ইউরোপের আর্থিক সঙ্কট
সহযোগিতার হাত বাড়াতে নারাজ চিন
ফের চিন-ভারত টানাপোড়েনের ক্ষেত্র তৈরি হল।
দক্ষিণ চিন সাগরে ভিয়েতনামের দু’টি ব্লক থেকে ভারতের তেল উত্তোলন নিয়ে গত ক’দিন ধরে বেজিংয়ের সঙ্গে দিল্লির টানাপোড়েন যখন তুঙ্গে, তখন ওয়াশিংটনে দু’দেশের মধ্যে নতুন করে রেষারেষির ক্ষেত্র তৈরি হল। এ বারের বিষয়টি অর্থনৈতিক।
ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে গঠিত ব্রিকস-এর অর্থমন্ত্রীদের মহাসম্মেলন আজ আমেরিকার রাজধানীতে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই কার্যত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেল পাঁচ দেশের এই সংগঠনটি। এবং এ ক্ষেত্রে অভিযোগের আঙুল চিনের দিকেই। ব্রাজিলের দাবি ছিল, পর্তুগাল, আয়ার্ল্যান্ড, ইতালি, গ্রিসের মতো দেশগুলির রুগ্ণ দশা কাটাতে ব্রিকস একটা জোরদার চেষ্টা করুক। আর তা হল, ব্রিকসভুক্ত দেশগুলি যে যার সাধ্য মতো কিনে নিক এই ‘দুঃস্থ’ দেশগুলির বিভিন্ন সরকারি বন্ড। এক কথায়, এ ভাবেই কিছু টাকা পাইয়ে দেওয়া যাক সঙ্কটাপন্ন ওই দেশগুলিকে। বিদেশি মুদ্রার পাহাড়ের উপর বসে থাকা চিন এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা নিক, এমনটাই চেয়েছিল ভারতও। সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে কোনও সহযোগিতার পথেই হাঁটছে না বেজিং। বরং এই বিষয় নিয়ে ব্রিকস-এর তৈরি করা রিপোর্টটিও বর্তমান আলোচ্যসূচির বাইরে রাখতে অনুরোধ করেছে তারা। এ ক্ষেত্রে রাশিয়াকেও পাশে নিয়েছে তারা। ভারত মনে করছে, বহুপাক্ষিক মঞ্চে যৌথ ভাবে কিছু করার ক্ষেত্রে চিনা নেতৃত্বের উদাসীনতাই ফুটে উঠেছে। অভিযোগ, অন্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে কিছু করার চেয়ে দ্বিপাক্ষিক ভাবে সংশ্লিষ্ট দেশের বাজার ধরা তথা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাই বেজিংয়ের আসল উদ্দেশ্য।
চলতি সফরে আমেরিকায় পা দেওয়া ইস্তক কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় বারবারই বলছেন, ইউরো-জোন তথা আন্তর্জাতিক আর্থিক সঙ্কট থেকে মুক্তির জন্য সব দেশগুলির মিলিত ভাবে চেষ্টা করার কথা। তাঁর বক্তব্য, জি-২৪, জি-২০ বা ব্রিকস-এর মতো বহুপাক্ষিক মঞ্চই পারে সেই
সূত্রের সন্ধান করতে। অভিযোগ, কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বেজিংয়ের ভূমিকা যথেষ্ট নেতিবাচক।
প্রকাশ্যে অবশ্য চিনা নেতৃত্বের তরফে নয়াদিল্লিকে জানানো হয়েছে যে, ইতিমধ্যেই আমেরিকায় মন্দার জেরে তাদের হাত পুড়েছে। বড় হারে আর কোনও ঝুঁকিপূর্ণ বন্ড তারা কিনতে চায় না। বরং সেই টাকা দিয়ে দেশের মানুষের উন্নয়ন করতে চায়। অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, “চিনের বিপুল বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ের (৩ লক্ষ ২০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার) তুলনায় ভারতের সঞ্চয় অতি নগন্য। মাত্রই ৩২ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। ইউরো সঙ্কট কাটাতে হলে যে বিপুল আর্থিক প্যাকেজ প্রয়োজন, তা স্বাভাবিক ভাবেই ভাবেই চিনের সক্রিয় এবং প্রধান সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়।”
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানীতে গত বছর জি-২০ সম্মেলনও চিন এবং আমেরিকার পারস্পরিক রেষারেষির জেরে কার্যত পণ্ড হয়ে গিয়েছিল। মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ে সরাসরি আমেরিকাকে আক্রমণ করেছিল চিন। এই বছরের গোড়ায় আইএমএফ প্রধানের পদে দমিনিক স্ত্রাউস কান-এর পরিবর্ত খোঁজার ব্যাপারেও সমস্যা বাধিয়েছিল চিন। অভিযোগ, এ বারেও গোড়া থেকেই আন্তর্জাতিক মন্দা পরিস্থিতি নিয়ে নিষ্পৃহ হয়ে রয়েছে তারা। নয়াদিল্লির এক শীর্ষ পর্যায়ের নেতার কথায়, “ওরা কখনওই নিজেদের তাস দেখাতে চায় না। এই ধরনের বড় আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের ভাবনা-চিন্তা স্পষ্ট করতে চায় না। তার কারণ হল, প্রবল অর্থনৈতিক শক্তি থাকার সুবাদে বাজারের নাড়ি টিপে দেখে তার পর সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ায় ওরা। ফলে ব্রিকস হোক বা জি-২০ চিনের কাছ থেকে কোনও সহযোগিতার সম্ভাবনা নেই।”
নয়াদিল্লির বক্তব্য, ‘দুঃস্থ’ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কিছু বন্ড চিন ইতিমধ্যেই কিনেছে। বহুপাক্ষিক মঞ্চে সহযোগিতার কথাও বলেছে। কিন্তু সে সব নিছকই ‘কথার কথা’। আগামী মাসে জি-২০ভুক্ত দেশগুলির বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হবে প্যারিসে। সেই বৈঠকের চেয়ারম্যান ভারতের অর্থমন্ত্রী। তার আগে ইউরো-সঙ্কট থেকে উদ্ধারের একটি রাস্তা তৈরি হোক, এমনটাই চাইছেন প্রণববাবু। আর তার কূটনৈতিক কারণ হল, এই মঞ্চের মাধ্যমে ইউরোপীয় দেশগুলির আর্থিক সঙ্কট কাটাতে কিছু করা সম্ভব হলে এশিয়ার শক্তি রাজনীতিতে ভারতের নেতৃত্ব অনেকটাই দৃঢ় হবে। চিনের কাছে যা আদৌ অভিপ্রেত নয়। তারা নিজেদের অর্থভাণ্ডারের জোরে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে আলাদা ভাবে সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়। যা তারা অনেকটাই করেও ফেলেছে। এক সরকারি কর্তার কথায়, “এ ভাবেই আমরা অনেকটা জায়গা হারিয়েছি। মাঝখান থেকে চিন ইউরোপের ঘনিষ্ঠ হয়ে গিয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.