শর্মিলাকে বলেছিলেন ‘বাড়ি ফিরব’
সূর্য অস্ত গিয়েছে। বিকালের আলো ক্রমশ আবছা হয়ে নামছে অন্ধকার। এই আলো-আঁধারির মধ্যেই স্যর গঙ্গারাম হাসপাতাল চত্ত্বর থেকে বেরিয়ে গেল কালো রঙের গাড়িটা। জানালার সামান্য নামানো কাচের ফাঁক দিয়ে দেখা গেল সেফ আলি খান আর শর্মিলা ঠাকুরকে। দু’জনের চোখেমুখেই ধরা পড়ছে শোকের ছায়া, অসম্ভব বিপর্যস্ত। পিছনের সিটে গা এলিয়ে দেওয়া সদ্য স্বামীহারা বেগম সাহেবা কারও দিকেই তাকালেন না। সেফ তবু অপেক্ষারত সংবাদমাধ্যমের দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে জানালেন, কোনও প্রতিক্রিয়া নেই। হু হু করে বেরিয়ে গেল গাড়ি।
নবাব তখন আর নেই। গত তিন সপ্তাহের লড়াইয়ে দাঁড়ি পড়ে গিয়েছে। ফুসফুসের জটিল সংক্রমণের সঙ্গে তিন সপ্তাহ লড়াই করার পর হারতে হয়েছে মনসুর আলি খান পটৌডিকে। ভুগছিলেন অবশ্য বেশ কিছুদিন ধরেই। বিশেষ করে গত তিন মাস তো খুবই কষ্ট পাচ্ছিলেন। গত ২৯ অগস্ট পটৌডির শারীরিক অবস্থার আচমকা অবনতি ঘটায় তাঁকে তড়িঘড়ি এখানকার স্যর গঙ্গারাম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু আজ, বৃহস্পতিবার সন্ধে পাঁচটা পঞ্চান্নর সময় সব শেষ। সত্তর বছর ২৬০ দিন বয়সে।
(ফাইল চিত্র)
গত কয়েক দিন থেকেই তাঁর ফুসফুসে যথেষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ হচ্ছিল না বলে চিকিৎসকদের উদ্বেগ বাড়ছিল। আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির সাহায্যে সমস্ত রকম চেষ্টা চালানো সত্ত্বেও গত শনিবার থেকে অবস্থার ক্রমশ অবনতি ঘটতে থাকলে তাঁকে আইসিইউ-তে নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল রাত সাড়ে আটটা নাগাদ পটৌডির শ্বাসকষ্ট প্রচণ্ড রকম বেড়ে গিয়েছিল। ফুসফুস আর অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারছিল না। আস্তে আস্তে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। জ্ঞান আর ফেরেনি। আজ বেলার দিকে হাসপাতালের তরফে প্রকাশিত মেডিক্যাল বুলেটিনে জানানো হয়েছিল, পটৌডির অবস্থা সঙ্ককটজনক। এর পরে বিকেলে জানানো হয় শোক সংবাদ।
পটৌডির যে রোগে মৃত্যু হল, চিকিৎসা পরিভাষায় তার নাম ‘এডিওপ্যাথিক পালমোনারি ফাইব্রোসিস’। সেফ আলি খান বাবাকে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসার জন্য উড়িয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পটৌডির অবস্থা এতটাই সঙ্কটজনক ছিল যে চিকিৎসকেরা ঝুঁকি নিয়ে তার অনুমতি দিতে পারেননি। আইসিইউ-তে পটৌডির চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, সেই সুমিত রায় বলছিলেন, “এই রোগ ক্রমশ বেড়ে যায়। সে ভাবে এর চিকিৎসা বিশ্বের কোথাও হয় না। আমাদের এখানেই এই রোগের সেরা চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু তাতেও কিছু হল না।” পটৌডির ফুসফুসের অক্সিজেন গ্রহণ ক্ষমতা বেশ কিছু দিন থেকেই কমে আসছিল। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, একটা সময় নাকি তাঁর ফুসফুস প্রতিস্থাপনের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু সেটা করা সম্ভব হয়নি।
মৃত্যুর সময় পটৌডির পাশে ছিলেন তাঁর স্ত্রী শর্মিলা ঠাকুর, ছেলে সেফ আলি খান, সোহা আলি খান। এর ঠিক আগেই পটৌডির সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন করিনা কপূর। তাঁকে হাসপাতালের বাইরে পর্যন্ত পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন পটৌডির বড় মেয়ে সাবা। ফিরে এসে দেখেন বাবা আর নেই। এ দিকে, গভীর রাত পর্যন্ত ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কোনও প্রতিনিধি বা কোনও ক্রিকেটারকে স্যর গঙ্গারাম হাসপাতাল চত্ত্বরে দেখা যায়নি। দিল্লিতে পটৌডির বসন্তবিহারের বাসভবনেও কেউ যাননি। ফোনেই শোকবার্তা জানিয়েছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানানো হয়েছে, পটৌডির মরদেহ আজ রাতে হাসপাতালের মর্গে রাখা থাকবে। আগামিকাল মরদেহ হরিয়ানার পটৌডিতে তাঁর পারিবারিক বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। পটৌডি নাকি শেষ ইচ্ছায় তাঁর পরিবারকে বলে গিয়েছেন, তাঁকে যেন তাঁর বাবা এবং মায়ের পাশেই সমাহিত করা হয়।
তবে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময়েও তিনি বাড়ি ফিরে যেতে পারবেন বলেই আশা করেছিলেন পটৌডি। স্ত্রী শর্মিলাকে বলেওছিলেন, “তুমি এত ভয় পাচ্ছ কেন? আমি ঠিক বাড়ি ফিরে যাব।” কিন্তু বাড়ি ফেরা আর হল না টাইগারের।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.