রাজ্যপাট টিকিয়ে রাখতে হবে তো! তাতে যদি স্ত্রীকেও মসনদে বসাতে হয়, তাতেও আপত্তি নেই। কিন্তু সেই স্ত্রীও তো ছিল না। অগত্যা তড়িঘড়ি বিয়েটাও সেরে ফেলতে হল। পাঁজিতে বিয়ের দিন নেই তো কি! মন্দিরে গিয়ে মালাবদল করেই সমস্যার সমাধান।
ভারতে রাজাদের যুগ বহুকাল আগেই শেষ। কিন্তু সিওয়ানের অজয় সিংহের কাছে ‘রাজাসম’ খোদ মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। কে এই অজয়? তিনি সিওয়ান জেলার দওরান্দা আসনের প্রয়াত বিধায়ক জগমাতো দেবীর একমাত্র ছেলে। মাস কয়েক আগে মারা গিয়েছেন দু’বারের বিধায়িকা জগমাতো দেবী। এখন অজয় চান সেই শূন্য আসনে দাঁড়াতে। কিন্তু মুশকিল হল, ‘রাজা’ নীতীশ কুমার একেবারেই পছন্দ করেন না অজয়কে। অতীতে খুন-সহ একাধিক অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে অজয়ের বিরুদ্ধে। তাই সিওয়ানের বাহুবলী নেতা শাহবুদ্দিনের চরম শত্রু বলে পরিচিতি থাকলেও ‘দাগি’ অপরাধীকে প্রার্থী করে নীতীশ কোনও মতেই নিজের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে রাজি নয়। |
২০০৫ সালে সিওয়ানের কুখ্যাত অপরাধী এবং শাহবুদ্দিনের শাগরেদ আয়ুব খানের বাবা কামরুদ্দিনকে হারিয়ে বিধায়ক হন জগমাতো। জগমাতোর স্বামী পেশায় কৃষক মালেশ্বর সিংহ খুন হন আয়ুব খানের সঙ্গীদের হাতেই। অজয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বাবার মৃত্যুর পরে এই শত্রুতার জেরে তার হাতে মৃত্যু হয় শাহবুদ্দিনের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী রিয়াজুদ্দিনের। এর পরেও একাধিক খুনের ঘটনায় জড়িয়ে যায় অজয়ের নাম। ‘রাজা’ নীতীশের অপছন্দের কথা জেনে ফ্যাসাদে পড়ে যান অজয়। সঙ্কট কাটাতে শুভানুধ্যায়ীরা পরামর্শ দেন, উপায় একটাই আছে। একটা বিয়ে করে ফেলা। স্ত্রীকে প্রার্থী করতে মনে হয় নীতীশ আপত্তি করবেন না। সে ক্ষেত্রে বকলমে রাজ্যপাটও হাতে থাকবে। আর এ ক্ষেত্রে লালু-রাবড়ীর দৃষ্টান্ত তো আছেই।
পরামর্শটা মনে ধরে অজয়ের। হাতে সময়ও নেই। ২৩ তারিখ দওরান্দা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনের মনোনয়নের দিন নির্ধারিত। বিয়ের পিঁড়িতে বসার জন্য উঠেপড়ে লাগেন অজয়। ঘোষণা করে দেওয়া হল, পাত্রীর বয়স ২০ বছরের উপরে হতে হবে। ভোটার আইডি কার্ড এবং ভোটার তালিকায় নাম থাকা অত্যাবশ্যক। শেষ পর্যন্ত নির্বাচিত হলেন মুখিয়া-কন্যা কবিতা দেবী।
পাত্রী চূড়ান্ত হওয়ার পরেও বাধা। পিতৃপক্ষ চলছে, বিয়ের দিনই নেই। কিন্তু রাজ্যপাট রক্ষায় গত শনিবার সিওয়ানেরই এক মন্দিরে বিয়েটা সেরে ফেলেন অজয়। বিয়ের পরে পাক্কা নেত্রীর মতো কবিতা বলছেন, “সুযোগ পেলে আমি শ্বাশুড়ির স্বপ্নপুরণ করব।’’
আর অজয় পুরো কাণ্ডের দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন ‘রাজা’, অর্থাৎ নীতীশ কুমারের ঘাড়ে। বলছেন, “রাজা যে বললেন, শাদি করলে টিকিট মিলবে। তাই করেই ফেললাম।”
পাত্রী মিলেছে। টিকিটটা মিলবে কিনা সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন! |