শহরে রাজনৈতিক হোর্ডিং নিয়ন্ত্রণে সর্বদলীয় বৈঠক করে ইতিমধ্যেই এক ধাপ এগিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এ বার বাণিজ্যিক হোর্ডিং নিয়ন্ত্রণেও নির্দিষ্ট নীতি প্রণয়ন করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সেই ভাবনা কার্যকর হলে তা হবে কলকাতার ঘরবাড়িগুলিকে এক রঙে সাজিয়ে তোলার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
শহরের মুখ বিজ্ঞাপনে ঢেকে দেওয়া আটকাতে ধর্মতলা-বিবাদী বাগ চত্বরকে হোর্ডিং-মুক্ত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করেছে কলকাতা পুরসভা। হেরিটেজ এলাকা বলে চিহ্নিত ওই জায়গায় কোনও রকম বাণিজ্যিক হোর্ডিং লাগানো নিষিদ্ধ হয়েছে। যে সব হোর্ডিং ছিল, তা খুলে নেওয়া হয়েছে। যদিও দৃশ্যদূষণ ঘটিয়ে এখনও ঝুলছে হোর্ডিংয়ের খাঁচাগুলি। পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী মমতার সাম্প্রতিক নির্দেশে বিমানবন্দর থেকে শহরের প্রবেশপথেও হোর্ডিং নিয়ন্ত্রিত হবে।
কিন্তু এর বাইরে শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় যত্রতত্র হোর্ডিং ঝুলে থাকলে সামগ্রিক ভাবে দৃশ্যদূষণ এড়ানো যে সম্ভব নয়, এটাও মুখ্যমন্ত্রীর চিন্তার কারণ। বিষয়টি নিয়ে তাঁর ক্ষোভ জানিয়ে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন সম্প্রতি মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন। তাতেও সরকার কিছুটা বিব্রত। তাই মুখ্যমন্ত্রী অবিলম্বে শহর জুড়ে বাণিজ্যিক হোর্ডিং নিয়ন্ত্রণে একটি অভিন্ন নিয়ম চালু করতে চান। সে ক্ষেত্রে সরকারের নীতি কার্যকর করা পুরসভার পক্ষেও সহজ হবে। |
বুধবারই শহরের হোর্ডিং নিয়ন্ত্রণে একটি বৈঠক হয়। সেখানে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, কলকাতার মেয়র শোভনবাবু এবং পুর ও নগরোন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন দফতরের পদস্থ অফিসারেরা ছিলেন। পরে শতাধিক হোর্ডিং সংস্থার প্রতিনিধিরাও পুরমন্ত্রী এবং মেয়রের সঙ্গে কথা বলেন। হোর্ডিং নিয়ন্ত্রণে ‘বাড়াবাড়ি’ হলে তাঁদের ব্যবসার ক্ষতি হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন কেউ কেউ। তবে ওই বৈঠক থেকে সিদ্ধান্তমূলক কিছু বেরিয়ে আসেনি। ওই দিনই সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হোর্ডিং নিয়ন্ত্রণে তাঁর ভাবনাচিন্তার কথা জানিয়ে মেয়রকে এ বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ার নির্দেশ দেন।
সাধারণ ভাবে হোর্ডিংকে তিনটি ভাগে ভাগ করতে চান মুখ্যমন্ত্রীরাজনৈতিক হোর্ডিং, সরকারি হোর্ডিং এবং বাণিজ্যিক হোর্ডিং। শহর জুড়ে যেখানে সেখানে রাজনৈতিক হোর্ডিং-ব্যানার-পোস্টার না-লাগানোর বিষয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে মোটামুটি ঐকমত্যের সুর পাওয়া গিয়েছে। তারই ভিত্তিতে মমতা চান, শহরে ১৪টি জায়গা নির্দিষ্ট করে সেখানে বড় বড় বোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হবে। যে কোনও রাজনৈতিক দল তাদের কর্মসূচি প্রচারে ওই বোডর্র্গুলি ব্যবহার করতে পারবে। এক দলের পালা শেষ হলে অন্য দল একই ভাবে ওই সব বোর্ড ব্যবহার করবে। কিছু বোর্ড নির্দিষ্ট থাকবে সরকারি বা পুরসভার প্রচারের জন্য। বাকি হোর্ডিংগুলি হবে বাণিজ্যিক।
মুখ্যমন্ত্রী প্রাথমিক ভাবে যা ভেবেছেন, তাতে বাণিজ্যিক হোর্ডিংগুলি দেখতে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। কোনও হোর্ডিংই চওড়া, অর্থাৎ আড়াআড়ি লাগানো যাবে না। লাগাতে হবে লম্বালম্বি। হোর্ডিংয়ের আকার এবং তা লাগানোর ক্ষেত্রে উচ্চতার দিকটিও নিয়ন্ত্রণ করা হবে। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট আকারের চেয়ে বড় হোর্ডিং করা চলবে না। বিজ্ঞাপনদাতারা নির্দিষ্ট উচ্চতার বাইরে গিয়ে তা লাগাতেও পারবেন না। মমতার মতে, এ ভাবে সব দিক নিয়ন্ত্রণ করলেই হোর্ডিংয়ের ‘যথেচ্ছাচার’ বন্ধ করে দৃশ্যদূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
শহরের ঘরবাড়িগুলিকে আকাশ-নীল রঙে সাজিয়ে তুলতে তাঁর ইচ্ছার কথা আগেই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার সঙ্গে মিল রেখে তিনি হোর্ডিংয়ের রঙেও যত দূর সম্ভব আকাশ-নীলকে প্রাধান্য দিতে চান। তবে কোনও সংস্থা বা সামগ্রীর পরিচিতিতে অন্য কোনও রং আবশ্যিক হলে সেটি বিবেচনা করা যেতে পারে বলে তাঁর অভিমত। |