তামড়া খয়রাশোলের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। এই গ্রামের দুর্গা পুজো বলতে সরকার পরিবারের শতাব্দী প্রাচীন পুজো। পারিবারিক পুজো হলেও গ্রামের সকলেই তাতে মেতে ওঠেন।
এই পর্যন্ত গল্পটা আর পাঁচটা গ্রামের পুজোর সঙ্গে মেলে। যে বৈশিষ্ট্যের জন্য তামড়া গ্রামের এই পুজো আলাদা তা হল- সপ্তমীর দিন সকালে নবপত্রিকাকে স্নান করিয়ে দোলায় দুর্গা মন্দিরে নিয়ে আসা হয়। তার পরে সন্ধিপুজো না হওয়া পর্যন্ত ঢাক বাজানো বন্ধ থাকে। শুধু ঢাক নয়, মাইক বাজানো বা পটকা ফাটানো নিষিদ্ধ। এ ছাড়া, সন্ধি পুজোর চাল কুমড়ো বলি দেওয়ার আগে পর্যন্ত গ্রামের গৃহস্থরা বটি ব্যবহার করেন না। এই সব রীতি বছরের পর বছর চলে আসছে বলে জানালেন তামড়া গ্রামের নীচু পাড়ার বাসিন্দারা ও সরকার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু কেন এই নিয়ম করা হল? কেউ স্পষ্ট ভাবে জানাতে পারেননি।
|
খয়রাশোল ব্লকের পারশুণ্ডি পঞ্চায়েত এলাকার এই গ্রামে ৮০০-১০০০ মানুষের বাস। উপরপাড়া, মাঝপাড়া, নীচুপাড়া এবং বাউরি-এই চারটি পাড়া রয়েছে। এই গ্রামের রাস্তা মাটির। যোগাযোগ ব্যবস্থাও উন্নত নয়। তবে পুজোর কটা দিন গ্রামের এই সরকার পরিবারের পুজোকে ঘিরে আনন্দে মেতে ওঠেন সকলেই। সরকার পরিবারের সদস্যরা কাজের সূত্রে গ্রামের বাইরে থাকেন। পালা করে পরিবারের শরিকেরা পুজোর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ বার পুজো পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন রামনারায়ণ সরকার। তাঁরা বর্তমানে বর্ধমানের জামুড়িয়ায় থাকেন। মন্দিরটি গ্রামের নীচুপাড়ায় আছে। কার্যত পুজোর সময় গোটা তামড়া গ্রামের মধ্যে নীচু পাড়ার প্রায় ৪০০ জন বাসিন্দা বেশি যুক্ত পুজোর সঙ্গে। একটি শরিক বাদ দিয়ে বাকি সব শরিকের আর্থিক অবস্থা ভাল। তাই পুজো পরিচালনা করতে সমস্যা হয় না। নবমীর দিন গ্রামের সব বাসিন্দাকে ডেকে খিচুড়ি খাওয়ান পুজোর দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা।
নীচু পাড়ার বাসিন্দা কুমারিশ মণ্ডল, সনথ ঘোষ, বন্দনা মণ্ডল, সন্ধ্যা ঘোষরা বলেন, “ষষ্ঠীর দিন রাতেই পরের দু’দিনের রান্নার জন্য সব্জি বা ফলমুল কেটে রাখা হয়। সপ্তমীর সকালে দোলা আসার পর থেকে ঢাক বাজে না। পটকা ফাটে না। এই নিয়ম দীর্ঘদিন ধরে আমরা দেখে আসছি।” এ বার পুজোর দায়িত্বপ্রাপ্ত রামনারায়ণ সরকারের ছেলে স্বপন সরকারের কথায়, “কাজের সূত্রে আমরা জামুড়িয়ায় থাকি। পঞ্চমীর দিন আমরা বাড়ি গ্রামের বাড়িতে ফিরি। কিন্তু দুর্গা পুজোকে ঘিরে যে রীতি-নীতি চালু আছে, সেগুলি কে কবে কী কারণে চালু করেছিলেন জানি না।” একই বক্তব্য আর এক শরিক আরতি সরকারেরও। তিনি গত বার পুজোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
তবে রীতি-রেওয়াজ নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে পুজোর কটা দিন আনন্দ করতে তৈরি গোটা গ্রাম। |