পুজোর কয়েকটা দিন এ বারও আলোকের ঝর্ণাধারায় ভাসবে শিলিগুড়ির আশ্রমপাড়া। প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে পাকুড়তলা মোড় থেকে হায়দরপাড়া ঢোকার মুখ পর্যন্ত মোট ১০টি আলোক তোরণে ধুয়ে দেওয়া হবে সমস্ত অন্ধকার। বিচিত্র নকশা। মুগ্ধ করবেই। রাস্তার দু’পাশের বাড়ির সামনে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে আলোকমালা। আলোয় ফুটিয়ে তোলা হবে রবীন্দ্রনাথের সার্ধ জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধার্ঘ্য। আলোক-শ্রদ্ধায় হাজির থাকবেন থাকবেন ঋষি অরবিন্দ, স্বামী বিবেকানন্দ, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র থেকে বেশ কয়েকজন মনীষী। শিলিগুড়ির জাতীয় তরুণ সঙ্ঘের পুজো মানেই চন্দননগরের আলোক শিল্পীদের ঝলমলে আলোকসজ্জা। এ বারই তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। বহু টাকা ব্যয় করে পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। এ বার ক্লাবের পুজো ৪৪ বছরে পড়ল।
প্রথম থেকেই এই ক্লাবের পুজো মানেই চন্দননগরের শিল্পীদের আলোকসজ্জার পাশাপাশি আকর্ষণ হল, কলকাতার কুমোরটুলির ডাকের সাজের প্রতিমা। কলকাতা থেকে আগে ট্রাকে করে আনা হত সেই প্রতিমা। দীর্ঘ পথযাত্রায় প্রতিমায় অল্পবিস্তর ক্ষতিও হত। শিলিগুড়িতে সেই প্রতিমা ট্রাক থেকে নামানোর পরে ফের মাটি দিয়ে, রঙ চড়িয়ে প্রতিমার কৌলিন্য ফেরানের চেষ্টা চলত। এখন সেই সমস্যা আর নেই। কলকাতার কুমোরটুলির শিল্পীরা এখন ছড়িয়ে পড়েছেন উত্তরবঙ্গ জুড়েই। শিলিগুড়ির চম্পাসারি এলাকার দেবীডাঙায় কুমোরটুলির এমনই এক শিল্পী তৈরি করছেন প্রতিমা। সেখান থেকেই এ বার প্রতিমা আসছে। ক্লাবের সম্পাদক আশুতোষ সাহার দাবি, “দেবীডাঙায় প্রতিমা তৈরি হলেও আমাদের ডাকের সাজের প্রতিমার যে সৌন্দর্য সেটা যাতে কোথাও এতটুকু ম্লান না-হয় সেদিকে এ বারও নজর রাখা হচ্ছে।” কেবল আলোকসজ্জাই নয়, মণ্ডপেও অভিনবত্ব থাকছে ওই ক্লাবের পুজো। কাল্পনিক মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। মন্দির, তবে তা বেশ পুরানো। মম্দিরের ওই প্রাচীনত্ব তুলে ধরতে ব্যবহার করা হচ্ছে খড়। দর্শনার্থীদের নজর কাড়বে মণ্ডপে খড়ের কারুকাজ। নানা রঙে রাঙানো হবে খড়ের আঁটি। সেটাই মণ্ডপের দায়ে নানা নকশায় জুড়ে দেওয়া হবে। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, খড়ের ওই অভিনব মণ্ডপ তৈরির জন্য আনা হয়েছে মেদিনীপুরের শিল্পীরে। অগস্ট মাস থেকেই সে কাজে নেমে পড়েছেন শিল্পীরা। আশ্রমপাড়ার ক্লাব প্রাঙ্গনে ওই খড় কেটে রঙ করে শুকানোর পাশাপাশি চলছে মণ্ডপে বসানোর কাজ। পঞ্চমীর আগেই আগে যাতে কাজ শেষ হয়, জোরকদমে চলছে তার প্রস্তুতি। ক্লাব সম্পাদক বলেন, “আগে সপ্তমী থেকে ভিড় হত। ভিড় এড়াতে এখন পঞ্চমী থেকেই লোকে রাস্তায় নামছেন। তার পরে বিভিন্ন শারদ সম্মানের বিচারকেরাও ষষ্ঠী থেকেই মণ্ডপে আসতে শুরু করেন। পঞ্চমীর মধ্যেই মণ্ডপ তৈরি করে ফেলার চেষ্টা করছি।” |