আর না হারায় অন্ধ মায়ের ধন, আগলে আছেন বনকর্মীরা
সে এক অসহায় মা। মা হওয়ার যন্ত্রণাটুকুই সে পায়, পায় না মা হওয়ার আনন্দ। দু’ দু’ বার সন্তান ধারণ করেছে সে। জন্মও দিয়েছে সুস্থ সবল শিশুর। কিন্তু দু’বারই সে বঞ্চিত হয়েছে সন্তানকে লালনপালন করার সুযোগ থেকে। কারণ নবজাতকদের কেড়ে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলেছে হিংস্র শ্বাপদ। নিজে বিপুল শারীরিক বলের অধিকারী হয়েও সে বাঁচাতে পারেনি নাড়ি ছেঁড়া ধনকে। শুনেছে সন্তানের আর্তনাদ, সেই সঙ্গে বাঘের গর্জনও। কিন্তু করুণ আর্তি শুনেও সে তাড়াতে পারেনি ঘাতককে। সে যে দৃষ্টিহীনা।
সে কাজিরাঙার কৃষ্ণা। দৃষ্টিহীন এক হস্তিনি। দু’ দু’বার তাকে সন্তানহারা হতে দেখেছেন বনকর্মীরা। দেখেছেন সন্তানশোকে তার দৃষ্টিহীন চোখ থেকে অশ্রুধারা ঝরতে। অঝোরে। এ বার তৃতীয় বার মা হল কৃষ্ণা। গত শনিবার একটি শাবকের জন্ম দিয়েছে সে। টলোমলো পায়ে শিশুটি সবুজ ঘাসের বুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে মায়ের গা ঘেঁষে। এ বার কিন্তু মা ও শিশুকে চোখের আড়াল হতে দিচ্ছেন না বনকর্মীরা। তাঁদের সমবেত প্রতিজ্ঞা, আর সন্তানহীনা হতে দেওয়া হবে না কৃষ্ণাকে।
তিন দিনের শাবককে নিয়ে কৃষ্ণা। দৃষ্টিহীন এই হাতিটির আগের
দু’টি সন্তান গিয়েছে বাঘের মুখে। ছবি: বন দফতরের সৌজন্যে
১৯৮২ সালে, কৃষ্ণাকে কামরূপ থেকে কাজিরাঙায় আনা হয়েছিল। এখন তার বয়স ৩৯ বছর। কী ভাবে কৃষ্ণা দৃষ্টি হারায় তার কোনও নথি নেই। তবে, প্রবীণ মাহুতরা জানান, জঙ্গলে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল তাকে। তখন থেকেই সে অন্ধ। কাজিরাঙাতে অন্য হাতিদের মতো পর্যটক ঘোরানো বা বন টহলের কাজ কৃষ্ণাকে দেওয়া হয়নি। সে কেবল অন্য হাতিদের সঙ্গ দেয়।
কাজিরাঙার বাগোরি রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার দেবেন কলিতা বলেন, “গত শনিবার কৃষ্ণা ফের জন্ম দিয়েছে একটি শিশুর। তবে, এই বার আর মা-শিশুকে নজরের আড়াল করছি না আমরা। বনরক্ষীদের একটি দল তাদের অবিরাম পাহারা দিচ্ছে। এক জন পশু চিকিৎসকও মোতায়েন রয়েছেন। মা ও নবজাতক আপাতত সুস্থ রয়েছে। যত দিন না শিশুটি নিজের দেখভালে সক্ষম না হয়, তত দিন তাকে পাহারা দিয়ে রাখব আমরা। কৃষ্ণার সদ্যোজাত সন্তান একটু বড় হলেই, তাদের গহন অরণ্য থেকে বের করে এনে রেঞ্জ অফিসের কাছে রাখা হবে।”
জাতীয় উদ্যানের বিমোলি বন শিবিরের কাছে সন্তানের জন্ম দিয়েছে কৃষ্ণা। বাগোরির গভীরতম অংশ সেটি। কেবল কৃষ্ণার তৃতীয় সন্তানকে বাঁচাতেই কাজিরাঙা কর্তৃপক্ষ প্রসবস্থলে একটি অস্থায়ী বনশিবির গড়েছেন। কাজিরাঙায় আপাতত পোষা হাতির সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ। গন্ডার প্রায় ২১০০। বাঘের ঘনত্বেও বিশ্বসেরা এই অরণ্য। বাঘ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই, গন্ডার ও হাতির বাচ্চার বাঘের পেটে যাওয়ার ঘটনাও বাড়ছে কাজিরাঙায়। এই বছর বেশ কিছু গন্ডার শাবককে বাঘে খেয়েছে। তবে, বনকর্তাদের মতে, এটি স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্র।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.