দু’দফায় কেঁপে উঠল এলাকা
ঠান্ডা মাথায় ধাক্কা সামলালেন শহরবাসী
প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও সিংহভাগ বাসিন্দা শেষ পর্যন্ত মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারায় বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে উত্তরবঙ্গ। অন্তত রবিবার সন্ধ্যায় উপুর্যপরি দু-দফায় ভূমিকম্পের পরে সেটাই স্পষ্ট হয়েছে। প্রবল কম্পনে প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত মাথা ঠিক রাখতে পারায় অনেকেই দুর্ঘটনার হাত থেকে রেহাই পেয়েছেন। নেতা-মন্ত্রী-আমলা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সকলেরই একই অভিজ্ঞতা। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের পরিবারের কথাই ধরা যাক। তাঁর স্ত্রী শুক্লা দেবী ছেলেকে নিয়ে সবে টিভিতে খবর দেখতে বসেছিলেন। সেই সময়ে শুরু হয় ভূমিকম্প। শুক্লা দেবীর কথায়, “এমন ভাবে আমাদের বাড়িটা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল যে মনে হল সব এখনই ভেঙে পড়বে। সঙ্গে সঙ্গে আলো নিভে গেল। সঙ্গে সঙ্গে উলু দিতে শুরু করলাম। উলু দিতে দিতেই এক হাতে ছেলেকে নিয়ে গেটের চাবি নিয়ে দোতলা থেকে সিঁড়ির দিকে নেমে ইনভার্টার চালু করে গেটের বাইরে বেরোলাম। দেখি রাস্তায় ভিড়ে ভিড়াক্কার। কোথায় যে কত ক্ষতি হল কে জানে!” একই ভাবে মাথা ঠিক রাখতে পারায় শিলিগুড়ির সেবক রোডের একটি শপিং মলে ছোটাছুটির মদ্যে পনেও আঘাত এড়াতে পেরেছেন সীমা রায়চৌধুরী। জলপাইগুনি থেকে পুজোর বাজার করতে গিয়েছিলেন ওই শপিং মলে। সীমা দেবী বলেন, “ভূমিকম্প শুরু হতেই আলো নিভে গেল। মুহূর্তের মধ্যে এসকালেটর বন্ধ। তাতে দাঁড়িয়ে ছিলাম। লোক জন ছোটাছুটি শুরু করল। আমি ছেলের হাত ধরে থাকলাম। ওঁর বাবা মেয়ের হাত ধরে থাকল। এসকালেটরের এক ধারে চুপ করে দঁনিয়ে তাকলাম। তার মদ্যেই দেখলাম হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন গড়িয়ে পড়লেন।” একই ঘটনা ঘটেছে মাটিগাড়ার কাছের শপিং মলেও। শেঠ শ্রীলাল মার্কেট, বিধান মার্কেট, হিলকার্ট রোডে হুড়োহুড়ি কম হয়নি। কোথাও হুড়মুড় করে পালাতে গিয়ে বাইক ড্রেনে পড়ে গিয়েছে। আবার কোথাও বা দোকানের সামনে রাখা বাইক, গাড়িতে ধাক্কা লেগে উল্টে পড়েছেন ক্রেতারা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে পথে নামে। শিলিগুনি থানার আইসি পিনাকী মজুমদার ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে নিরাপত্তার স্বার্থে সব দোকানপাট বন্ধ করিয়ে দেন। আইসি প্রতিটি ব্যাঙ্কের ম্যানেজারদের সঙ্গে কথা বলে কোথাও ফাটল ধরেছে কি না তা গিয়ে সরেজমিনে পরীক্ষা করার অনুরোধ করেন। ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্থ বেঙ্গলের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “একে রবিবার তার উপরে পুজোর জন্য প্রতিটি বাজারে বাসিন্দাদের ঠাসাঠাসি ভিড় ছিল। ঘটনার পর বহু বাজারে দৌড়াদৌড়ি হলেও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাইনি। দোকানপাটে বড় মাপের ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই। ফাটল ধরেছে। তবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সবাই। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।” ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে শিলিগুড়ি লাগোয়া মাটিগাড়া, নকশালবাড়ি এলাকাতেও। দাজির্লিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা মাটিগাড়া-নকশলাবাড়ির বিধায়ক শঙ্কর মালাকার বলেন, “আমার নির্বাচনী কেন্দ্র মাটিগাড়া-নকশালাবাড়ি এলাকা থেকে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাচ্ছি। বহু জায়গায় দেওয়ার ধসে গিয়েছে। ফাটল ধরেছে। হাসপাতালেও জখম হয়ে লোকজন ভর্তি হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে খোঁজ খবর নিচ্ছি। আমার নিজের বাড়ির দেওয়ালেও ফাটল ধরেছে। প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।” শিলিগুড়ি হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত ১০ টা পর্যন্ত জখমের সংখ্যা ২৫০ জন ছাড়িয়ে গিয়েছে। তবে অধিকাংশের আঘাত গুরুতর নয়। একের পর এক রোগী আসছে দেখে হাসপাতালে জরুরি পরিষেবার জন্য ৫ জন চিকিৎসককে ডেপে পাঠান সুপার সুশান্ত সরকার। স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশকে জরুরি পরিষেবার জন্য ডাকা হয়। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তারা কাজ শুরু করেন। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালেও প্রচুর জখম রোগীরা গিয়েছেন। শিলিগুড়ির বিভিন্ন নার্সিংহোমেও গুরুতর জখম অবস্থায় অনেকে ভর্তি রয়েছেন। ২২ নম্বর ওয়ার্ডের অরবিন্দ পল্লির বাসিন্দা মুকুলবাবুরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। লাগোয়া দেওয়াল ভেঙে পড়ে তিনি, তাঁর দুই ছেলে জখম হয়েছেন। তাঁর ডান চোখের কোন থেঁতলে গিয়েছে। মাথায় গুরুতর চোট পেয়েছে বড় ছেলে অমিত। অপর ছেলে অঙ্কুর পায়ে চোট পেয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালেও রাত সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত প্রায় ২৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশই অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন শম্পা বিশ্বাস নারু গোপাল রায়, বেহুলা রায়। হাত পা অনেকের হাত পা ভেঙে গিয়েছে। শিলিগুড়ির প্রাক্তন বিধায়ক তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী কলকাতায় রয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি কলকাতায় রয়েছি। কিন্তু, যা খবর পেয়েছি তাতে বড় মাপের ক্ষতি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আমার জীবনে শিলিগুড়িতে এত জোর ভূমিকম্পের কথা শুনিনি। আমার দাদার বাড়িতেও ফাটল ধরে গিয়েছে। সোমবার শিলিগুড়ি ফিরে দুর্গতদের পাশে দাঁড়াব।” প্রাক্তন পুরমন্ত্রী বলেন, “টেলিফোন ও বিদ্যুৎ পরিস্থিতি যাতে স্বাভাবিক হয় সে জন্য সরকারকে জোর দিতে হবে।” এ দিকে, মাত্র ১৫ সেকেণ্ডের ভূমিকম্পে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে উত্তর দিনাজপুরেও। রবিবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ভূমিকম্পের জেরে সমস্ত মানুষ বাইরে বেরিয়ে যান। সেই সময় এলাকায় প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টির মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ কাসর-ঘন্টা বাজিয়ে, উলুধ্বনি দিতে থাকেন। ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে যান। মোবাইল পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। লোডশেডিং হয়ে যায়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভূমিকম্পের জেরে ইসলামপুর মহকুমা সংশোধনাগারের পাঁচিলে একাধিক ফাটল হয়েছে। ইটাহারের কাপাসিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এ লাকায় মাটির পাঁচিল চাপা পড়ে একই পরিবারের ৩ জন সদস্য জখম হয়েছেন। উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক পাসং নরবু শেরপা বলেন, “ভূমিকম্পে বড় ধরণের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বিদ্যুতের পরিষেবা স্বাভাবিক করতে বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.