ভূমিকম্পের প্রাথমিক ধাক্কা বেশ কিছুটা সামলে নিয়েছে দার্জিলিং পাহাড়-সহ উত্তরবঙ্গ। কিন্তু সিকিমে জনজীবন এখনও স্বাভাবিক হয়নি।
বৃহস্পতিবার মঙ্গনের রাস্তা খুললেও চুংথামের কয়েকটি এলাকায় পাহাড়ের উপরে জমে থাকা জল নেমে আসায় ভেসে গিয়েছে চারটি বাড়ি ও দু’টি গাড়ি। ক্ষতি হয়েছে রাস্তারও। সেনাবাহিনী সূত্রে জানানো হয়েছে, চুংথাম, চ্যাটেন, পেগং, তেং এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে আরও ৪২ জন আহতকে উদ্ধার করে হেলিকপ্টারে শিলিগুড়ির বেংডুবি সেনা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে, রাতে সিকিমে তিস্তা প্রকল্পের একটি জলাধার থেকে জল ছাড়া হতে পারে বলে আশঙ্কায় মালবাজার-সহ জলপাইগুড়িতে সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন।
এ দিন সিকিমে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। সকালে বাগডোগরায় নেমে হেলিকপ্টারে গ্যাংটকে পৌঁছে হাসপাতালে দুর্গতদের সঙ্গে দেখা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিংয়ের থেকে বিশদে খোঁজখবর নিয়ে কেন্দ্রের তরফে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেন। চিদম্বরম বলেন, “ইতিমধ্যেই সিকিমে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত দু’টি রিপোর্ট কেন্দ্র পেয়েছে। উদ্ধার, ত্রাণ ও পুনর্গঠনের জন্য জরুরি ভিত্তিতে সিকিম সরকারকে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।” এখনও উত্তর সিকিমের ৯টি গ্রাম বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তবে সেই সব এলাকায় দ্রুত পৌঁছনোর কথা সেনাবাহিনী আমাকে জানিয়েছে।” এ দিন দুপুরেই তিনি বাগডোগরা হয়ে দিল্লিতে ফেরেন। |
জলপাইগুড়ির বিভাগীয় কমিশনারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দার্জিলিং জেলায় বাড়ি ভেঙেছে ২৮০০টি। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৫২ হাজার বাড়ির। জলপাইগুড়ি জেলায় ওই সংখ্যা যথাক্রমে ৪৮০ ও ৭ হাজার। ভূমিকম্পের ফলে উত্তরবঙ্গে মৃত্যু হয়েছে মোট ১০ জনের। কালিম্পঙে ৪ জন, রায়গঞ্জে ২ জন, জলপাইগুড়ি, ইসলামপুর, কার্শিয়াং ও শিলিগুড়িতে এক জন করে মারা গিয়েছেন। কোচবিহারের রাজবাড়িতেও বেশ কয়েকটি জায়গায় বিক্ষিপ্ত ভাবে ফাটল ধরায় উদ্বিগ্ন এএসআই। এএসআই সূত্রে জানা গিয়েছে, সব মিলিয়ে প্রাসাদ জুড়ে অন্তত ৫০টি ফাটল লক্ষ করা গিয়েছে।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভূমিকম্প দুর্গতদের জন্য কালিম্পং ও কার্শিয়াংয়ে প্রায় ২০টি ত্রাণশিবির চালানো হচ্ছে। ফাটল ধরে বিপজ্জনক হয়ে ওঠায় কালিম্পং, কার্শিয়াং ও দার্জিলিংয়ের বেশ কিছু ভবন খালি করে দেওয়া হয়েছে। শিলিগুড়িতেও বেশ কিছু বাড়ি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরীক্ষা করেছেন। গোটা জেলায় ৫০ হাজারের উপরে মানুষ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন জানান, ২৬ সেপ্টেম্বর রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে দার্জিলিংয়ে যাবেন।
সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পুজোর সময়
উত্তর সিকিমে পর্যটকদের যেতে বারণ করেছেন। তবে বাস্তবে লা চুং ও লা চেন এলাকার সব কিছু যে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয়নি, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে সিকিম সরকার। এ দিন বায়ুসেনার হেলিকপ্টার থেকে ওই দুই এলাকার ছবি তোলা হয়। সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, দু-তিন সপ্তাহের মধ্যেই সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। উত্তর সিকিমের বদলে পুজোয় উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও সমতলে যে পর্যটকদের ভিড় বাড়বে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। সে কথা মাথায় রেখে উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও সমতলের রাস্তাঘাট সারানোর কাজে জোর
দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী। সেই সঙ্গে বন ও পর্যটন দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের কাজও তিনি করছেন। |