মায়ের ইচ্ছেতেই তিনি ভবানীপুরে প্রার্থী হয়েছেন বলে ভোট-প্রচারের শেষ লগ্নে জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই বিধানসভা কেন্দ্রের খিদিরপুরে বৃহস্পতিবার প্রচারসভায় মমতা বলেন, “আমার মা চেয়েছিলেন, এখান থেকে উপ নির্বাচনে লড়ি। তিনি আমাকে বলেছিলেন, তুই তো অনেক জায়গাতেই প্রার্থী হোস। এ বার বাড়ির কাছে দাঁড়া।”
তবে মায়ের ইচ্ছার পাশাপাশি তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি তথা পূর্তমন্ত্রী সুব্রত বক্সির ‘অনুরোধ’ও যে তাঁর ভবানীপুরে প্রার্থী হওয়ার পিছনে কাজ করেছে, তা-ও এ দিন ওই সভাতেই জানিয়েছেন মমতা। প্রসঙ্গত, বিধানসভা নির্বাচনে সুব্রতবাবুই ভবানীপুরে প্রার্থী হয়ে জিতেছিলেন। তিনি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়াতেই মমতা সেখানে প্রার্থী হতে পেরেছেন।
এ দিন খিদিরপুরের ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডে ইব্রাহিম রোড এবং সুধীর বসু রোডের মোড়ে প্রচারসভায় এবং তার আগে সন্ধ্যায় প্রচার-মিছিলে সিপিএমকে তুলোধোনা করেন মমতা। প্রথম দিনের প্রচারে যা তিনি খুব বেশি করেননি। খিদিরপুরের সভায় মমতা অভিযোগ করেন, “৩৫ বছরে একটা সরকার কিছুই করেনি। উল্টে ২ লক্ষ ৩ হাজার কোটি টাকা ধার করে গিয়েছে। পুলিশে লোক নিয়োগ করেনি। হাসপাতালে ডাক্তার নেই। আইএএস অফিসারের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। ৩৫ বছরে সিপিএমের বাবুরা কোনও পরিকাঠামো গড়ে যাননি। তাই ওঁদের বলছি, এখন দশ বছর চুপচাপ ভাল ছেলে হয়ে বসে থাকুন।” পাশাপাশিই, মুখ্যমন্ত্রীর চ্যালেঞ্জ, “সিপিএমের কমরেডরা ভেবেছিল, আমাকে কাজ করতে দেবে না। কিন্তু ওরা বুনো ওল হলে আমি বাঘা তেঁতুল।” |
প্রসঙ্গত, খিদিরপুরের যে ওয়ার্ডে মমতা এ দিন সভা করেছেন, তা বামফ্রন্ট শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের দখলে। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ শম্ভুনাথ পণ্ডিত স্ট্রিটে সিপিএমের কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল শুরুর আগেও মমতা বলেন, “সিপিএম ৩৫ বছর ধরে প্রশাসনে কেবল নিজেদের দলের লোকই ঢুকিয়েছে। চূড়ান্ত অসহযোগিতার মধ্যে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে।” খিদিরপুর সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চল। সেই কারণে সেখানে সরকারের সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রকল্পগুলিও উল্লেখ করেন মমতা।
ভবানীপুরের ‘ঘরের মেয়ে’ মুখ্যমন্ত্রী হয়ে গত চার মাসে কী করেছেন, তার খতিয়ান এ দিন প্রচার-মিছিল শুরুর আগেও পেশ করেছেন মমতা। তিনি বলেছেন, “গত চার মাসে ২ লক্ষ ৩১ হাজার কর্মসংস্থান করেছি। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম থেকে পাহাড় নিয়ে নির্বাচনে যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তা পালন করেছি। বাংলাকে আমরা পুরনো গৌরব ফিরিয়ে দিতে পারবই।” রাজ্যে বিধানসভা ভোট শেষ হয়েছে মাত্র চার মাস আগে। এর মধ্যেই উপ নির্বাচনের জন্য ফের জনতার দরবারে আসতে হওয়ায় তাদের কাছে এ দিনও ‘কৈফিয়ৎ’ দেন মমতা। বলেন, “রাজ্যে ভূমিকম্প হয়ে গিয়েছে। এত বৃষ্টি হচ্ছে যে, চার দিকে বন্যার পরিস্থিতি। সারা দিন ধরে কাজ করে যেটুকু সময় পাচ্ছি, তার মধ্যেই আপনাদের কাছে আসছি। চার মাস আগেই আপনারা ভোট দিয়েছেন। তখন আমি বলেছিলাম, আমরা সরকারে এলে আমি সেই সরকার চালানোর দায়িত্ব নেব এবং নির্বাচিত হয়ে আসব। আমরা সরকারে এসেছি। ছ’ মাসের মধ্যে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। তাই আমি আপনাদের কাছে ভোট চাইতে এসেছি। জানবেন, আপনাদের এক-একটা ভোটের মূল্য অনেক।” প্রসঙ্গত, আগামী রবিবার ভবানীপুর এবং বসিরহাট উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে উপ নির্বাচন। আজ, শুক্রবার ওই দুই কেন্দ্রেই প্রচারের শেষ দিন।
এ দিন মমতার মিছিল শুরুর সময় দলে দলে মানুষ তাঁর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কোনও রকমে ভিড় কাটিয়ে মিছিল শুরুর স্থলে চলে যান মমতা। এবং মাইক হাতে নিয়ে বলেন, “আমরা এমন ভাবে মিছিল করব, যাতে অর্ধেক রাস্তা ফাঁকা থাকে এবং গাড়ি যাতায়াত করতে পারে।” শম্ভুনাথ পণ্ডিত স্ট্রিট, কুণ্ডু রোড, কাংসারি পাড়া, দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ রোড পেরিয়ে মিছিল হরিশ মুখার্জি রোডে পড়লে দেখা যায়, রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র এবং বিধায়ক তাপস রায় সেখানে যান নিয়ন্ত্রণ করছেন!
মিছিলে ছিলেন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী, কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায়, সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার, রাজ্যের মন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার, রচপাল সিংহ, আব্দুল করিম চৌধুরী, সুব্রত বক্সি, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সুব্রত সাহা, সাবিত্রী মিত্র। মিছিলে শিখরাও অংশ নেন। পটুয়া পাড়া, গোপালনগর রোড, চেতলা হাট রোড হয়ে আলিপুর রোডে শেষ হয় মিছিল। প্রসঙ্গত, ৪৮ ঘণ্টা আগেই ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে বামফ্রন্ট প্রার্থী সিপিএমের নন্দিনী মুখোপাধ্যায়ের সমর্থনে রোড শো করে গিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু তিনি কোনও বক্তৃতা করেননি। মমতা-মিছিল শেষের পর তৃণমূলের নেতারা বলছেন, “সিপিএম এখন এলে দেখতে পেত সংগঠিত মিছিলের সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্ত জনজোয়ারের তফাৎ কোথায়!” |