প্রকল্প ছাড়পত্র পেয়েছে ২০০৬-এ। রাস্তার জন্য ঠিকাদার সংস্থাও অনেক দিন আগেই ঠিক করে ফেলেছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই)। কিন্তু গত দেড় বছরে এক চিলতে জমিও হাতে পায়নি তারা। ফলে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত থেকে উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলা পর্যন্ত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক চার লেন করার কাজ শুরুই করা যায়নি।
জমি হাতে না পাওয়ায় কেবল কাজই পিছিয়ে যাচ্ছে তা নয়, প্রকল্পের খরচও উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। এর জন্য জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে ভবিষ্যতে গুনাগার দিতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ওই সংস্থারই আধিকারিকেরা। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক আধিকারিক বলেন, “প্রায় ৪২০ কিলোমিটার রাস্তা চার লেন করার জন্য ২০১০-এর প্রথম দিকে পাঁচটি ঠিকাদার সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু জমি না পাওয়ায় কাজ শুরুর অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না।” ওই আধিকারিক জানান, কাজ শেষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২০১৪ সাল। কিন্তু ইতিমধ্যে দেড় বছর নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যে হেতু বরাত দেওয়ার পরেও ঠিকাদার সংস্থা কাজ শুরু করতে পারছে না, তাই ওরা চাইলে এনএইচএআই তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য এবং রাজ্য সরকারকেও তার একটা অংশ দিতে হবে। কারণ, প্রকল্প শেষ করার দায়িত্ব যেমন এনএইচএআই-এর, তেমনই রাজ্যেরও। এই পরিস্থিতিতে আজ, সোমবার পূর্তসচিব অজিতরঞ্জন বর্ধনের সঙ্গে মহাকরণে বৈঠক করবেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন) রাজীব যাদব। রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষের সঙ্গেও তাঁর দেখা করার কথা। ২০১০-এর গোড়া থেকে জমি চেয়ে বাম সরকারকে ছ’টি চিঠি দিয়েছিল এনএইচএআই। কিন্তু তখন তৃণমূল কংগ্রেসের আন্দোলনের জেরে এক ছটাকও জমি অধিগ্রহণ করতে পারেনি রাজ্য সরকার। এনএইচএআই-এর বক্তব্য ছিল, নির্দিষ্ট সময়ে জাতীয় সড়ক চওড়া করার কাজ শেষ করতে না পারলে, যে রাস্তা এখন রয়েছে তাকেও বাঁচানো যাবে না। খানাখন্দ হতেই থাকবে, রাস্তা ভাঙতেই থাকবে। ওই কেন্দ্রীয় সংস্থার ম্যানেজার (টেকনিক্যাল) সুব্রত নাগের বক্তব্য, “প্রতি দিন ১৫০০০ গাড়ির চাপ সহ্য করতে পারবে এমন ভাবনা নিয়ে ওই রাস্তা হয়েছিল। এখন সেখান দিয়ে প্রতি দিন ২৩০০০ গাড়ি চলে। ফলে রাস্তার অবস্থা দিনদিন খারাপ হচ্ছে। এখনই যদি নতুন লেন তৈরি করা না যায় তা হলে সারাই খরচও বাড়তে থাকবে।”
শুধু খরচ বাড়ার প্রশ্নই নয়, বিশেষজ্ঞদের আরও আশঙ্কা, চাপ পড়তে পড়তে একটা সময় অচিরেই আসবে যখন রাস্তা আর সারানোর উপযুক্ত থাকবে না। সেই কারণে রাজ্যে নতুন সরকার আসার পরে তাদের কাছেও একই আর্জি জানিয়েছে এনএইচএআই। মহাকরণ সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সড়ক মন্ত্রকের সচিব এ কে উপাধ্যায় এই মাসের গোড়ায় মুখ্যসচিবকে একটি চিঠি লিখেছেন। তাতে জমি অধিগ্রহণ সমস্যার দ্রুত সমাধান করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এনএইচএআই কর্তৃপক্ষ রাজ্যকে জানিয়েছে, রাস্তা চওড়ার জন্য ২৩৮০ একর জমি চাই। এর মধ্যে উত্তর দিনাজপুরে ৬৬৪ একর, মুর্শিদাবাদে ৬৩২, মালদহে ৪২৭, নদিয়ায় ৫৫৮ এবং উত্তর ২৪ পরগনায় ৯৯ একরের মতো জমি লাগবে। রাজ্য ভূমি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “যে জেলায় জমির দরকার সব চেয়ে কম, সেখানেই জমি বিরোধী আন্দোলন হয়েছিল সব চেয়ে বেশি। তার জেরে গোটা প্রকল্পেই জমি অধিগ্রহণের কাজ আটকে যায়।” ওই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যিনি সেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক, বর্তমানে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “আমরা বাম সরকারের কাছে প্রকল্পের খুঁটিনাটি (অ্যাপ্রোচ লেটার) জানতে চেয়েছিলাম। ওরা তা দেয়নি। তাই আন্দোলন দানা বেঁধেছিল।” কিন্তু এখন তো এনএইচএআই আপনাদের সরকারের কাছে জমি চাইছে? খাদ্যমন্ত্রীর জবাব, “তখন দলের নির্দেশে আন্দোলন হয়েছিল। এখন কী হবে, তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বলবেন।”
মহাকরণ সূত্রের খবর, রাজ্যের জমি-নীতি ঘোষণার জন্যই জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সব কাজ থমকে ছিল। এখন মোটামুটি ভাবে তার রূপরেখা চূড়ান্ত হয়েছে। পুজোর পরে এ নিয়ে সর্বদল বৈঠক হলেও তাতে খুব বেশি অদল-বদল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু তার পরেও খুব তাড়াতাড়ি জমি অধিগ্রহণে হাত দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ভূমি দফতরেরই একাধিক অফিসার। তাঁদের বক্তব্য, জমির বদলে চাকরি দেওয়ার কথা জমি-নীতিতে বলা হয়েছে। কিন্তু নতুন শ্রম-নীতি এখনও তৈরি হয়নি। তাই জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করার ক্ষেত্রে সংশয় এখনও যাচ্ছে না। |