ধুলিয়ান পুর-বোর্ডে ‘পরিবর্তন’ নিয়ে প্রশ্ন
রাজ্যে পরিবর্তনের সাড়ে তিন মাস পরে তার আঁচ পড়ল ধুলিয়ান পুরসভায়।
বামফ্রন্টের দখলে থাকা মুর্শিদাবাদ জেলার ওই পুর বোর্ডের দুই ফরওয়ার্ড ব্লক সদস্য কংগ্রেসের পক্ষে ভোট দেওয়ায় বোর্ডে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু এ দিন, বোর্ড গঠনের প্রশ্নে ফের ‘অস্পষ্টতা’ তৈরি হওয়ায় ধুলিয়ান পুরসভায় যে ‘পরিবর্তন’ সম্পূর্ণ, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
এ দিন ওই সভায় জেলা প্রশাসনের কোনও প্রতিনিধিও হাজির ছিলেন না। ফলে প্রশানিক সূত্রে বোর্ডের ভবিষ্যৎ স্পষ্ট করে দেওয়া সম্ভব হয়নি। জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসক এনাউর রহমান বলেন, “এ দিন সভায় আমি বা সরকারের কোনও প্রতিনিধি ছিলেন না। তাই বিস্তারিত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছু বলা সম্ভব নয়।”
দিন কয়েক আগে সিপিএমের দখলে থাকা ওই পুর বোর্ডের চেয়ারম্যান অপসারণের প্রশ্নে বাম-শরিক ফব-র দুই সদস্য কংগ্রেসকে সমর্থন করেন। ফলে ১৯ সদস্যের ওই পুরসভায় সিপিএম (৮ সদস্য) সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে। অন্য দিকে, ফরওয়ার্ড ব্লকের ২ সদস্য কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলানোয় তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েও প্রশ্ন ছিল না।
এ দিন নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচন এবং বোর্ড গঠনের জন্য সভা ডাকা হয়েছিল। কিন্তু সে সভা কিছুক্ষণের মধ্যেই কংগ্রেসের চেনা কাজিয়ায় হট্টমেলার চেহারা নেয়। প্রকাশ্যেই এসে পড়ে দলীয় কোন্দল। পরিস্থিতি সামাল দিতে তড়িঘড়ি মেহবুব আলম নামে ২ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস সদস্যকে ‘নতুন’ পুর চেয়ারম্যান ঘোষণা করে সভা শেষ করে দেওয়া হয়।
ধুলিয়ানের নতুন পুর প্রধানকে নিয়ে সমর্থকদের উল্লাস। নিজস্ব চিত্র।
দলেরই অন্তত জনা পাঁচেক কাউন্সিলরকে এরপরেই চেঁচাতে দেখা যায়, “এই পুরপ্রধান মানছি না!” তাঁরা স্পষ্টই জানিয়ে দেন, নতুন পুরপ্রধান জেলা কংগ্রেসের ‘চাপিয়ে দেওয়া’। পাশাপাশি, ফরওয়ার্ড ব্লকের ‘বিক্ষুব্ধ’ দুই সদস্যও ওই নির্বাচনের পরে জানান, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করেই প্রধান নির্বাচন করা হয়েছে।
এ দিনের বোর্ড গঠনের সভাকে ‘অবৈধ’ বলে দাবি করেছে সিপিএম-ও। এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে ইতিমধ্যেই মামলাও করেছেন তাঁরা। পুর বোর্ডের ‘বিদায়ী’ চেয়ারম্যান সিপিএমের সুন্দর ঘোষ বলেন, “১ সেপ্টেম্বর যে অনাস্থা সভা হয়েছে তার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সে সভায় উপ-পুরপ্রধান হাজির থাকা সত্ত্বেও সভাপতিত্ব করেন কংগ্রেসের এক কাউন্সিলর। এ নিয়ে আমরা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছি। বিচারাধীন অবস্থায় এ ভাবে পুর প্রধান নির্বাচন করা যায় না।”
ধুলিয়ান পুরসভায় গত বছর বোর্ড গঠন করে বামফ্রন্টই। পুরপ্রধান হন সিপিএমের সুন্দরবাবু। উপপ্রধান হন ফরওয়ার্ড ব্লকের কাউন্সিলর তুষারকান্তি সেন। কিন্তু মাস তিনেক ধরে ধুলিয়ানের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে পুরবোর্ডের চালচলন নিয়ে তীব্র বিরোধ বাধে স্থানীয় ফরওয়ার্ড ব্লকের। তারই জেরে গত ১ সেপ্টেম্বর কংগ্রেসের আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে সমর্থন করেন তুষারবাবুরা। তারপরেই অপসারিত হন পুরপ্রধান সুন্দরবাবু।
মঙ্গলবার ছিল নয়া পুরপ্রধান নির্বাচনের সভা। সভায় কংগ্রেস ও ফরওয়ার্ড ব্লকের ১১ কাউন্সিলর হাজির ছিলেন। কিন্তু পুরপ্রধান কে হবেন, তা নিয়ে দেখা দেয় মতবিরোধ। সভায় জেলা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে পুরপ্রধান হিসেবে মেহেবুব আলমের নাম ঘোষণা করেন এক কাউন্সিলর। অন্য এক কাউন্সিলর তা সমর্থন করেন। তড়িঘড়ি উপস্থিত কাউন্সিলরদের স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়। তারপরে মাত্র মিনিট কুড়ির মধ্যেই শেষ করে দেওয়া নির্বাচন পর্ব।
এ ব্যাপারে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের কাউন্সিলর তুষারকান্তি সেন। তিনি বলেন, “কোনও রকমে আলোচনা ছাড়াই পুরপ্রধান নির্বাচন করা হয়েছে। রেজ্যুলেশনের খাতায় আগেই উপস্থিত কাউন্সিলরদের সই করিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাই আপাতত কিছু করার নেই। কিন্তু এ ভাবে পুরপ্রধান নির্বাচন মেনে নেওয়া যায় না।”
শুধু ফরওয়ার্ড ব্লকই নয়। কংগ্রেসের নিজেদের মধ্যেও পুরপ্রধানের নির্বাচন নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। কংগ্রেসের কাউন্সিলর দিলীপ সরকার বলেন, “যা হল তা ঠিক নয়। দলের কাউন্সিলররা পুরপ্রধান নির্বাচন নিয়ে এক মত নন। অন্তত ৫ জন কাউন্সিলরের সমর্থন নেই এই নির্বাচনের পিছনে।” ধুলিয়ান টাউন কংগ্রেসের সভাপতি কাশীনাথ রায়ও বলেন “এই নির্বাচন নিয়ে দলের কাউন্সিলরেরা সকলে এক মত নন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.