ভূমিকম্পের পরে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন রেললাইনে ট্রেন থামিয়ে দেওয়া হয়। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের বাসও দাঁড়িয়ে পড়ে রাস্তায় রাস্তায়। রাস্তায় সার দিয়ে দাঁড়িয়ে অনেক গাড়িও। বিদ্যুৎহীন শহর, গ্রামে গাড়ি থেকে নেমে সবাই ছুটে আশ্রয় নিয়েছেন খোলা আকাশের নীচে। অন্তত ৩০ সেকেন্ড এমনই এক পরিবেশে কেটেছে যাত্রীদের। ভূমিকম্প থামার ঘন্টা দু’য়েক পরেও স্বাভাবিক হননি কেউ। গাড়ি চালাবেন কী চালাবেন না, তা নিয়ে ধন্দে পড়েছেন চালকেরাও। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের এক আধিকারিক বলেন, “ভূমিকম্পের খবর জানতে পেরেই আমরা চালকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। গাড়ি দাঁড় করিয়ে নিরাপদে দাঁড়াতে বলা হয় সকলকে।”
রবিবার সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট নাগাদ ভূমিকম্প শুরু হয় উত্তরবঙ্গে। প্রায় ৩০ সেকেণ্ড সময় ধরে ভূমিকম্প চলতে থাকে। শিলিগুড়ি থেকে মালদা, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি সর্বত্র বাস, ট্রেন আটকে পড়ে। এনজেপি-র এরিয়া ম্যানেজার পার্থসারথি শীল বলেন, “এ রকম ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা আগে হয়নি। সবাই আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়াটা স্বাভাবিক। খবর পাওয়া মাত্র সমস্ত ট্রেনকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। যাত্রী, থেকে ট্রেনের কর্মীরা সবাই ভয়
পেয়ে গিয়েছিলেন। একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়। ঘোর কেটে যাওয়ার পরে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে।” প্রায় ঘণ্টা দু’য়েকের মতো ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। কারণ রেলকর্মীরা তখন লাইন পরীক্ষা করতে নেমে যান বিভিন্ন জায়গায়।
রেল দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন কাঞ্চনজঙ্ঘা, হলদিবাড়ি, উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস এনজেপি স্টেশনে আসার পরই ভূমিকম্প শুরু হয়। তিনটি ট্রেনকেই সেখানে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। আলিপুরদুয়ারমুখী ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস সেবকের কাছে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়াও যে সমস্ত ট্রেন বিভিন্ন দিকে যাচ্ছিল সবগুলিকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। ভূমিকম্পের আতঙ্ক কেটে যাওয়ার পর রেল কর্মীরা লাইন পরীক্ষা করে দেখার জন্য বের হন। এর পরেই ট্রেন চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। দার্জিলিং মেল রাত ৮ টায় কলকাতার উদ্দেশে ছাড়ার কথা থাকলেও বিপর্যয়ের কারণে প্রায় এক ঘণ্টা দেরি করে ছাড়ে। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাস এবং বেসরকারি বাস-সহ অন্তত কয়েক হাজার গাড়ি রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ে।
দিনহাটা থেকে কোচবিহার যাওয়ার পথে এক বাসযাত্রী বাপ্পা সরকার বলেন, “গাড়ি তখন বেশ কিছুটা চলেছে। হঠাৎই অস্বাভাবিক ভাবে দুলতে শুরু করে। প্রথমটায় বুঝতে পারিনি। দু’সেকেন্ডের মধ্যে বুঝতে পারি ভূমিকম্প। তখন প্রচণ্ড দুলছে গাড়ি। মনে হচ্ছে কোনও প্রচণ্ড শক্তি দিয়ে কেউ গাড়ি ফেলে দিতে চাইছে। চিৎকার শুরু করেন সকলে। চালক গাড়ি থামিয়ে খোলা আকাশের নীচে ছুট দেন। আমরাও পিছু নিই।”
ইন্টারসিটি চেপে আলিপুরদুয়ারে ফিরছিলেন দেবাশিস সরকার। তিনি বলেন, “এমন আতঙ্ক কখনও দেখিনি। চিৎকার, কান্না শুরু করছিলেন সবাই। আমি কাঁপছিলাম। কোথাও পালাব বুঝতে পারছিলাম না।” রেলের এক আধিকারিক বলেন, “ভূমিকম্পের জেরে ট্রেনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রীরা ছুটোছুটি শুরু করেন। ঘন্টা দেড়েক পরে ট্রেন চলাচল শুরু করা হয়।” |