মাওবাদী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের কয়েক জনকে যে তারা গ্রেফতার করেছে, অবশেষে তা মেনে নিল পড়শি ঝাড়খণ্ডের পুলিশ। যদিও পশ্চিমবঙ্গ, না ঝাড়খণ্ড কোথায় তাদের ধরা হয়েছে, তা নিয়ে বিতর্কের অবসান হয়নি।
ঝাড়খণ্ড পুলিশ জানিয়েছে, পূর্ব সিংভূমের চাকুলিয়ায় জোভি গ্রামের জমিরার জঙ্গলে এক মহিলা-সহ মোট ৬ জনকে তারা গ্রেফতার করেছে। তাদের দাবি, ধৃতদের কাছে পশ্চিমবঙ্গের উচ্চপদস্থ কিছু পুলিশকর্তার ‘মৃত্যুদণ্ডের’ ঘোষণা সংবলিত পোস্টার ও পিস্তল মিলেছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে ‘বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে (ইউএপিএ) মামলা শুরু হয়েছে। ধৃতদের আপাতত রাখা হয়েছে ঘাটশিলা জেলে। অন্য দিকে ঝাড়খণ্ড পুলিশ ছ’জনের কথা বললেও একাধিক মানবাধিকার সংগঠনের অভিযোগ, ধৃতের সংখ্যা মোট ৮, এবং তাদের ধরা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গেই বেলপাহাড়ির পাথরচাকরিতে। |
জামশেদপুরের এসএসপি অফিসে ধৃত পাঁচ সন্দেহভাজন মাওবাদী। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী |
যমুনা সিংহ ওরফে জয়ন্তী ওরফে উলা নামে এক ‘মাওবাদী নেত্রী’কে গ্রেফতারের কথা পুলিশ শনিবার স্বীকার করেছিল। রবিবার আরও পাঁচ জনের গ্রেফতারের কথা মেনে নেওয়া হয়। এঁদের মধ্যে রয়েছেন একদা পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদী সংগঠনের মুখপাত্র তথা রাজ্যের প্রথম ইউএপিএ-বন্দি গৌর চক্রবর্তীর ছেলে সোমপ্রকাশ চক্রবর্তী, যিনি আদতে নদিয়ার বাসিন্দা। আছেন উত্তর ২৪ পরগনার হাজিপুরের নিতাই দাস, কাটোয়ার নিত্যানন্দ ঠাকুর, জয়ন্তীর স্বামী পাথরচাকরি গ্রামের সূর্যদেব সিংহ এবং কলকাতার একটি বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সাংবাদিক প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী। পূর্ব সিংভূমের এসএসপি অখিলেশকুমার ঝা বলেন, “শুক্রবার যৌথ বাহিনীর অভিযানের সময়ে কয়েক জনকে জমিরার জঙ্গলে দেখা গিয়েছিল। দীর্ঘক্ষণ জেরার পরে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে।”
কিন্তু এঁরা ছাড়া পাথরচাকরি গ্রামের নিরন সিংহ ও সহদেব সিংহ নামে আরও দু’জনকে পুলিশ ধরেছে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলির অভিযোগ। ঝাড়খণ্ড পুলিশ তা মানতে চায়নি। উপরন্তু ঝাড়খণ্ড পুলিশের দাবি, ধৃত ছ’জনই (এমনকী ওই সাংবাদিকও) মাওবাদীদের প্রকাশ্য সংগঠনের সদস্য। পূর্ব সিংভূমের এসপি (গ্রামীণ) অজয় লিন্ডার কথায়, “ওদের কাছে পাওয়া পোস্টারে পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাক্তন পুলিশ সুপার মনোজ বর্মা ও বর্তমান সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠীকে মৃত্যুদণ্ডের কথা বলা হয়েছে।” এ ছাড়া ২০০৭-এর মার্চে ঘাটশিলায় জেএমএম সাংসদ সুনীল মাহাতোকে খুনের সময়ে ঘটনাস্থলে একে-৪৭ রাইফেল নিয়ে জয়ন্তী স্বয়ং হাজির ছিলেন বলে পুলিশের দাবি।
এপিডিআরের মতো মানবাধিকার সংগঠনগুলির অবশ্য অভিযোগ, যৌথ বাহিনীর ‘অত্যাচার’ সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে গিয়েই পাথরচাকরিতে ওঁরা পুলিশের হাতে পড়েছেন। তাঁদের উপরে ‘মাওবাদী’র মিথ্যে তকমা চাপানো হচ্ছে এই অভিযোগ তুলে অবিলম্বে সকলের মুক্তি দাবি করেছে সংগঠনগুলি। এ দিকে রবিবারই পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রামের সাপধরা ও সদর ব্লকের বাগঘরায় মাওবাদী ও জনগণের কমিটির দু’জন গ্রেফতার হয়েছেন। পুলিশের দাবি, সাপধরায় ধৃত স্বপন হাঁসদা মাওবাদী স্কোয়াড-সদস্য এবং বাগঘরায় ধৃত দিলীপ হাঁসদা জনগণের কমিটির স্থানীয় অন্যতম প্রধান নেতা। দু’জনকে আজ, সোমবার আদালতে হাজির করা হবে। পাশাপাশি এ দিন ঝাড়খণ্ডের গঢ়বা জেলার কাটরায় রুকসানা খাতুন ওরফে সোনি কুমারী ওরফে গুড়িয়া নামে সন্দেহভাজন এক মাও-নেত্রীকে প্রচুর বিস্ফোরক সমেত ধরা হয়েছে বলে সে রাজ্যের পুলিশের দাবি। |