সময় এল কাছে... নারী প্রকৃতি থেকে
হুসেনের ‘কলকাতা’
ভ্যস্ত নিয়মে পুজো আসে প্রতিবার। থিম থেকে সাবেক নতুনকে খোঁজার এক নিরন্তর প্রয়াস চলতেই থাকে। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী মণ্ডপগুলোর ভিড় মেপে যাচাই হয় কোন পুজো শ্রেষ্ঠ। ইঁদুর দৌড়ে পিছিয়ে পড়তে চান না উদ্যোক্তা থেকে দর্শনার্থী কেউই। এই লড়াইটাই আরও উস্কে দেয় সৃষ্টিশীলতাকে।
মুদিয়ালির ‘শারদীয়া সম্মিলনী’ এ বছর দর্শনার্থীদের নিয়ে যাচ্ছে যশোহর জেলার মহারাজ প্রতাপাদিত্যের ফেরিঘাটে। মূল মণ্ডপ বজরার আকারে। সাবেক প্রতিমা আর মানানসই আলোয় জমিদার বাড়ির পরিবেশ। পুজো মানেই সাত দিন আগে থেকে কানে বাজতে থাকে ‘যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা’। মা দুর্গার এই শক্তিরূপ, পুরাণ মতে যার সৃষ্টি বা বিনাশ নেই তা-ই আকার পাচ্ছে ‘ভিআইপি নগর সর্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি’র মণ্ডপে।
কলকাতার মণ্ডপ ভাবনায় প্রতি বছরই থাকে নানা প্রদেশের মন্দির। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। ভবানীপুরের ‘সম্মিলনী’ তৈরি করছে কোভালামের শান্তাদুর্গা মন্দির। ‘চিড়িয়ামোড় সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি’-তে আবার ছত্তীসগঢ়ের বেচেলির শিবমন্দির। শিবলিঙ্গের আদলে তৈরি মণ্ডপটি হবে গোলাকার। ভিতরে দেবদেবীর মূর্তি। ‘পার্ক সার্কাস সর্বজনীন দুর্গোৎসব’-এর মণ্ডপ সাজবে বৌদ্ধ মন্দিরের গড়নে। বেতের কাজের সঙ্গে থাকবে সাবেক একচালার প্রতিমা। ‘বাগবাজার পল্লিপূজা ও প্রদর্শনী’ ৮৪তম বছরে উমাকে আপন করে নিতে বেছে নিয়েছে আটচালা ও শিবমন্দিরের পরিবেশ। মণ্ডপসজ্জা ও প্রতিমা পরিকল্পনা জুড়ে থাকবে গ্রামবাংলার পল্লিসংস্কৃতির ছোঁয়া।
নতুন সৃষ্টির সঙ্গে বহমান থাকে পুরনোর চোরা স্রোত। সেই স্রোতে গা ভাসিয়েছে ‘খিদিরপুর ভেনাস ক্লাব’।
এক উদ্যোক্তা জানালেন, প্রথম থেকেই এই পুজো অকালবোধনকে অনুসরণ করছে। মা এখানে বরাভয়রূপে বিরাজমান। তাকে ঘিরে গণেশ-লক্ষ্মীদের বদলে রামচন্দ্র, লক্ষ্মণ ও হনুমানের মূর্তি।
সৃষ্টির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত নারী। তাই প্রকৃতির নারীসত্ত্বাই সনাতন দিন্দার হাত ধরে একটু একটু করে ফুটে উঠছে ‘নলিন সরকার স্ট্রিট সর্বজনীন দুর্গোৎসব’-এর পুজোয়। দেবী এখানে প্রকৃতি। তাঁর কাছে নিজেকে সমর্পণ করছে অসুররূপী পুরুষ।
নতুনের পথে হাঁটতে বাগমারির ‘১৪-র পল্লি সাধারণ দুর্গোৎসব’-এ মানুষ ও অন্যান্য জীবের সহাবস্থান। চোরা শিকারীদের হাতে ক্রমাগত ‘খুন’ হওয়ায় বহু পশুপাখির অস্তিত্ব আজ সঙ্কটে। দুর্গার আগমনে সেই অসুররূপী শিকারীদের বিনাশে পৃথিবী আবার সকলের বাসযোগ্য হয়ে উঠুক, এ পুজোয় তারই প্রতিফলন।
সৃষ্টির অন্য পিঠেই থাকেন শিল্পী। তাঁর ছোঁয়াতেই আনকোরা খোলস ছেড়ে প্রকাশিত হয় সৃষ্টি। তেমনই এক শিল্পী যাঁর তুলির আঁচড়ে কথা বলে উঠত ক্যানভাস, বিতর্ক যাঁর সারাজীবনের ছায়াসঙ্গী, সেই মকবুল ফিদা হুসেনের আঁকায় ফুটে ওঠা ‘কলকাতা’ই ‘সাধনা সঙ্ঘ’-এর থিম। এক উদ্যোক্তা জানালেন, শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতেই এই প্রয়াস।
লড়াই চলতে থাকে। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী। তার পর? প্রতিযোগিতা, মানুষের ঢল, হুল্লোর নিভে আসে। ভাসান যায় প্রতিমা। মণ্ডপে দাঁড়ানো প্রতিটা হৃদয়ে তখন ‘আসছে বছর আবার হবে’।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.