দরজায় ছোট্ট মেয়েটিকে দেখে অবাক হয়েছিলেন বাড়ির কাজের লোক। সাজগোজ করে আসা মেয়ের আব্দার, “তোমার বাবুর সঙ্গে দেখা করতে চাই।”
খবর গেল অন্দরে। কর্তা বেরিয়ে এসে দেখেন, কেউ কোথাও নেই। পড়ে রয়েছে একটি কাঁঠাল পাতা। তাতে শ্বেতচন্দনে লেখা, ‘আমার পুজো কর। পরিবারের মঙ্গল হবে।’ জনশ্রুতি, এ ভাবেই দেবীর আদেশ পেয়েছিলেন কালনা ২ ব্লকের মিরহাট গ্রামের সর্বেশ্বর দে।
সাবেক জমিদার বাড়ির আদলে তৈরি দে পরিবারের পুজোবাড়ি। ঢোকার মুখে ২০ ফুট লম্বা কাঠের কালো দরজা। ভিতরে কংক্রিটের মন্দিরের গায়ে অজস্র কারুকাজ। চার দিক ঘেরা ভবনের দোতলায় ছাদে আগে টাঙানো হত সামিয়ানা। বাড়িতে রয়েছে কাছারি বাড়ি, ভোগ রান্নার ঘর, পুজো পরিচালনার জন্য আলাদা ঘর। যদিও এখন ফাটল ধরেছে। |
পরিবারের সদস্যেরা জানান, ছয় পুরুষ ধরে পুজো চলছে। প্রথমে পদবি দে থাকলেও পরে চৌধুরী উপাধি মেলে পরিবারের। একচালার এই প্রতিমা আগে পুজো হত তালপাতার ছাউনিতে। প্রায় দু’শো বছর আগে শ্রীনাথ দে চৌধুরী মন্দির তৈরি করেন। বর্তমানে তিন শরিক পালা করে পুজোর আয়োজন করেন। পুজো হয় বৈষ্ণব মতে। ষষ্ঠীর দিন বাড়ির বধূরা পান-সুপারি দেন গ্রামবাসীকে। রীতি অনুযায়ী সপ্তমীর সকালে কুলদেবতা শ্রীধর ও ধান দিয়ে তৈরি দেবী লক্ষ্মীকে আনা হয় মণ্ডপে। দশমীর রাতে পরিবারের সদস্যদের মতো গ্রামবাসীও শুদ্ধাচারে কলাপাতায় লেখেন দেবীর নাম। তা ভাসিয়ে দেওয়া হয় জলে।
এক সময়ে এই পুজোর জন্য প্রচুর ভূসম্পত্তি বরাদ্দ ছিল। পরিবারের সদস্য রামকৃষ্ণহরি দে জানান, এখন পুকুর ও আমবাগানের আয়েই পুজো হয়। তবে তাতেও সঙ্কটে পড়লে নিজেদের চাঁদা দিতে হয়। বাড়ির বধূ করবী দে জানান, এক সময়ে যাত্রা, থিয়েটার, পালাগানের আসর বসত। দোতলায় পর্দার আড়াল থেকে মহিলারা দেখতেন। এখন আর সে সব হয় না।” আগে বাড়িতে আদিবাসী নৃত্যেরও আয়োজন হত। তা-ও এখন বন্ধ, জানালেন কাঞ্চনলতা দে চৌধুরী। কৌলিন্য হয়তো কমেছে, তবু দে বাড়ির পুজোর জন্যই গ্রামবাসী এখনও অপেক্ষা করেন সারা বছর। গ্রামের কালীপদ বৈরাগ্যের কথায়, “দে বাড়ির ঢাকের আওয়াজ শোনার অপেক্ষাতেই থাকি সবাই।” |