শহরবাসীকে আশ্বস্ত করতে সন্ধ্যা থেকে রাতভর শহর চষে বেড়ালেন শিলিগুড়ি বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। কখনও শিলিগুড়ি হাসপাতালে গিয়ে জখমদের চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজ নিলেন। কারও স্যালাইন, কারও ওষুধ নিয়ে সমস্যার কথা শুনে দাঁড়িয়ে থেকে তার সমাধান করালেন। কখনও ছুটলেন নার্সিংহোমে। আবার যে সব এলাকায় বহুতলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেখানেও গিয়ে বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেন। রাত ১২টায় একটি নার্সিংহোমের সামনে দাঁড়িয়ে রুদ্রনাথবাবু বললেন, “যা হয়েছে তা ভীষণ উদ্বেজনক। অনেক ক্ষতি হয়েছে। শিলিগুড়ি হাসপাতালে যাঁরা ভর্তি হন, তাঁদের চিকিৎসার যাবতীয় টাকা রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে দেওয়া হবে। নার্সিংহোমে যাঁরা ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের আর্থিক অবস্থা দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মানুষ যাতে আতঙ্কিত না-হন, সে জন্যই ঘুরে ঘুরে সকলকে বোঝানোর চেষ্টা করছি।” সন্ধ্যা সওয়া ৬টায় যখন ভূমিকম্প শুরু হয়, তিনি তখন শহরের ভেনাস মোড় লাগোয়া এলাকায়। দিনভর বৃষ্টির জন্য জলে ভেসে যাওয়া এলাকা পরিদর্শনে বেরিয়েছিলেন। মাটিগাড়ার প্লাবিত এলাকা দেখে তাঁর গন্তব্য ছিল ২২ নম্বর ওয়ার্ড। ওই সময়ে ঝাঁকুনিতে চালক গাড়ি থামাতে রাস্তায় নেমে পড়েন বিধায়ক। পুলিশ-পথচারীর ছোটাছুটি শুরু হয়ে যায়। ভূমিকম্প থামতে রুদ্রনাথবাবু সরকারি অফিসার ও দলীয় সতীর্থদের দ্রুত আসরে নামার নির্দেশ দেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের নির্দেশও পৌঁছে যায়। গৌতমবাবু জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি কলকাতা থেকে রওনা হয়েছেন। ঘটনাচক্রে গৌতমবাবু বিকেলের বিমান ধরে ৬টা নাগাদ কলকাতায় পৌঁছন। দুর্যোগের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে তিনি জরুরি বৈঠক পিছিয়ে দিয়ে রাতের ট্রেনেই শিলিগুড়ির রওনা হন। পরিস্থিতি সামলাতে রুদ্রনাথবাবু নিজেই রাতভর শহরের নানা প্রান্তে ঘোরার সিদ্ধান্ত নেন। ঘটনাচক্রে রুদ্রনাথবাবু রাজ্যের বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান। তিনি স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের জরুরি ভিত্তিতে দুর্গতদের চিকিৎসায় যাতে ত্রুটি না-হয়, সে দিকে বাড়তি নজর রাখার নির্দেশ দেন। শহরের বেশ কিছু বহুতলে ফাটল ধরার খবর শুনে রুদ্রনাথবাবু কয়েকটি এলাকায় যান। সোমবার এসজেডিএ-এর ইঞ্জিনিয়ররা শহরের যে সব বহুতল ও বাড়িতে ফাটল ধরেছে তা খতিয়ে দেখবেন। বস্তুত, দুর্যোগ মোকাবিলার বিশেষ ‘টিম’ না-থাকায় যে নানা সমস্যা হচ্ছে তা পুলিশ-প্রশাসনের অফিসারেরা বিধায়ককে জানান। বেশি রাতে শিলিগুড়ি হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে রুদ্রনাথবাবু বললেন, “শিলিগুড়ি ভূমিকম্প-প্রবণ শহর। ১৯৭৫ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্প দেখেছিলাম। তার পরে এ বার বড় মাপের ভূমিকম্প হল। দুর্গতদের পাশে থাকাটাই এখন প্রথম কাজ।” |