|
|
|
|
পার-রষড়ার প্রলম্বিত পুজো সাতাশ দিন |
অনল আবেদিন • বহরমপুর |
পুজোর মেয়াদ ষষ্ঠী থেকে দশমী, সাকুল্যে ৫ দিন নয়।
এখানে দেবীদুর্গার সাধনা চলে পাক্কা ২৭ দিন ধরে। ষষ্ঠীর ১৪ দিন আগে ঝড়-বৃষ্টির দেবতা জীমুতবাহনের পুজো দিয়ে শুরু হয় দেবী চণ্ডীর আরাধনা। শেষ হয় বিসর্জনের ৮ দিন পর। ওই দিন নদী থেকে প্রতিমার কাঠামো তুলে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় মন্দিরে। তার পর সেখানে কাঠামো পুজো দিয়ে ওই বছরের মতো দেবীদুর্গার আরাধনায় ইতি টানা হয়।
টানা ২৭ দিন ধরে চলে কান্দির পার-রষড়া গ্রামের ঘোষবাড়ির দুর্গা পুজো। সেই দেবী কিন্তু দশভূজা নন। তিনি চতুর্ভূজা। কয়েকশো বছর ধরে চতুর্ভূজার পুজো-আচ্চার ওই রীতি রেওয়াজ চলে আসছে বলে ঘোষবাড়ির দাবি।
পার-রষড়ার ঘোষেরা আজ ষোল আনার উপর আঠারো আনা বাঙালি হলেও তাঁদের আদি নিবাস কিন্তু উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায়। পার-রষড়ার ঘোষ পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম পেশায় আইনজীবী মৃণ্ময় ঘোষ বলেন, “প্রায় হাজার বছর আগে আগে ভাগ্যেন্বেষণে সৌমেশ্বর ঘোষ তাঁর দুই ছেলে সানন্দ ও শ্রীমন্তকে নিয়ে অযোধ্যা থেকে বাংলায় পদার্পণ করেন। প্রথমে তাঁরা কান্দির জজানে বসবাস শুরু করেন। পরে তাঁরা কান্দির পার-রষড়ায় জমিদারি পত্তন করেন। এ কারণে ৩০০ বছর আগেও পার-রষড়ার নাম ছিল সানন্দবাটি।”
জমিদারি পত্তনির সময় স্বপ্নাদেশ পেয়ে দেবীদুর্গার পুজো প্রতিষ্ঠা করেন সানন্দ ঘোষ। শাস্ত্রের বিধান মেনে ঠিকঠাক পুজো দেওয়ার জন্য ও জমিদারি পরিচালনার প্রয়োজনে অযোধ্যা থেকে কয়েক ঘর কায়স্থ, সদগোপ ও এক ঘর কুলিন ব্রাহ্মনকে নিয়ে গিয়ে পার-রষড়ায় বসতি গড়ে দেন ঘোষ জমিদাররা। ওই কুলীন ব্রাহ্মন পরিবারের বর্তমান প্রজন্মই দেবীর পুজো দেন।
রথযাত্রার দিন কাঠামো পুজো হলেও দেবীদুর্গার পুজো শুরু হয় ষষ্ঠীর ১৪ দিন আগে ঝড়-বাদলের দেবতা জীমুতবাহনের পুজো দিয়ে। স্থায়ী মন্দিরের সামনে ২ ফুট বাই ২ ফুট এলাককে ফুট খানেক গভীর গর্ত করে সেখানে বেলগাছের শাখা পোঁতা হয়। ওই বিল্ববৃক্ষরূপী দেবতাকে দু’ বেলা ষোড়শ উপাচারে ভোগ-আরতি দিয়ে পুজো করা হয়।
মৃণ্ময় ঘোষের বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুকুমার ঘোষ বলেন, “জীমুতবাহনে ওই পুজো চলে দশমী পর্যন্ত। আসলে জীমুতবাহনের পুজো থেকেই আমাদের জমিদারির দুর্গোৎসবের শুরু। শেষ হয় দশমীর ৮ দিন পর। নদী থেকে বিসর্জন দেওয়া দেবীপ্রতিমার কাঠামো ওই দিন তুলে নিয়ে গিয়ে মন্দিরের ভিতরে প্রতিষ্ঠা করা হয় ও পুজো দেওয়া হয়। তার পর সেই বছরের মতো দুর্গাপুজোয় ছেদ টানা হয়।”
তবে ২৮ দিন ধরে চতুর্ভূজা দেবীদুর্গার পুজোপর্ব চললেও চতুর্থীর দিন মন্দিরের ভিতরে নতুন করে আরও একটি ঘট প্রতিষ্ঠা করা হয় ও ষষ্ঠীর সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় দেবীর আরতি। তবে ভক্তের ভিড় সব চয়ে বেশি হয় নবমীর দিন। মৃণ্ময়বাবু বলেন, ‘‘পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের পুত্রহীনা মা পুত্রলাভের আশায় অষ্টমীর রাত থেকে উপোস শুরু করেন।
নবমীর দিন তাঁরা ভিড় জমান মন্দির চত্বরে। ওই দিন ভিড় সামল দিতে হিমসিম খেতে হয়। নবমীর দিন পুজোর পর উপোষ ভাঙেন তাঁরা। তার পর মন্দির চত্বরে পাতপেড়ে সবাইকে ওই দিন খাওয়ানো হয়।” |
|
|
|
|
|