়ে। এগিয়ে চলো সঙ্ঘের থিম মহাবলীপুরমের পঞ্চপাণ্ডবের পঞ্চরক। পাহারের মধ্যে থাকবে পাঁচটি মন্দির। প্রতিমার থিম সুনামি। আলোকসজ্জায় থাকবে প্রকৃতি। শক্তিগড় অগ্রগামী স্পোর্টিং ক্লাবের থিম কৈলাস ধাম। শান্তি সঙ্ঘের মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে পোড়ামাটির নানা জিনিস দিয়ে। প্রতিমা টেরাকোটার। প্লাস্টিক বর্জনের জন্য মানুষকে সচেতন করার প্রয়াস থাকছে পুজোর পরিকল্পনায়। সিন্দ্রানী বাজার ব্যবসায়ী সমিতি মণ্ডপ তৈরি করছে শান্তিনিকেতনের কলাভবনের আদলে। মুস্তাফীপাড়া যুবগোষ্ঠী কেরলের একটি মন্দিরের আদলে তৈরি করছে মণ্ডপ। চড়কতলা স্পোর্টিং ক্লাবের মণ্ডপ তৈরি করতে আনা হয়েছে প্রচুর তালপাতার পাখা। পাল্লা দক্ষিণপাড়া পুজো কমিটির থিম ‘মাটির মানুষ’। বাদ্যযন্ত্র একতারার আদলে মণ্ডপ। থাকবে লালনের সমাধি। পুকুরের মধ্যে গান করবেন বাউলশিল্পীরা। গাঁধীপল্লি বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাবের থিম রামায়ণের অকাল বোধন। বৃন্দাবনের পাগলাবাবার মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। সব মিলিয়ে থিমের জোয়ারে এ বার ভাসতে চলেছে বনগাঁর শারদ উৎসব। |
|
|
|
|
|