স্মৃতিতে খেজুরি, ওঁরা আঁকছেন মুক্তি
মাসের পর মাস ত্রাণশিবিরে কেটেছে ওঁদের আতঙ্কের দিন-রাত। এখন একটু একটু করে ওঁরা ফুটিয়ে তুলছেন মুক্তির ছবি।দারিদ্র্য থেকে মুক্তি। পরনির্ভরতা থেকে মুক্তি। পুরুষতন্ত্র থেকে মুক্তি।
ওঁরা এসেছেন খেজুরি থেকে। পূর্ব মেদিনীপুরের সেই খেজুরি, নন্দীগ্রামে রক্ত ঝরার সঙ্গেই সঙ্গেই যেখানকার বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছিল বারুদের গন্ধ। সেখানেই শ্যামচক গ্রামে বাড়ি ওঁদের বারো জনের। গত এক মাস ধরে বর্ধমান শহরে বড়নীলপুরের মণ্ডপে পাট, খড় আর মাটি নিয়ে ওঁরা কাজ করে চলেছেন নীরবে।
ওঁদেরই তিন জন দিলীপ মাইতি, কার্তিক মিদ্দ্যা, অরুণ বেরার কথায়, “গত কয়েক বছর আমরা প্রায় কাজই করতে পারিনি। রাজনৈতিক গোলমালের জেরে অনেককে কাটাতে হয়েছে ত্রাণশিবিরে। প্রাণ হাতে করে কেটেছে দিন-রাত। ইচ্ছে থাকলেও পুজোয় কাজ নেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। অথচ এই রোজগারেই বছরভর পেট চলে আমাদের। এখন পরিস্থিতি একটু শান্ত। তাই উদ্যোক্তারা ডাকতেই সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দিয়েছি।’’
হালকা-গাঢ় রঙা পাটের আঁশে শিল্পীরা এখন ফুটিয়ে তুলছেন স্বনির্ভর মেয়েদের কথা। গত ১১ সেপ্টেম্বর মুর্শিদাবাদের লালগোলায় ব্যাঙ্কের অনুষ্ঠানে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যাদের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। উঠে আসছে সেই ছবি। আসছে বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের উদ্গাতা মহম্মদ ইউনূসের ‘মাইক্রো ফিনান্স’-এর কথাও। মহিলারা ব্যাঙ্কে গিয়ে লাইন দিয়ে ঋণ নিচ্ছেন, তার পরে নানা জিনিস গড়ে বিক্রি করছেন। তাঁদের সংসারে হাসি ফুটছে। বড়নীলপুর ফ্রেন্ডস ক্লাবের পুজো কমিটির সম্পাদক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কী গ্রাম, কী শহর সব জায়গায় পুরুষেরা সামান্য রোজগারও নেশা করে উড়িয়ে দেয়। কিন্তু স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা প্রতিটি পয়সা বাড়ি নিয়ে যান। তাঁর শুধু আয়ই করেন না, সম্পদসৃষ্টিরও চেষ্টা করেন। সরকারি স্তরেও এঁদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।”
এই প্রসঙ্গেই এসেছে ছোট ছোট ঋণের প্রসঙ্গও। যে সব সরকারি ঋণ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠী দিনবদলের অনুচ্চার অথচ সুদূরপ্রসারী কাজ শুরু করে দিয়েছে। মহিলাদের দেওয়া ব্যাঙ্কঋণ গত এক দশক ধরেই গ্রামীণ মহাজনিতন্ত্রকে ক্রমশ দুর্বল করছে। ধীর তার গতি, কিন্তু অমোঘ। একই সঙ্গে ভেঙে দিচ্ছে পুরুষনির্ভর সমাজ ও অর্থনীতির ছক।
তবে শুধু এই সাধারণ অথচ অনন্যসাধারণ মানবীরাই নন।
মণ্ডপে থাকছেন সনিয়া গাঁধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাষ্ট্রপতি প্রতিভা দেবীসিংহ পাতিল, লোকসভার স্পিকার মীরা কুমার, বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার সোনালী গুহের মতো কর্মজগতে সফল মহিলারা।
থাকছেন পাটের দুর্গাও। তিনিও তো অসুরনিধনে সফল। এবং মহিলাও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.