মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের ফতেপুর এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত পান চাষিদের জন্য ৫৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ বরাদ্দ করল রাজ্য সরকার। গত বছর ডিসেম্বর মাসে শীতকালে ধসা রোগে ওই এলাকায় পান চাষে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার ১০ মাস বাদে শনিবার দিন চাষিদের ক্ষতিপূরনের টাকা ব্লকে এসে পৌঁছেছে। ২৪৫ জন ক্ষতিগ্রস্ত চাষির জন্য প্রতি শতক জমি পিছু ৫৭৮ টাকা করে দেওয়া হবে বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে! হরিশ্চন্দ্রপুর-২ বিডিও ঋতম ঝা বলেছেন, “তালিকা ধরে স্থানীয় পঞ্চায়েতকে ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে বলা হয়েছে! তা খোলা হলেই ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়ে দেওয়া হবে।” হরিশ্চন্দ্রপুর তো বটেই, চাঁচল মহকুমার একমাত্র পান চাষ হয় ভালুকা গ্রাম পঞ্চায়েতের ফতেপুর এলাকায়। এলাকার প্রায় প্রত্যেকেই পান চাষের সঙ্গে জড়িত। মালদহ ছাড়াও বিহার ও ঝাড়খন্ডেও ফতেপুরের পানের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। কিন্তু গত বছর শীতে প্রচণ্ড কুয়াশায় ধসা রোগে বিঘার পর বিঘা পানের বরজ নষ্ট হয়ে যায়! চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ধারদেনা করে চাষ করার পর সর্বস্ব হারিয়ে মাথায় হাত পড়ে চাষিদের! ব্লক প্রশাসনের তরফে কোনও আশ্বাস না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন চাষিরা। এলাকা দিয়ে গাড়ি চেপে বাড়ি ফেরার পথে এ বছরই জানুয়ারি মাসের ২৭ তারিখে পান চাষিদের ক্ষাভের মুখে পড়েন হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক তজমুল হোসেন। বাঁধের রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে টেনেহিঁচড়ে বিধায়ককে নামিয়ে পান বরজে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখেন চাষিরা। চাষিদের দুর্দশার কথা শুনে তার পর তাদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে সরব হন বিধায়কও। সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীকে বিষয়টি জানানোর পাশাপাশি তিনি পান চাষিদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে বিধানসভাতেও সরব হন বিধায়ক। বিধায়ক বলেন, গত শীতে যে ভাবে এলাকায় পান চাষের ক্ষতি হয় তারপর ক্ষতিপূরণ না পেলে ওদের যে আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয় সেটা বুঝতে পেরেই বিধানসভায় সরব হই। ওদের ক্ষতিপূরন মিললে কিছুটা হলেও সুরাহা হবে। প্রশাসন ও উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা যায়, একবার পান গাছ লাগানোর পর প্রায় ২০ থেকে ২৫ বছর পর্য়ন্ত ওই গাছ থেকে পান পাওয়া যায়। কিন্তু গত বছর ডিসেম্বর মাসে ওই এলাকায় ৯ হাজার শতকেরও বেশি পানের চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়! প্রায় গোটা এলাকারই পানের গাছ ও পাতা পচে নষ্ট হয়ে যায়। ছোট বড় মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২৪৫টি পরিবার। ফের নতুন করে গাছ লাগিয়ে পান চাষ করবেন কী ভাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান চাষিরা। বিধায়ককে আটকে রেখে বিক্ষোভের পর প্রশাসনের তরফে এলাকায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে রাজ্য সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের আবেদন জানানো হয়! পুজোর মুখে ওই ক্ষতিপূরণের টাকা এসে পৌঁছনোয় ফতেপুর এলাকা জুড়েই চাষিদের মধ্যে খুশির হাওয়া! ক্ষতিপূরণ পেয়ে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন তারা। ৪ বিঘা জমিতে পান চাষ করেছিলেন ধ্রুব মণ্ডল। ধসা রোগে তার পুরোটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে! তিনি বলেন, গাছ না লাগাতে হলেও প্রতিবছর পরিচর্য়ায় খরচ প্রচুর! ধার দেনা করে তা করতে হয়। গতবারের ধসা রোগ পথে বসিয়ে দিয়েছে। একই অবস্থা মানিক মন্ডলেরও! তার আড়াই বিঘা জমির পুরোটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেছেন, “ক্ষতিপূরন পেলে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারব।” |