পঞ্চায়েতে আসা বন্ধ করে দিলেন আরও এক প্রধান
‘নিরাপত্তার অভাব’ বোধ করায় পঞ্চায়েত অফিসে আসা বন্ধ করে দিলেন খানাকুল ১ ব্লকের আরও এক প্রধান। এর আগে ঠাকুরানিচক পঞ্চায়েতের প্রধান একই কারণ দেখিয়ে দফতরে আসছিলেন না। বৃহস্পতিবার থেকে কিশোরপুর-২ পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের শিখা কারকও একই পদক্ষেপ করলেন।
বুধবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত তৃণমূলের নেতৃত্বে সিপিএমের ওই মহিলার প্রধান-সহ পঞ্চায়েত সদস্য, কর্মীদের ঘেরাও করে রাখা হয়। অভিযোগ, অশ্রাব্য গালিগালাজ করা হয় তাঁদের। অফিসে তালা মেরে দেওয়া হয়। শিখাদেবী এ দিন বলেন, “নিরাপত্তার অভাব বোধ করেই অফিসে যাওয়া বন্ধ করতে হল। দিন কুড়ি আগেও তৃণমূলের নেতৃত্বে পঞ্চায়েত অফিসে হামলা হয়েছিল। তারপর দিন সাতেক অফিস যাইনি। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন বিডিও। পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনের উপরে ভরসা করেই ফের অফিসে আসতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু বুধবার চরম লাঞ্ছিত হতে হয়েছে আমাকে এবং দফতরের বাকিদের।” প্রধানের অভিযোগ, তাঁর মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। আগের ঘটনায় এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ-প্রশাসন। ফের এ ধরনের ঘটনা ঘটায় তিনি আর দফতরে আসবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
খানাকুল ১ বিডিও সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আগের ঘটনায় নির্দিষ্ট কয়েক জনের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। বুধবারের ঘটনা বিস্তারিত জানতে কর্মীদের ডেকেছি। এ ক্ষেত্রেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে বলা হবে।” এ ব্যাপারে আরামবাগের নবনিযুক্ত এসডিপিও আকাশ মাগারিয়া বলেন, “আইনি ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সমস্ত রকম আসামাজিক কাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই রাজনৈতিক অশান্তি চলছে খানাকুলে। এখানে সব ক’টি পঞ্চায়েতই বাম পরিচালিত। বেশির ভাগ প্রধান, সদস্যেরা দফতরে আসছিলেন না। অনেকে আবার ঘরছাড়া। সর্বদল বৈঠক ডেকে, নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে অনেককে ধীরে ধীরে কাজে ফেরানো হচ্ছে। কিন্তু ঠাকুরানিচক এবং কিশোরপুর ২ পঞ্চায়েতের ঘটনা সেই পদক্ষেপকে অনেকটা পিছিয়ে দেবে বলে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের আশঙ্কা। আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “পঞ্চায়েতের বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণে সমস্যা হচ্ছে। মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ বাড়ছে। পঞ্চায়েতগুলিতে পরিষেবা স্বাভাবিক করতে গ্রামের মানুষ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা, অংশগ্রহণ জরুরি।” সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনা বসা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
বুধবারের ঘটনা প্রসঙ্গে দলের কর্মী-সমর্থকদের পক্ষ নিয়ে খানাকুলের তৃণমূল নেতা গোপাল মাইতি বলেন, “প্রতি দিন শ্রমিকেরা একশো দিনের কাজ বাবদ প্রাপ্য বকেয়া চাইতে এসে খালি হাতে ফিরছিলেন। সামনে পুজো। শ্রমিক পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে ওই টাকাটা জরুরি। টাকা পরিশোধ করতে পঞ্চায়েত কোনও উচ্চবাচ্য করছে না দেখে একটু চাপ সৃষ্টি করতেই বিক্ষোভ হয়েছে।” গোপালবাবুর কথায়, “নির্মাণ সহায়ক অপূর্ব পরামানিক বন্যার সময়ে জরুরি ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করালেন। এখন টাকা চাইতে গেলে বলছেন, কে কাজ করতে বলেছে!” এ বিষয়ে অপূর্ববাবুর বক্তব্য, আমাদের কোনও কথা বলার সুযোগই দেওয়া হয়নি। শুধু মারব, কাটব বলে হুমকি দিয়েছে। পঞ্চায়েতে তালা মেরে নোংরা গালিগালাজ করেছে।” অপূর্ববাবু বলেন, “আমার নির্দেশে কিছু কাজ অবশ্যই হয়েছে। তবে আমি বলার চেষ্টা করেছিলাম, সরকারি নিয়ম মেনে আগের কাজ বাবদ যাঁরা টাকা পান, তাঁদের আগে টাকা দেওয়া হবে। বাকিদের বকেয়া পর্যায়ক্রমে মেটানো হবে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, কিশোরপুর ১ পঞ্চায়েতে ২০১০-১১ সালে একশো দিনের কাজ বাবদ শ্রমিকদের বকেয়া প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। বন্যাকালীন যে কাজের মজুরি নিয়ে বুধবার গোলমালের সূত্রপাত, সেই সংক্রান্ত কোনও সঠিক কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। যতটুকু হিসেব দেখানো হয়েছে, সেখানেও প্রাথমিক ভাবে বিস্তর গড়মিল চোখে পড়েছে প্রশাসনের। বিডিও জানান, কাজের তদন্ত হবে। প্রকল্পের টাকা যেমন আসছে, তেমন শোধ করা হবে। এ দিকে, গড়মিলের অভিযোগ প্রসঙ্গে পঞ্চায়েতের সহায়ক (সচিবের দায়িত্বপ্রাপ্ত) নির্মলচন্দ্র মালিক বলেন, “ওই সব কাজের বেশির ভাগ পঞ্চায়েতকে জানিয়ে করা হয়নি।” এ দিকে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে হুমকি, ভয় দেখানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে দলের নেতা শৈলেন সিংহ বলেন, “কোথাও যাতে শান্তি বিঘ্নিত না হয়, সে দিকে আমরা নজর রাখছি। প্রধান, পঞ্চায়েত সদস্যদের নির্ভয়ে কাজে আসতে বলা হয়েছে। কিন্তু ওঁরা বামফ্রন্টের আমলে নানা দুনর্ীর্তিতে জড়িয়ে ছিলেন। এখন মানুষ সে সব নিয়ে প্রশ্ন করছে। জনরোষের ভয় পাচ্ছেন ওঁরা।” সিপিএমের খানাকুল জোনাল কমিটির নেতা ভজহরি ভুইঁঞা বলেন, “মানুষ বুঝতে পারছে, কাদের হাতে রাজ্য শাসনের দায়িত্ব দিয়েছে। এ ভাবে একের পর এক পঞ্চায়েতকে অচল করে কার লাভ হচ্ছে, সেটা মানুষই বুঝে নেবেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.