স্কুলে চার ক্লাসে তিনি একাই শিক্ষক
তিনি একা।
পঞ্চম শ্রেণিতে বোর্ডে অঙ্ক কষতে দিয়ে এক ছুটে অষ্টম শ্রেণির ঘরে ঢুকে দেখেন সদ্য কিশোরদের প্রবল সোল্লাশ। ধমকে তাদের থামাতে না থামাতেই ষষ্ট শ্রেণির ঘর থেকে কান্নার রোল উঠল, শিক্ষক-শূন্য ক্লাশে মারপিট করতে গিয়ে দেওয়া মাথা ঠুকে গিয়েছে এক ছাত্রের।
পদ্মাপাড়ের ভগবানগোলা ২ নম্বর ব্লকের ডিহিপাড়া জুনিয়র হাইস্কুলের ১৭৫ জন ছাত্রছাত্রীকে এ ভাবেই নিত্য সামলাতে হচ্ছে তাঁকে। তিনি একা। অলোককুমার দাস।
শুধু তাই নয়, বেতন থেকে বোনাস, মিড-ডে মিলের চালের ব্যবস্থা, যাবতীয় কাজের জন্য খাতাপত্র তৈরি করে ছুটতে হয় শিক্ষা বিভাগেও। ফলে শিক্ষকের অভাবে মাস খানেক ধরে ডিহিপাড়া জুনিয়ার হাইস্কুলের পঠনপাঠন লাটে উঠেছে। কেবল ডিহিপাড়ায় নয়, খড়গ্রাম ব্লকের খরজুনা জুনিয়র হাইস্কুল ও ভগবানগোলা ২ নম্বর ব্লকের নশিপুর জুনিয়ার গালর্স হাইস্কুলেরও এক দশা।
স্যার নেই, ক্লাস-রুম এখন খেলাঘর। নিজস্ব চিত্র।
বস্তুত মুশির্দাবাদ জেলায়, ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বেশ কয়েকটি জুনিয়ার হাইস্কুলেরই চেহারাটা প্রায় একই রকম। শিক্ষকের অভাবে প্রায় বন্ধ হতে বসেছে স্কুলগুলি। জেলা বিদ্যালয় (মাধ্যমিক) পরিদর্শক শুভেন্দুবিকাশ দত্ত বলেন, “হাইস্কুলে চাকরি পাওয়ায় জুনিয়র হাইস্কুল ছেড়ে চলে গিয়েছেন বেশ কিছু শিক্ষক। বাধ্য হয়ে স্কুলগুলিতে গেস্ট-টিচার বা অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করতে বলা হয়েছে।” কিন্তু সে ব্যাপারে রয়েছে সরকারি শর্ত।
দু’টি হাইস্কুলের মধ্যে অন্তত ৪ কিলোমিটারের দূরত্ব রয়েছে, এমন এলাকায় গড়ে উঠেছে ওই জুনিয়র হাইস্কুলগুলি। সেখানে প্রথম থেকেই দু-জন অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। তবে যে কেউ নন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক যাঁদের বয়স ৬০ থেকে ৬৫ বছরে মধ্যে এবং ইতিমধ্যেই পেনশন চালু হয়ে গিয়েছে, তাঁরাই ওই শিক্ষক পদের দাবিদার।
অলোকবাবু বলেন, “দু’ জন অতিথি শিক্ষক দিয়ে ২০০৮ সালে ডিহিপাড়া জুনিয়র হাইস্কুল চালু হয়। প্রথমে আমার সঙ্গে আরও দু-জন শিক্ষক ছিলেন। তাঁরা অন্য স্কুলে চলে যাওয়ায় আপাতত আমি একাই রয়েছি। অগস্ট থেকে পঞ্চম-অষ্টম চারটি ক্লাশেই পড়াতে হচ্ছে।”সহ-শিক্ষক, পিওন, ক্লার্ক, প্রধানশিক্ষক ও ঘণ্টা বাজানো-সহ সবার ভূমিকা একা অলোকবাবুই পালন করেন। ডিহিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন লাগোয়া ৮ শতক জমিতে জুনিয়ার হাইস্কুলের ভবন তৈরির কাজ চলছে। অলকবাবু বলেন, “সেখানে ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকায় ২টি শ্রেণিকক্ষ, শৌচালয়, কিছু চেয়ার বেঞ্চ তৈরি করা সম্ভব। ফলে ৪টি শ্রেণির সব ছাত্রছাত্রীর বসার মতো ঘর ও বেঞ্চের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। নিজস্ব ভবনের অভাবে ডিহিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে সকালে জুনিয়ার হাইস্কুলের ক্লাস নেওয়া হয়। তার পর ১১টা থেকে প্রাথমিকের পঠনপাঠন শুরুর হয়। পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়াদের অংক কষতে দিয়ে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে ইতিহাস পড়াই। এ ভাবে লেখাপড়ার নামে চলছে প্রহসন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.