|
|
|
|
‘সব ক্যাপ্টেনই টাইগারের দেখানো রাস্তায় হেঁটেছে’ |
সব্যসাচী সরকার • কলকাতা |
সন্ধেয় হাঁটতে বেরিয়ে বাড়ি ফিরেই টিভির খবরে দেখলেন টাইগার নেই। তার পর থেকে মুম্বইয়ে
তাঁর
ওরলির স্পোর্টসফিল্ডের বাড়িতে তারপর থেকে ফোন বেজেই চলেছে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার
আনন্দবাজারের
সঙ্গে কথা বললেন ভারত অধিনায়ক হিসেবে মনসুর আলি খান পটৌডির উত্তরসূরি অজিত ওয়াড়েকর। |
কী মনে হচ্ছে?
ওয়াড়েকর: বিশ্বাস হচ্ছে না। মাস ছয়েক আগেও দিল্লিতে দেখা হয়েছিল। একটা চ্যানেলে আমাদের দু’জনের ইন্টারভ্যু হয়েছিল। বেরনোর সময় টাইগার বলেছিল, মাঝে মাঝে ফোন কোরো। ওই শেষ দেখা। আজ যখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিক্রিয়া চেয়ে গাদা গাদা ফোন আসছে, বারবার শুধু ওর কথা বলতে হচ্ছে, মাঝে মাঝেই আবেগ গ্রাস করছে। ৭০ কি খুব বেশি বয়স? ও বলেছিল ফোন করতে। কেন যে এতদিনে একটা ফোন করিনি টাইগারকে!
এই আইপিএলের যুগে কেন তাঁকে মনে রাখবে এই প্রজন্ম?
ওয়াড়েকর: এক কথায়, ভারতীয় ক্রিকেটে ভারতীয়ত্ব আনার জন্য। চামড়ার রঙ সাদা না হলেও যে ক্রিকেটে জেতা যায়, এই ভাবনাটা ওর আমলেই এসেছিল। আমরা পরের ক্যাপ্টেনরা আসলে ওর দেখানো রাস্তাতেই হেঁটেছি। সবাই। ভারতের প্রথম আধুনিক ক্যাপ্টেন বলতে ওই। আরও দুটো ব্যাপার আছে। ফিল্ডিংটা ওর সময়েই আমাদের দেশে প্রথম গুরুত্ব পায়। আর সবচেয়ে জরুরি হল, স্পিনার দিয়ে টেস্ট জেতার ফর্মূলাটা ওরই আবিষ্কার।
ভারতীয় ক্রিকেটের প্রথম ‘স্টাইল আইকন’, তার উপর নবাব। ক্যাপ্টেন্সির সময় নবাবি চালচলন অগ্রাধিকার পায়নি?
ওয়াড়েকর: না। নবাবি চালচলন নিয়ে নানারকম ধারণা ভারতীয় ক্রিকেটে প্রচলিত, কিন্তু ক্রিকেটটা যখন খেলেছে, টাইগার ছিল আপাদমস্তক পেশাদার। সেখানে নবাবি আচরণ নয়, ছিল পেশাদারিত্ব। প্রথাগত কোচিংয়ে বিশ্বাসী ছিল না। মনে করত জাতীয় দলে যখন কেউ সুযোগ পেয়েছে, যোগ্যতা আছে বলেই পেয়েছে। মনে করত, জোর করে বা বুঝিয়ে কিছু হয় না। হলে আপনা থেকেই হবে। ওয়েলিংটনে আমার প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির সময় টাইগার ছিল ক্যাপ্টেন। অসম্ভব ঠাণ্ডা আবহাওয়া, বল যথেচ্ছ সুইং করছিল। নামার আগে টাইগার বলেছিল, “অজিত, তোমাকে বলার কিছু নেই। ক্রিকেটটা তুমি আরও অনেকের চেয়ে ভালই খেলো। যেটা পারো, সেটাই মাঠে করে দেখাও।” |
|
পুরনো অ্যালবাম থেকে: রাজ্যপাল এ এল ডায়াসের সঙ্গে
পটৌডি (বাঁ দিকে) এবং ওয়াড়েকর। ছবি:পাহাড়ী রায়চৌধুরী |
’৭১-এর ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ইংল্যান্ড সফরে আপনি যখন ক্যাপ্টেন হলেন, রাজনীতির কথা তুলে সরে দাঁড়িয়েছিলেন টাইগার...
