‘ছোটদের’ জন্য নিষিদ্ধ, বড়দের
পক্ষেও কি নিরাপদ নিমেসুলাইড
জ্বর নিয়ে গ্রামের হাতুড়ের কাছে গিয়েছিলেন তিনি। মুর্শিদাবাদের কাশিয়াডাঙার আঠারো বছরের তরুণী খুশি উপাধ্যায়।
এবং অভিযোগ, হাতুড়ের দেওয়া ‘নিমেসুলাইড’ গ্রুপের একটা ওষুধ খেয়েই তাঁর জ্বর বিলকুল নেমে গিয়েছিল। কিন্তু ওই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কতটা কী হতে পারে, সে সম্পর্কে ওই হাতুড়ের যে কোনও ধারণাই ছিল না!
ফল হয়েছে মারাত্মক। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ওষুধটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে এমন এক রোগে খুশি আক্রান্ত হন, চিকিৎসা-পরিভাষায় যার নাম ‘স্টিভেন্স জনসন সিনড্রোম।’ আর তারই জেরে মেয়েটি এখন দৃষ্টিশক্তি হারাতে বসেছেন!
কাশিয়াডাঙা থেকে এনে খুশিকে ভর্তি করানো হয়েছে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানকার মেডিসিন বিভাগের প্রধান প্রশান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “বাড়ির লোকের কাছে জেনেছি, মেয়েটি নিমেসুলাইড জাতীয় কোনও ওষুধ খেয়েছিলেন। এটা নন স্টেরোয়ড্যাল অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি (এনএসএআইডি) গ্রুপের। স্টিভেন্স জনসন সিনড্রোমের অন্যতম কারণ এই ওষুধটাই।”
হাসপাতালে খুশি উপাধ্যায়। দৃষ্টি এখন ঝাপসা।
আগুপিছু না-ভেবে প্রয়োগ করা সেই ওষুধই খুশির চোখে আঁধার নামিয়ে এনেছে। তবে এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গ্রামে-গঞ্জের গরিব মানুষ এখনও হাতুড়েদের কথামতো মুড়ি-মুড়কির মতো নিমেসুলাইড কিনে খাচ্ছেন। এমনকী, শহরেও বহু লোক ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া তা ব্যবহার করছেন। রাজ্যের কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক সদস্যের কথায়, “জ্বর হলে নিমেসুলাইড ম্যাজিকের মতো কাজ করে। তাই হাতুড়েরা নির্বিচারে প্রয়োগ করেন। এক বারও ভাবেন না, কী মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে!”
যেমন হয়েছিল খুশির। মেয়েটি জানিয়েছেন, ওষুধ খাওয়ার ক’দিন পরে তাঁর চোখে-মুখে কালো কালো ফোস্কা বেরোতে শুরু করেছিল। অবস্থা খারাপ হতে থাকায় কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। তখনই ধরা পড়ে, খুশি ‘স্টিভেন্স জনসন সিনড্রোম’-এ আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসায় তিনি অনেকটাই সুস্থও হয়ে ওঠেন। কিন্তু তার পরেই দেখা দেয় নতুন উপসর্গ দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে। খুশির মা শিপ্রাদেবীর কথায়, “এক দিন মেয়ে বলল, চোখ জ্বালা করছে। সব ঝাপসা হয়ে আসছে। এখন তো একটা চোখে কিছুই দেখতে পায় না। অন্যটায় ঝাপসা দেখে।”
এনআরএস থেকে খুশিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কলকাতার রিজিওন্যাল ইনস্টিটিউট অফ অপথ্যালমোলজি (আরআইও)-তে। সেখানকার চিকিৎসক হিমাদ্রি দত্ত জানাচ্ছেন, “স্টিভেন্স জনসন সিনড্রোমে কোনও কোনও ক্ষেত্রে চোখের জল শুকিয়ে যায়। দৃষ্টিশক্তিও হারানোরও ভয় থাকে।”
এর প্রেক্ষিতে নিমেসুলাইড জাতীয় ওষুধের ব্যবহার নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠেছে। হেল্থ সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক হীরালাল কোনার যেমন বলছেন, “ওষুধটি নিষিদ্ধ করার দাবি বার বার উঠেছে দেশ জুড়ে। শেষে গত বছরের মার্চে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তবে শুধু ১২ বছরের নীচের রোগীদের ক্ষেত্রে। কিন্তু ওই ওষুধ বড়দেরও যে কতটা ক্ষতি করতে পারে, খুশির ঘটনায় তা পরিষ্কার।”
স্টিভেন্স-জনসন সিনড্রোম কী ও কেন
কী হয়
• বহির্ত্বকের কোষগুলি মরে যায়
• প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়
• বিভিন্ন জীবাণু আক্রমণ করে
• পরবর্তী ক্ষেত্রে লিভারের ক্ষতি
• চোখের জল শুকিয়ে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হতে পারে
• শেষে ক্যানসারও হতে পারে
• ত্বকের এক ধরনের জটিল রোগ
• ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই এর অন্যতম কারণ

কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ তথা ফার্মাকোলজিস্ট তাপস ভট্টাচার্যেরও বক্তব্য, “ওই কম্পোজিশনের ওষুধটি আদ্যোপান্ত ক্ষতি করে আসছে। সবার ক্ষেত্রেই নিষিদ্ধ করা দরকার।” ফুসফুসের চিকিৎসক পার্থসারথি ভট্টাচার্যের মন্তব্য, “বিতর্ক ওঠার পর থেকে ওষুধটা এড়িয়ে চলি। অনেকে কিছু হলে স্রেফ উপসর্গ দেখেই নিজেরা মুড়ি-মুড়কির মতো ওষুধ কিনে খান। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা ভাবেন না। এতে নানা বিপত্তি হচ্ছে।”
যারা দেশে ওষুধ বিক্রির অনুমতি দিয়ে থাকে, সেই কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোল দফতর অবশ্য চিকিৎসকদের হুঁশিয়ারি শুনেও বিশেষ ভাবিত নয়। কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের ডেপুটি ডিরেক্টর (পূর্বাঞ্চল) ভি জি সোমানি মঙ্গলবার বলেন, “বারোর বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে নিমেসুলাইড ব্যবহারে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। ওষুধটি বড়দের কোনও ক্ষতি করেছে, এমন অভিযোগও পাইনি। এ রকম অভিযোগ উঠলে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তা যাচাই করে দেখে। তার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”
অর্থাৎ, বড়দের জন্য নিমেসুলাইড নিষিদ্ধ করার কথা এখনই ভাবা হচ্ছে না। এ দিকে অভিযোগ উঠছে, বারো বছরের কমবয়সীদের উপরে নিমেসুলাইড প্রয়োগ নিষিদ্ধ হলেও অনেক ডাক্তার তা প্রেসক্রিপশনে লিখছেন। সে ক্ষেত্রে কী হবে?
বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক সমীররঞ্জন দাসের জবাব, “প্রেসক্রিপশনে লেখা থাকলে আমাদের তো দিতেই হবে!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.