কাজ শেষ করে দিয়ে গেলেন ‘জটায়ু’।
বুধবার সারাদিন ধরে ‘রয়্যাল বেঙ্গল রহস্য’-র ডাবিং করে রাতে বাড়ি ফিরেছিলেন। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ হাওড়ার মহেন্দ্র ভট্টাচার্য রোডের বাড়িতেই মৃত্যু হল বিভু ভট্টাচার্যের। বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। তাঁর স্ত্রী, এক ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছেন। ফেলু-তোপসে-জটায়ু ত্রিমূর্তিকে নিয়ে আর
ছবি হবে কি, বাঙালি দর্শকের মনে এই প্রশ্নই ঘুরছে এখন।
আর ফেলুদা করবেন না, জানিয়েছিলেন সব্যসাচী চক্রবর্তী। সন্দীপ রায় বলে দিয়েছিলেন, ২০১২-য় আর ফেলুদা নয়। ‘রয়্যাল বেঙ্গল রহস্যে’র পর ফেলুদা সিরিজ কী হবে, তাই নিয়ে জল্পনা চলছিলই। সব্যসাচী ফেলুদা করা ছেড়ে দেবেন শুনে বিভু বলেছিলেন, তিনিও তা হলে আর জটায়ু করবেন না। ‘রয়্যাল বেঙ্গল রহস্য’ সত্যিই তাঁর শেষ জটায়ু হয়ে রইল। “উনি যে এই রকম ভাবে আমাদের শোকস্তব্ধ করে চলে যাবেন, ভাবতেই পারছি না!” বললেন বিভুর ‘ফেলুবাবু’ সব্যসাচী।
এর আগে সন্তোষ দত্ত, রবি ঘোষ, অনুপকুমার জটায়ু চরিত্রে অভিনয় করতে করতে মারা গিয়েছেন। সন্দীপ রায়ের কথায়, “জাগতিক নিয়মে সেই ফাঁক ভরাট করে অন্য শিল্পী এসেছেন। আসবেন। তবে বিভুবাবুর চলে যাওয়ায় এই মুহূর্তে যে শূন্যতা তৈরি হল, তা অপূরণীয়।” বিভু ভট্টাচার্যের সঙ্গে সন্দীপ রায়ের আলাপ ১৯৯৬ সালে। তখন বিভু ছোট পর্দার জন্য তরুণ মজুমদার পরিচালিত ‘চিরকুমার সভা’য় অভিনয় করছেন। সেই দেখেই জটায়ুর চরিত্রের জন্য সন্দীপ বিভুকে নেওয়ার কথা ভাবেন। এর পর ছোট পর্দার ফেলুদা সিরিজে ‘জাহাঙ্গিরের স্বর্ণমুদ্রা’ ও ‘গোলাপি মুক্তা রহস্য’-য় জটায়ু চরিত্রে অভিনয় করেন বিভু। তার পরেই বড় পর্দায় ‘বোম্বাইয়ের বোম্বেটে’ ছবিতে জটায়ু হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ। তার পর একে একে ‘কৈলাসে কেলেঙ্কারি’, ‘টিনটোরেটোর যীশু’, ‘গোরস্থানে সাবধান’, ‘রয়্যাল বেঙ্গল রহস্য’।
১৯৪৯ সালে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ‘মাস্টার বিভু’ নামে অভিনয়ের শুরু। ‘ধ্রুব’, ‘প্রহ্লাদ’, ‘জয়দেব’, ‘হরিশচন্দ্র’-র মতো ৬০টি ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছেন। অহীন্দ্র চৌধুরী, ছবি বিশ্বাস, শিশির ভাদুড়ির সঙ্গেও কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু বাঙালির কাছে বিভুর প্রধান পরিচয় জটায়ু হিসেবেই। তাঁর চলে যাওয়াতে কি খানিকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ল ফেলুদা সিরিজের ভবিষ্যৎ? সন্দীপ রায় বলছেন, “এমনিতেই ২০১২-তে ফেলুদা করব না ঠিক করেছিলাম। বেশ কিছুটা সময় দরকার ফেলুদা সিরিজের নতুন টিম সাজাতে। অন্তত বছর দুয়েক। ফেলুদা সব্যসাচী, জটায়ু বিভু আর তোপসে সাহেব ভট্টাচার্যের যে রসায়ন জমে উঠেছিল, সে রকম কিছু তৈরি করতে বেশ খানিকটা সময়ের ব্যবধান প্রয়োজন। একমাত্র তোপসে চরিত্রে সাহেব ভট্টাচার্য বহাল থাকছে। বাকি দু’জনকে ভেবেচিন্তে নির্বাচন করতে হবে।” |