দলের জেলা সম্পাদক তথা দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের সদস্য করা নিয়ে জটিলতা বেড়ে চলায় উদ্বিগ্ন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্ব। এমনকী তিক্ততা ক্রমশ এমন পর্যায়ে পৌছচ্ছে যে ফের কোচবিহার জেলাকে ঘিরে দলে ভাঙনের আশঙ্কা করছেন তাঁদের একাংশ। উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে আগামীকাল, বৃহস্পতিবার দলের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের নিয়ে রাজ্য দফতরে জরুরি সভা তলব করেছেন রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ। ইতিমধ্যে অশোকবাবুর চিঠি দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের হাতে পৌছে গিয়েছে। আজ, বুধবার কলকাতায় পৌছবেন উদয়নবাবু। এ ছাড়াও সভায় উপস্থিত থাকবেন কোচবিহারের সাংসদ নৃপেন রায়, বিধায়ক অক্ষয় ঠাকুর, পরেশ অধিকারী এবং প্রাক্তন বিধায়ক দীপক রায়। বৃহস্পতিবার কলকাতার সভায় প্রবল বাদানুবাদের আশঙ্কা করছেন দলীয় নেতৃত্বের একাংশ। যদিও ওই বিষয়ে মুখ খোলেননি উদয়নবাবু। তিনি বলেন, “বৈঠকে উপস্থিত থাকব। আলোচনায় অংশ নেব। এতটুকুই বলতে পারি।” একই ভাবে প্রসঙ্গ এড়িয়েছেন অক্ষয় ঠাকুর। তিনি বলেন, “দলের বিষয়ে বাইরে মন্তব্য করব না।” প্রাক্তন বিধায়ক দীপক সরকার বলেন, “চিঠি পেয়েছি। কলকাতার সভায় উপস্থিত থাকব। কিন্তু সেখানে কী আলোচনা হবে বা হতে পারে তা নিয়ে বাইরে কিছু বলব না।” তবে উদয়নবাবুরা মুখ না খুললেও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের সদস্য হওয়ার প্রশ্নে জেলার প্রতিনিধিরা যে তাঁর পাশে দাঁড়াচ্ছেন সেটা স্পষ্ট। কিন্তু বিতর্ককে ঘিরে ১৯৯২ সালের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক এটা অনেকেই চাইছেন না। তিনবিঘা ইস্যুতে ওই বছর কমল গুহ ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে সমাজবাদী ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করেন। সাংসদ নৃপেন রায় বলেন, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদ প্রয়াত নেতা কমল গুহের আন্দোলনের ফসল। সেখানে উদয়নবাবুর সদস্য থাকা না-থাকা দলের আভ্যন্তরীণ বিষয়। বামফ্রন্টের বিষয় নয়। বৃহস্পতিবারের সভা সফল না হলে ফের সভা হবে। কোনও ভাবেই ১৯৯২ সালের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে দেব না।” কিন্তু দলের রাজ্য নেতৃত্ব নৃপেনবাবুর মতো নিশ্চিন্ত হতে পারছেন কোথায়! দলের রাজ্য সম্পাদকের পাঠানো চিঠির বয়ানে উদ্বেগ ও সংশয় বেশ স্পষ্ট। চিঠিতে অশোকবাবু লিখেছেন, ‘উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদে উদয়ন গুহের সদস্য হওয়া নিয়ে ইতিমধ্যে সংবাদমাধ্যমে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। ওরা নিজেদের মতো গল্প রচনা করে চলেছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। সবদিক বিবেচনার পরে মতামত জানতে ২২ সেপ্টেম্বর বেলা ২টায় রাজ্য দফতরে দলের কোচবিহার জেলা পার্টির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে।’ দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উদয়নবাবুকে পর্ষদের সদস্য করা নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। এর পরেই একদিকে সিপিএমের চাপ অন্যদিকে দলের অভ্যন্তরে উদয়ন বিরোধী গোষ্ঠীর তৎপরতায় পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়েছে। ১৯৯২ সালে তিনবিঘা ইস্যুতে একই রকম অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছিল বলে অনেকে মনে করছেন। দলের এক প্রবীণ নেতা বলেন, “জেলার রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা উদয়নবাবুর পাশে থাকবেন। এর পরেও যদি সিপিএমের চাপে অতিরিক্ত কিছু হয় তবে অনেক কিছুই ঘটতে পারে।” |