|
|
|
|
এসএসকেএম |
মন্ত্রী আশাবাদী, তবু আইটিইউ চালু হওয়া নিয়ে সংশয় |
সোমা মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
রাতভর এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটেছিলেন অর্পণ সরকারের বাড়ির লোকেরা। পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত অর্পণের জন্য প্রয়োজন ছিল আইটিইউ-র একটি শয্যা। কিন্তু কোনও সরকারি হাসপাতালেই তা জোগাড় করা যায়নি। ভোরে ২৪ বছরের অর্পণের মৃত্যু হয় কার্যত বিনা চিকিৎসায়। এই ঘটনার পরে আইটিইউ-র প্রয়োজনীয়তা এবং তা না পেয়ে সঙ্কটাপন্ন রোগীরা কী ভাবে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে, সে কথা জানিয়ে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন অর্পণের বাবা। তার পরে কেটে গিয়েছে পাঁচ বছর, অব্যবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। শহরের কয়েকটি হাসপাতালে আইটিইউ রয়েছে ঠিকই, কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা এত কম যে মানুষের ভোগান্তি একটুও কমেনি। এ বার কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ৩০ শয্যার আইটিইউ চালু করার কথা ঘোষণা করেছেন হাসপাতালের পরিচালন সমিতির বর্তমান সভাপতি, রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। আগামী ২ অক্টোবর, মহাত্মা গাঁধীর জন্মদিনে ওই আইটিইউ চালু হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু দিনক্ষণ ঘোষণা হলেও আর সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে তড়িঘড়ি সব ব্যবস্থা হবে কী ভাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এখনও টাকা হাতে আসেনি। উপনির্বাচন মেটার আগে টাকা পাওয়াও যাবে না। ৩০ শয্যার আইটিইউ চালুর জন্য যে সংখ্যক চিকিৎসক এবং কর্মী প্রয়োজন হয়, তার-ও ব্যবস্থা নেই। তা হলে সব হবে কী ভাবে? পুরমন্ত্রী বলেন, “টাকা স্বাস্থ্য দফতরই দিচ্ছে। আর প্রক্রিয়াও অবিলম্বে শুরু হয়েছে। সদিচ্ছা থাকলে কোনও কাজই আটকায় না। একসঙ্গে ৩০ শয্যা চালু করা না গেলে দু’টো ধাপে করা হবে। নেই মামার চেয়ে তো কানা মামা ভাল।”
আইটিইউ-র জন্য বিশেষ ধরনের শয্যার প্রয়োজন। এক-একটির দাম সাড়ে তিন হাজার টাকারও বেশি। এ ছাড়া প্রয়োজন ভেন্টিলেটর, কার্ডিয়াক মনিটর, ইনফিউশন পাম্প, সিরিঞ্জ পাম্প, ডিফিব্রিলেটর প্রভৃতি। মেন ব্লকের দোতলায় ওই আইটিইউ চালু করতে খরচ হবে আনুমানিক সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু সরঞ্জাম কিনতেই প্রয়োজন সাড়ে তিন কোটি টাকা। পাশাপাশি, ২৪ ঘণ্টা ৩০ শয্যার আইটিইউ চালু করতে হলে প্রয়োজন আরও অন্তত ৩০ জন নার্স এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। প্রয়োজন নতুন বৈদ্যুতিক লাইনেরও। কর্তৃপক্ষ এখনও জানেন না কবে, কী ভাবে এ সবের ব্যবস্থা হবে। এসএসকেএমের সুপার প্রভাস চক্রবর্তী বলেন, “নার্স বা ডাক্তার হয়তো কোনও ভাবে ব্যবস্থা করে ফেলব। কিন্তু টাকার ব্যবস্থা এবং তার পরে সরঞ্জাম কেনার পুরো প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। তবে পরিচালন সমিতির সভাপতি নিজে উদ্যোগী হয়েছেন, আমাদের কাছে আশার কথা সেটাই।”
এসএসকেএমে এতদিন আট শয্যার আইটিইউ ছিল। কিন্তু ওই অংশে মেরামতির কাজ চলছে বলে আপাতত শয্যার সংখ্যা কমিয়ে পাঁচ করা হয়েছে। ফলে প্রতি দিনই আইটিইউ-এ শয্যা না পেয়ে ফিরে যেতে হয় বহু রোগীকে। রাজ্যের অধিকাংশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই আইটিইউ-র অস্তিত্বই নেই। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে আট শয্যার আইটিইউ থাকলেও নীলরতন সরকার হাসপাতালে নেই। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৮ শয্যার ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) রয়েছে। আরজিকর মেডিক্যাল কলেজে রয়েছে পাঁচ শয্যার পোস্ট অ্যানেস্থেশিয়া কেয়ার ইউনিট। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এই ব্যবস্থা খুবই কম। তাই সাধারণ মানুষকে আইটিইউ-র প্রয়োজনে বেসরকারি হাসপাতালে ছুটতে হয়। সেখানকার বিপুল খরচ সামলাতে না পেরে কার্যত তাঁরা সর্বসান্ত্ব হয়ে যান। এসএসকেএমের এই উদ্যোগ সেই সমস্যার সমাধান কতটা করতে পারে, সেটাই দেখার। |
|
|
|
|
|