নয়ছয়ে হতবাক ন্যাকো
এইচআইভি রোধের টাকায়
খানাপিনা, অশ্লীল ফোন
দ্দেশ্য এইচআইভি প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ ও প্রচার কর্মসূচি চালানো। তার জন্য রাজ্যকে লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু সেই টাকায় কাজটা কী হয়েছে?
অডিটের পরে জাতীয় এড্স নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (ন্যাকো) ‘কাজ’-এর যে-খতিয়ান পেয়েছে, তা এই রকম:
• প্রকল্পের টাকায় রাজ্য এড্স প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (স্যাক্স)-র কর্তারা নামী হোটেলে দেদার ভূরিভোজ সেরেছেন। রোজই স্যাক্সের অফিসে খাবারের প্যাকেট এসেছে।
• এক বছরে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার মিনারেল ওয়াটার কেনা হয়েছে।
• নিয়ম ভেঙে বেড়ানো হয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে।
• লক্ষ লক্ষ টাকার কাগজ-পেন-ফাইল কেনা হয়েছে। হিন্দি-ইংরেজি ছবি ও গানের সিডি-ডিভিডি কেনা হয়েছে সিটি সেন্টার থেকে।
• ভিডিও গেমস খেলা হয়েছে।
• ব্যক্তিগত মোবাইল বিল দেওয়া হয়েছে। দামি ঘড়ি, ব্রিফকেস কেনা হয়েছে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য।
• ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে নির্দিষ্ট নম্বরে অশ্লীল কথোপকথনও হয়েছে!
টাকা খরচের হিসেব নিতে এসে নয়ছয়ের এই বহর দেখে ন্যাকো নিযুক্ত অডিট সংস্থা হতবাক। এইচআইভি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য পাঠানো টাকা স্যাক্সে নয়ছয় হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছিল বছর দুয়েক আগেই। তখনকার বামফ্রন্ট সরকার গা করেনি। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই পুরো বিষয়টি ফাঁস হয়েছে। অডিট সংস্থা প্রথমে পুরো বিষয়টির প্রমাণ পেয়ে ন্যাকো-কে জানায়। তার ভিত্তিতে সম্প্রতি ন্যাকো-র পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি রাজ্যে এসে কাগজপত্র খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে। চূড়ান্ত দুর্নীতি ও আর্থিক নয়ছয়ের বহর দেখে তারা স্তম্ভিত।
লক্ষ লক্ষ টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ মেনে নিয়েছে স্যাক্স-ও। সেই সঙ্গে ওই সংস্থার অ্যাকাউন্টস বিভাগ থেকে সদ্য বদলি হওয়া দুই অফিসারকে এ ব্যাপারে চার্জশিট দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
ন্যাকো-র কর্তারা জানান, ২০১০-এর এপ্রিল থেকে ২০১১-এর মার্চ পর্যন্ত সময়ের অডিট রিপোর্ট দেখে এবং তদন্ত চালিয়ে তাঁরা যে-তথ্য পেয়েছেন, তা চমকে দেওয়ার মতো। তাঁদের কথায়, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির জন্য ওই এক বছরে কেন্দ্র থেকে ১৬ লক্ষ ৭৫ হাজার ৭০০ টাকা ধার নিয়েছিল স্যাক্স। তার মধ্যে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা কী ভাবে খরচ করা হয়েছে, তার কোনও হিসেব দিতে পারেনি তারা। ন্যাকো চাপ দেওয়ায় স্যাক্স তিন লক্ষ টাকার একটা বিল জমা দেয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, সেই সব বিলই জাল। এখানেই শেষ নয়। ২০১১ সালের মে মাসে স্যাক্সের অ্যাকাউন্টে বিদেশি অনুদানের তিন লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা থাকার কথা। পাওয়া গিয়েছে মাত্র ২৭৯ টাকা! বাকি টাকা খরচের যথাযথ হিসেব ও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি স্যাক্স-কর্তারা।
স্যাক্সের তরফে এইচআইভি রোধ কর্মসূচিতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে হাজার হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে বহু সংস্থার অর্থ ব্যবহার শংসাপত্রে গরমিল পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছে ন্যাকো। প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে গাড়ির মিটারের হিসেবে এবং টিভি, এফএম রেডিওয় বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রেও কারচুপি ধরা পড়েছে। ন্যাকো-কর্তাদের কথায়, রাজ্যের সরকারি স্কুলে ৮৮ লক্ষ টাকা খরচ করে ‘লাইফ স্কিল এডুকেশন প্রোগ্রাম’ করেছিল স্যাক্স। কিন্তু সেই টাকা কী ভাবে খরচ হল, কর্মসূচিতে ঠিক কী কী হয়েছে কিছুই জানানো হয়নি অডিট সংস্থাকে।
ন্যাকো জানায়, স্যাক্সের তরফে যে-সব ফোন কলের বিল দেওয়া হয়েছে, সেই নম্বর পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তার বেশ কয়েকটি ‘সেক্স লাইন’! যেখানে অশ্লীল কথোপকথন হয়। বিভিন্ন মেলায় প্রচার-অভিযানের জন্য স্টল দিয়েছিল স্যাক্স। কিন্তু সেখানে কী কাজ হয়েছে, তার রিপোর্ট নেই। যে-সময়ের উল্লেখ করে স্যাক্সের কাছে যত ব্লাড ব্যাগ আছে বলে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে, তখন তত ব্যাগ বাস্তবে ছিলই না। এমন হাজারো অসঙ্গতি ধরা পড়েছে।
কী বলছে স্যাক্স?
দুর্নীতি সামনে আসার পরেই স্যাক্স-কর্তারা পারস্পরিক দোষারোপ শুরু করে দিয়েছেন। স্যাক্সের প্রোগ্রাম অফিসার রাকেশকুমার বৎসের বক্তব্য, “লজ্জাজনক ব্যাপার। স্যাক্সের অর্থ বিভাগে সেই সময় কুণাল ঝা ও শক্তি কপূর নামে দু’জন অফিসার ছিলেন। তাঁরাই নাটের গুরু। অভিযোগ পেয়েই তাঁদের বদলি করে দিয়েছি। চার্জশিট দিতে বলেছি।” কুণাল ঝা-র পাল্টা বক্তব্য, “রাকেশবাবু নিজে প্রথম থেকে সব জানতেন। শক্তি কপূরও সব কিছুতে জড়িত ছিলেন। আমি বারবার শক্তিকে শো-কজ করতে বলেছিলাম। কিন্তু রাকেশবাবু সব ফাইল চেপে রাখেন।” আর শক্তি কপূর জানিয়েছেন, তিনি সব কাগজপত্র দেখে যা বলার তদন্ত কমিটিকেই বলবেন।
স্বাস্থ্য দফতরের বক্তব্য কী?
রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের কথায়, “এই দুর্নীতি চলতে পারে না। উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলেছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.