ওয়াড়েকর: মজার গল্পটা তা হলে বলি। সেবার দল নির্বাচনের আগের দিন আমি টাইগারকে বলেছিলাম, তুমি ক্যাপ্টেন হলে আমাকে টিমে রেখো। টাইগার হেসে বলেছিল, “আমি তো বলব, তুমি ক্যাপ্টেন হলে আমাকে টিমে রাখতে ভুলো না।” পরের দিন যখন আমাকে ক্যাপ্টেন ঘোষণা করা হল, আমি ওকে ফোন করে বলেছিলাম, টাইগার তুমি আমার টিমে থাকবে। ও হ্যাঁ বলেছিল। পরের দিন সকালেই ও আমাকে ফোন করে বলল, ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ইংল্যান্ড সফরে যাবে না! বলেছিল, ক্রিকেটে প্রচুর রাজনীতি হচ্ছে, কিছুদিন ক্রিকেট থেকে সরে থাকতে চায়। আগের দিন যাব বলে এক রাতের মধ্যে কেন সিদ্ধান্ত বদল করেছিল, আজও জানি না। মনে হয়েছিল, আমার অধিনায়কত্বে খেলতে আপত্তি নেই তো? পরে বুঝেছি, সেরকম কিছু ছিল না। কারণ ’৭১-এ ওয়েস্ট ইন্ডিজে সিরিজ জেতার পরে টাইগার ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছিল। বলেছিল, ‘গ্রেট ক্যাপ্টেন্সি অজিত, কিপ ইট আপ।’ পরে ও আমার নেতৃত্বে ’৭৩-এ ইংল্যান্ড সফরে খেলেওছে।
তা হলে আপনাদের দু’জনের মধ্যে একটা ইগোর লড়াই ছিল?
ওয়াড়েকর: না না, ইগোর লড়াই নয়, মাঠের রেষারেষি। যদ্দূর মনে পড়ছে, প্রথম ওর বিরুদ্ধে খেলেছিলাম মইন-উদ-দৌল্লা ট্রফিতে। আমি স্টেট ব্যাঙ্কের ক্যাপ্টেন, ও হায়দরাবাদের কোনও একটা টিমের। জয়সীমা ছিল আমাদের দু’জনেরই বন্ধু। দলীপ ট্রফিতে দক্ষিণাঞ্চল-পশ্চিমাঞ্চল ম্যাচেও বিপক্ষ ক্যাপ্টেন হিসেবে ওকে পেয়েছি। মাঠে ধূর্ততম অধিনায়ক, কভারে ক্ষুধার্ত বাঘের মতো দাঁড়িয়ে থাকত। ম্যাচ শেষে একেবারে অন্য মানুষ। ড্রেসিংরুমের বাইরের বারান্দায় বসে বিপক্ষ ক্যাপ্টেনের সঙ্গে ক্রিকেটাড্ডায় ডুবে যেতে পারত। বিখ্যাত দুষ্টুমি ভরা রসবোধ। এটা অবশ্য ভিশি ভাল বলতে পারবে।
গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ?
ওয়াড়েকর: হ্যাঁ ভিশিকে খুব ভালবাসত টাইগার, ওকে নিয়ে মজাও করত। একবার কলকাতায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালটা দেখিয়ে ও ভিশিকে বলেছিল, ওটা আমার শ্বশুরবাড়ি, সন্ধেবেলায় চলে এসো। তা ভিশি সেজেগুজে সন্ধেবেলায় ভিক্টোরিয়ায় চলেও গিয়েছিল। ওটা যে টাইগারের শ্বশুরবাড়ি নয়, সেটা ভিশিকে বোঝাতে ভিক্টোরিয়ার নিরাপত্তা কর্মীদের বেশ সময়ই লেগেছিল শুনেছি। আমার সঙ্গে অবশ্য এরকম বিদঘুটে কিছু কখনও করেনি। |
|
|
|
|
|