উৎসবের শিলিগুড়ি ডুবে গেল অন্ধকার ও আতঙ্কে
য়েকটা মুহূর্তে উৎসব মুখর শিলিগুড়ি যেন বদলে গেল আতঙ্কনগরীতে!
ভোর থেকে অঝোরে বৃষ্টির পরে বিকেল ৫টা নাগাদ তা থামায় যেন রাস্তায় নেমে পড়েছিল গোটা শহর। ঘণ্টাখানেকের মাথায় তীব্র ভূমিকম্পের পরে বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে আলোর মালায় সেজে ওঠা শহর ডুবে গেল অন্ধকারে। চারদিকে শুরু উলুধ্বনি আর শাঁখের আওয়াজ। কাতারে-কাতারে মানুষ রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে কাঁপছেন।
আতঙ্কে কোথাও বহুতলের সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে গড়িয়ে পড়েছেন বাসিন্দারা। হিলকার্ট রোড, বিধান রোড, সেবক রোড ও লাগোয়া বাজারে কেনাকাটা করতে যাওয়া বাসিন্দারা ছোটাছুটি করতে গিয়ে কেউ পড়লেন নর্দমায়। ফেটে গেল মুখ। কেউ গাড়ির সঙ্গে ধাক্কায় ছিটকে পড়লেন। মহাবীরস্থানের উড়ালপুলের উপরে পর পর তিনটে বাইক উল্টে গেল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, প্রাণভয়ে বাইক ফেলে উড়ালপুল থেকে ছুটে নামতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে হাত ভেঙে গিয়েছে এক যুবকের।
ভূমিকম্পে আহতদের আনা হয়েছে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে।
রবিবার সন্ধ্যায় বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
সেবক রোডের ‘গ্রিন ভ্যালি’ অ্যাপার্টমেন্টের অবস্থায় ভয়ঙ্কর। লিফটের কিছুটা অংশ ভেঙে পড়ে প্রথমেই। চার-পাঁচ তলার আসবাবপত্র উল্টে যায়। প্রাণভয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে অন্তত ১২ জন জখম হন। শহরের মহানন্দা নদী লাগোয়া কলোনি এলাকায় ভেঙে গিয়েছে কয়েকটি পাঁচিল। পাঁচিলের ধারে বসে থাকা অন্তত ১১ জন জখম হয়েছেন। খালপাড়ার যমুনালাল বাজাজ স্ট্রিটেও পাঁচিল ধসে ৬ জন জখম হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৩ জন শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তীব্র ঝাঁকুনির ফলে শহরের সব কটি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমেও শুরু হয় ছোটাছুটি। স্যালাইন নিয়ে ছুটতে গিয়ে গিয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শতাধিক রোগী-রোগিণী। বিপন্ন রোগীকে সিঁড়ি দিয়ে নামানোর চেষ্টা করতে গিয়ে গড়িয়ে পড়েছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শেখর চক্রবর্তীও। তাঁরও কোমরে চোট লেগেছে। শেখরবাবু বললেন, “আমি রোগী দেখছিলাম। হঠাৎ প্রবল ভাবে দুলতে শুরু করল সব কিছু। রোগীকে নিচে নিয়ে যেতে হবে। সব অন্ধকার হয়ে গেল। সিঁড়ি দিয়ে নামানোর সময়ে কারও ধাক্কায় ছিটকে পড়লাম নিচে। যাই হোক রোগীর কিছু হয়নি।”
সেবক রোডের একটি বহুতলে ফাটল। নিজস্ব চিত্র
ফুলেশ্বরী বাজারে একটি টেলরিং শপে বসে আর পাঁচজনের সঙ্গে অঞ্জলি সেনও পুজোর পোশাক তৈরি করছিলেন। তীব্র কাঁপুনিতে দেওয়ালের ইট খসে পড়ে তাঁর মাথায়। তিনিও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শিবমন্দিরের বাসিন্দা মৃগাঙ্ক দে দোতলা থেকে নামার সিঁড়ি খুঁজে না-পেয়ে সোজা নিচে ঝাঁপ দিয়েছেন। তাঁর মুখে, হাতে ও পায়ে চোট লেগেছে। তবে তিনি বালির উপরে পড়ায় আরও বড় আঘাতেক হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। চম্পাসারির বিশ্বজিৎ বিশ্বাসও বাড়ির দোতলা থেকে ঝাঁপ দেন। তিনি বাঁ হাতে মারাত্মক চোট পেয়েছেন।
চারদিকে আর্তনাদ, চিৎকার ও ছোটাছুটি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গোটা শহর রাস্তায়। কোথাও কোনও আলো নেই। গাড়ির হেডলাইট কিংবা ইনভার্টারের আলোই ভরসা। একে বিশ্বকর্মা পুজোর জন্য যানবাহন কম, তার মধ্যে ভূমিকম্পের পরে শঙ্কিত হয়ে যেন বন্ধই হয়ে গিয়েছে গাড়ি চলাচল। ফলে পুজোর বাজার করতে আসা বাসিন্দাদের গভীর রাত পর্যন্ত হিলকার্ট রোড, বিধান রোড, সেবক রোডে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। শিলিগুড়ি থানার পুলিশ গিয়ে বহু এ লাকায় বাসিন্দাদের পৌঁছনোর জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে দেন।
রাত ১০টাতেও শহরের অলিগলি, রাস্তায় শুধুই শঙ্কিত মানুষের ভিড়। সকলের একটাই প্রশ্ন, ‘আবার হবে না তো!”
শিলিগুড়িতে আহত শিশু।
তত ক্ষণে অবশ্য শিলিগুড়ি পুরসভার কাউন্সিলরেরা রাস্তায় নেমে বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। হাসপাতালেও রাত পর্যন্ত বসেছিলেন তৃণমূল নেতারা। শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য তো সন্ধ্যা থেকে রাতভর হাসপাতাল, নার্সিংহোমে ঘুরে আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছেন। গিয়েছেন দুর্গত এলাকায়। বিধায়ক বলেছেন, “অনেকে জখম হয়েছেন। নার্সিং-হাসপাতাল, রেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের সবরকম সাহায্য করা হচ্ছে। যা হয়েছে তা অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়। তবে অহেতুক আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”
পুলিশ-প্রশাসন, বিধায়ক আশ্বাস দিলেও আতঙ্ক কী অত সহজে কাটে! রাত ১২টাতেও নানা অ্যাপার্টমেন্ট, পাড়ায়-পাড়ায় রাস্তায় জটলা। উদ্বিগ্ন মানুষের ভিড়। ঘনঘন থানায়-থানায় ফোনে জানতে চেয়েছেন বাসিন্দারা, ‘আবার হবে না তো?’ তাই মাঝরাতে হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র পারিষদ (পূর্ত) কৃষ্ণ পাল জানান, “যা হয়েছে তাতে ভয় পাওয়ারই কথা। বহু মানুষ জখম হয়েছেন। রাত পর্যন্ত মানুষ ঘরে ঢুকে সাহস পাননি। আমরা সাহস দেওয়ার চেষ্টা করছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.