সরকারি চাল বিলি নিয়ে গোলমালের জেরে বর্ধমানের ভাতারে জখম হয়েছেন এক মহিলা-সহ ১৩ জন। সকলেই তৃণমূল কর্মী-সমর্থক।
বৃহস্পতিবার সকালে ভাতারের খাঁড়জুলি গ্রামে ওই সংঘর্ষ হয়। আহতদের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এর মধ্যে আবু বক্কার ও শেখ হাবিবুল নামে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তৃণমূলের অভিযোগ, সিপিএম এবং আরএসপি-র লোকজন তাদের উপরে হামলা চালিয়েছে। দুই বাম দলের পাল্টা বক্তব্য, হামলা করা দূরস্থান, তাদের কর্মীরাই ভয়ে কাঁটা হয়ে আছেন। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীই মারপিটে জড়িয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত কয়েক দিন আগেই। খাঁড়জুলি গ্রাম যে এলাকায় পড়ে, সেই খেতিয়া পঞ্চায়েত সিপিএমের দখলে রয়েছে। তৃণমূল সমর্থকদের অভিযোগ, সরকারি চাল বিলি নিয়ে দলবাজি চলছিল। বেছে বেছে সিপিএমের সমর্থকদেরই চাল দেওয়া হচ্ছিল। কিছু চাল বাইরেও পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ। গ্রামের শেখ মিরজান আলির অভিযোগ, “পঞ্চায়েতের আরএসপি সদস্য আবু সালামের নেতৃত্বে চাল বিলির তদারকি হচ্ছিল। দলবাজি এবং চাল পাচারের অভিযোগ ওঠায় তিনি গ্রামবাসীকে হুমকি দিচ্ছিলেন। এ দিন সকালে তাঁর নেতৃত্বে ২০-২৫ জন গ্রামে চড়াও হয়। তাদের আটকাতে গিয়ে আতেকা বিবি নামে এক মহিলাও মার খান।” |
হাসপাতালে শুয়ে প্রতিবন্ধী আবু বক্কর অভিযোগ করেন, “বিপিএল তালিকায় আমার নাম আছে। তবু কেন চাল পাইনি জানতে চাওয়ায় আমায় আর আমার বাড়ির সকলকে পেটানো হয়েছে। প্রতিবন্ধী বলে রেহাই পাইনি।” খেতিয়া অঞ্চল তৃণমূল সহ-সভাপতি দীনবন্ধু রায়ের বক্তব্য, “ওখানে সিপিএমের লোকেরা বরাবরই দলবাজি করে। মানুষের সম্মিলিত প্রতিবাদের মুখে দিশেহারা হয়ে ওরা আক্রমণ চালিয়েছে। পরে ভয় পেয়ে গ্রাম ছেড়ে পালায়। ওদের গ্রেফতারের দাবিতে আমরা থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।”
সিপিএমের জেলা কমিটি সদস্য প্রদীপ তা পাল্টা বলেন, “এখন যা পরিস্থিতি, তাতে আমাদের লোকজন তৃণমূলের উপর চড়াও হয়েছে, এই গল্প বিশ্বাস্য নয়। ওই গ্রামে আমাদের পঞ্চায়েত সদস্য নেই। তৃণমূলের বাধায় পঞ্চায়েত প্রধান থেকে সাধারণ কর্মী, কেউ কোনও কাজ করতে পারছেন না। মারধরের আশঙ্কাতেও ভুগছেন। চাল বিলি নিয়ে তৃণমূলেরই দু’টি গোষ্ঠীর গোলমালের জেরে এই সংঘর্ষ।” আরএসপি-র জেলা কমিটির সম্পাদক অঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “তৃণমূলেরই একটি গোষ্ঠী আবু সালামের বাড়ি আক্রমণ করেছিল। আর এক গোষ্ঠী বাধা দেয়। দু’পক্ষের সংঘর্ষেই অত জন আহত হয়েছেন।” বস্তুত, বর্ধমান জুড়েই একের পর এক গোষ্ঠী সংঘর্ষে জেরবার তৃণমূল। তবে জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ দাবি করেন, “এটা মোটেই গোষ্ঠী সংঘর্ষ নয়। সিপিএম এবং আরএসপিই এই হামলা চালিয়েছে।” বর্ধমান থানার আইসি স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় আবার দাবি করেন, “এর পিছনে রাজনীতি নেই। গ্রাম্য বিবাদের জেরেই এই সংঘর্ষ।” দুপুরে গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশি টহল চলছে। ফের সংঘর্ষের আশঙ্কয় বসেছে পুলিশ ক্যাম্পও। তবে রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। |