গতিবেগ নিয়ন্ত্রণই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
আর সেই জন্যই বুধবার দুপুর তিনটে নাগাদ বাগডোগরা থেকে কলকাতার আকাশে এসেও প্রথমে নামতে পারেনি জেট এয়ারওয়েজ-এর ওই বিমান। যার ৯০ জন যাত্রীর মধ্যে ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাথমিক তদন্তে প্রকাশ, যান্ত্রিক ত্রুটিই ওই বিভ্রাটের জন্য দায়ী।
বুধবার বিকেলে আকাশে প্রায় আধ ঘণ্টা চক্কর কাটার পরে কলকাতায় নেমে মুখ্যমন্ত্রী ‘চক্রান্তের’ অভিযোগ তুলেছিলেন। বুধবার রাতেই মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে ফোন করে কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মার কাছে ঘটনার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল। এবং রাতেই তদন্তের ঘোষণা হয়। কথা ছিল, এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) তদন্ত করবে। কিন্তু ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে বৃহস্পতিবার তদন্তে নেমেছে ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)। এটিসি-র সঙ্গে জেটের ওই পাইলটের কথোপকথনের টেপ আর বিমানের ককপিটে রেকর্ড করা তথ্যাদিও চেয়ে পাঠানো হয়েছে।
কেন চক্কর কাটতে হয়েছিল? বিমান পরিবহণে যুক্ত অফিসারদের একাংশের বক্তব্য: নামার মুখে বেগতিক দেখে বিমান নিয়ে আবার উড়ে যাওয়াটা বিরল নয়। প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, বুধবার দুপুরে ঠিক সেটাই ঘটেছিল। এক অফিসারের কথায়, “বিমানবন্দরের আট-দশ কিলোমিটার দূরে প্রায় দু’হাজার ফুট উচ্চতায় এসে পাইলট যখন জানান তিনি নামতে চান, অনেক সময়েই দেখা যায় আকাশে তিনি ভুল ‘পজিশনে’ রয়েছেন। যেখান থেকে নেমে এলে গতি নিয়ন্ত্রণের আগেই বিমান রানওয়ে ছাড়িয়ে চলে যেতে পারে। ঠিক যে ভাবে গত বছরের মার্চে ম্যাঙ্গালোরে ১৫২ জনের প্রাণ গিয়েছিল।”
আর নামার মুখে মুখে প্রতি বারই ‘পজিশন’ খতিয়ে দেখে পাইলট বা এটিসি-অফিসারেরা ভুল শুধরে নেন বলে এই মহলের দাবি। তখন পাইলটকে এক চক্কর কেটে এসে নামতে হয়। প্রাথমিক তদন্ত-রিপোর্ট বলছে, মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে বুধবার বাগডোগরা থেকে ফেরার সময়ে জেটের পাইলট ঠিক তা-ই করেছেন। যদিও এ দিন এ প্রসঙ্গে বিমানসংস্থাটির বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কিন্তু বিমানবন্দর-সূত্রের খবর: ভুল অবস্থানের জন্য নয়, বুধবার জেটের বিমানটি নামার আগে ফের উড়ে গিয়েছিল যান্ত্রিক সমস্যারই কারণে। এই মহলের মতে, ককপিটের কন্ট্রোল প্যানেলে গণ্ডগোল দেখা দিয়েছিল। নামার মুখে পাইলট দেখতে পেয়েছিলেন, তিনি গতি সামলাতে পারছেন না। বিমানের ডানায় থাকা ‘ফ্ল্যাপ’ (যা গতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে) কোনও কারণে কাজ করছিল না। সেই সময়ে বিমানটি উড়ছিল ঘণ্টায় প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার বেগে। তখন পাইলট মুখ ঘুরিয়ে উড়ে না-গেলে ওই গতিবেগেই রানওয়েতে নেমে আসতে হত। রানওয়ে ছোঁয়ার পরেই তিনি গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। এক পাইলটের কথায়, “তাতেও হয়তো অসুবিধা হতো না। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটি না-সারিয়ে নেমে এলে ডিজিসিএ তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে পারত।”
উড়ন্ত বিমানের ছোটখাটো যান্ত্রিক বিভ্রাট অনেক ক্ষেত্রেই পাইলট ককপিটে বসে শুধরে নিতে পারেন। বড় সমস্যা হলে এটিসি-র সাহায্য চাইতে হয়। কলকাতা বিমানবন্দরের এটিসি-অফিসারদের দাবি, সেই জন্যই বুধবার দুপুরে জেটের পাইলটের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি কোনও সাহায্য চান কি না। পাইলট ত্রুটি শুধরে নিয়ে বলেছিলেন, সাহায্য লাগবে না। এটিসি-র আরও দাবি: ত্রুটি যে বিমানেই হয়েছিল, তা আরও পরিষ্কার হয়ে যায় বুধবার সন্ধ্যায় ওই একই বিমানের গুয়াহাটি থেকে এসে কলকাতায় নামার সময়ে। তখনও বিমানটিতে একই সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তাই সন্ধে ৭টা ৪২ মিনিটের পরিবর্তে এক চক্কর কেটে বিমানটি কলকাতার মাটি ছোঁয় ৮টা ৩ মিনিটে। |