পুজোর মুখে কেন ভবানীপুরে উপনির্বাচন ‘চাপিয়ে দেওয়া’ হল, তা নিয়ে এ বার প্রশ্ন তুলল সিপিএম। একটু ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলে বসিরহাট উত্তর ও ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের সঙ্গেই পুজোর পরে উপনির্বাচন করা যেত বলে তাদের বক্তব্য। সে ক্ষেত্রে সরকারের খরচ বাঁচত, পুজোর মুখে মানুষের উপরেও নির্বাচন চাপত না। সিপিএমের অভিযোগের আঙুল তৃণমূলের ‘অস্থির চিন্তা’র দিকেই। প্রসঙ্গত, ভবানীপুরের তৃণমূল প্রার্থী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবারই ওই কেন্দ্রে প্রচারে গিয়ে তিন মাসের মধ্যে মানুষকে ফের ভোটের সম্মুখীন হতে হওয়ার জন্য ‘দুঃখপ্রকাশ’ করে নিয়েছেন।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা ভবানীপুরে উপনির্বাচন দেখভালের মূল ভারপ্রাপ্ত রবীন দেব রবিবার বলেন, “দু’বছরের মধ্যে ভবানীপুর এলাকার মানুষ তিন বার ভোট দিচ্ছেন। আলিপুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন হয়েছিল ২০০৯ সালের ৭ নভেম্বর। বর্তমান ভবানীপুরের অনেকগুলি ওয়ার্ড তখন আলিপুরে ছিল। তার পরে এ বছরের ২৭ এপ্রিল তাঁরা বিধানসভার ভোট দিয়েছেন। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর বিধানসভা উপনির্বাচনে ভোট দেবেন। এর পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংসদ পদে ইস্তফা দিলে দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ওই এলাকার মানুষকে আবার ভোট দিতে হবে!” আলিপুরে বিধানসভা উপনির্বাচন হয়েছিল তৎকালীন বিধায়ক তাপস পাল তৃণমূলের সাংসদ হয়ে যাওয়ায়। আবার এখন ভবানীপুরে বিধানসভা উপনির্বাচন হচ্ছে সুব্রত বক্সী মুখ্যমন্ত্রী মমতার জন্য ওই কেন্দ্রের বিধায়ক-পদ ছেড়ে দেওয়ায়। সিপিএমের মতে, তৃণমূল নেতৃত্বের ‘অস্থির’ সিদ্ধান্তের জন্যই বারেবারে একই এলাকায় ভোট করতে হচ্ছে। তৃণমূল শিবির থেকে পাল্টা বলা হচ্ছে, ভবানীপুরে হার ‘অবধারিত’ বুঝেই সিপিএম এখন পুজোর মুখে ভোটকে ‘অজুহাত’ খাড়া করতে চাইছে! বসিরহাট উত্তর কেন্দ্রে অবশ্য উপনির্বাচন হচ্ছে সিপিএমের বিধায়ক মোস্তাফা বিন কাশেমের অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণে।
প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে এ দিন রবীনবাবুর পাশে বসেই ভবানীপুরের সিপিএম প্রার্থী নন্দিনী মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “লাগামছাড়া দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য এমনিতেই মানুষের জীবন দুর্বিষহ। তার উপরে সামনে শারদোৎসব। অনেকের রুটি-রুজির প্রশ্ন এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই অবস্থায় নির্বাচন লড়তে আমরা বাধ্য হয়েছি।” সাংবিধানিক নিয়মে, মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে রাজ্যের কোনও কেন্দ্র থেকে বিধানসভায় নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে ২০ নভেম্বরের মধ্যে। ফলে, হাতে আরও সময় ছিল বলেই রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের বক্তব্য। ভবানীপুরে শাসক দল নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙছে বলেও সিপিএমের অভিযোগ। কেন্দ্রের মধ্যে রাজ্যের মন্ত্রীরা সরকারি গাড়িতে কী ভাবে যাতায়াত করছেন, তা নিয়ে আজ, সোমবার নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাতে যাওয়ার কথা রবীনবাবুদের।
নন্দিনীকে সঙ্গে নিয়ে কাল, মঙ্গলবার চেতলা পার্ক থেকে নর্দান পার্ক পর্যন্ত পদযাত্রায় থাকার কথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। পরের দিন বুধবার হাজরা মোড়ে জনসভায় থাকবেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। প্রচারের শেষ দিন ২৩ তারিখও পদযাত্রায় থাকবেন বিমানবাবু। প্রসঙ্গত, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী হলে একটি আলোচনাসভায় এ দিনই বিমানবাবু বলেছেন, “কোনও শাসক অত্যাচারী শাসন চালিয়ে যাবে আর বামপন্থীরা আঙুল চুষবে, তা হয় না! দেশই হোক বা কোনও রাজ্য, বামপন্থীরা এই শোষণের বিরুদ্ধে সফল লড়াই পরিচালিত করবে। আজ হোক বা কাল হোক!” |