পাঁচ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি রাস্তা ও সেতু সেজেগুজে তৈরি। অথচ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কারণ, খালপাড়ের দখলদার।
ইএম বাইপাসের কালিকাপুর থেকে ‘পূর্বদিগন্ত’ ও যাদবপুর স্টেডিয়ামের পিছন দিয়ে বছর দুই আগে ৯০০ মিটার দীর্ঘ ও প্রায় ২৪ ফুট চওড়া রাস্তাটি তৈরি করা হয়েছে। এর জন্য কেএমডিএ খরচ করেছে প্রায় ২ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা।
দেখা গেল, রাস্তাটি ব্যবহারের উপযোগী করতে সংলগ্ন খালের উপর একটি ছোট সেতু করতে হবে। প্রায় তিন কোটি টাকা দিয়ে তৈরি হল ২৪ মিটার দীর্ঘ ও ৭.২ মিটার চওড়া ওই সেতু। কিন্তু সেতুর আশপাশে কিছু দখলদার জায়গা ছাড়তে চাইছেন না।
নয়া সেতুর কাছেই রাস্তার দু’ধারে রেস্তোরাঁ, মুদির বা মনোহারি জিনিসের দোকান। রাস্তা সরু হয়ে গিয়েছে। সেতু খুলে দিলে গাড়ির চাপে অচল হয়ে পড়বে অপরিসর রাস্তাটি। তাই গাড়ির জট ঠেকাতে সেতু আটকে দেওয়া হয়েছে বাঁশ ও একটি রোলার দিয়ে। কেএমডিএ-র সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার প্রতাপ রায় বলেন, “আমরা তো দখলদার সরাতে পারব না! কলকাতা পুরসভার মেয়র এলাকা ঘুরে গিয়েছেন। দেখা যাক!”
একই রকম অসহায় কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের (কেইআইপি) কর্তাব্যক্তিরা। কারণ, কোটি কোটি টাকা খরচ করে তাঁরা খালপাড়ের দখলদারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছেন। তাঁরা না সরায় লাগোয়া খাল সংস্কারের কাজ মার খাচ্ছে। কেইআইপি-র স্পেশ্যাল অফিসার কল্যাণ ঘোষ বলেন, “যেখানে নয়া সেতু চালু করা যাচ্ছে না, কেবল তার সংলগ্ন ৩০ জন দখলদারকে ফ্ল্যাট দেওয়া হয়েছে। ওঁরা অধিকাংশই ওই ফ্ল্যাটের দখল নিয়েছেন। অথচ দখল করা জায়গা ছাড়ছেন না।” খালপাড়ের এই তল্লাটের দখলদারদের তুলতে পরিকল্পনা হয়েছিল ১১ বছর আগে। কেএমডিএ-র সমীক্ষার পর ওঁদের সচিত্র পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। নামমাত্র টাকার বিনিময়ে দেওয়া হয় পরিবর্ত বাসস্থান।
স্থানীয় অর্থাৎ পুরসভার ১০৯ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএমের রুমকি দাস বলেন, “আমরাও অসহায়। ওই দখলদারদের তুলতে আমি আর ১০৩ ও ১০৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মেয়র-পারিষদ দেবব্রত মজুমদারের সঙ্গে বৈঠকে বসেছি। দখলদারদের আমরা অনুরোধ করেছি সরে যেতে। কিছুতেই সরছে না।” ১০৪ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূল কংগ্রেসের তারক চক্রবর্তী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে আমরা খালপাড় থেকে নিজেদের দলীয় অফিস ভেঙে দিয়েছি। এক দল ছেলে কাছেই অপর একটি জায়গা দখল করে পার্টি-অফিস করতে গিয়েছিল। সেটাও আটকে দিয়েছি। দেখা যাচ্ছে, বলপ্রয়োগ না-করলে দখলদার হঠানো যাচ্ছে না।”
পরিবর্ত জায়গা পাওয়া সত্ত্বেও কেন দখল করা জায়গা ছাড়বেন না, তা স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না দখলদারেরা। ওঁদের এক জনের বক্তব্য, “নোনাডাঙার যেখানে ফ্ল্যাট হয়েছে, সেখানে তো ব্যবসা চলবে না!” কিন্তু গায়ের জোরে সরকারি জমির দখল রেখে উন্নয়নের কাজ আটকে এই ব্যবসার ছাড়পত্র কে দিয়েছে? ওঁদের এক জন জানান, “আমরা চাই, কাছেই কোথাও দোকানের জায়গা দেওয়া হোক। মেয়রের কাছে এই আর্জিও জানিয়েছি।”
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, আমরা উচ্ছেদ বা বলপ্রয়োগ করতে চাইছি না। কারও রুজি যাতে মার না-খায় সেই চেষ্টা অবশ্যই করব। এই সঙ্গে এটাও জানাতে চাই দখলদারদের জন্য উন্নয়নের কাজ মার খাবে, সেটাও হবে না। আশা করি ওঁরা এটা অনুভব করবেন।” |